ছবি:ফাইল
কৃষ্ণকুমার দাস: খিদিরপুর, ওয়াটগঞ্জ, তপসিয়া, রাজাবাজার, চেতলা লকগেটের মতো বেশ কিছু এলাকায় বহু মানুষের করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও প্রশাসনকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখানোয় চরম উদ্বিগ্ন কলকাতার মেয়র পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। লকডাউনের মধ্যেও শহরের এই এলাকাগুলি নিজে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সমস্ত বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলেও আক্ষেপ করেছেন তিনি। আগামী দিনে শহরের একশ্রেণির মানুষের আচরণের জেরে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির আশঙ্কা ফুটে উঠেছে ফিরহাদের গলাতেও। কিছুটা ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে মেয়রের সরল স্বীকারোক্তি, “কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীনের জন্য যদি শহরে মহামারির হয় তবে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকলে তা তোলার লোক পাওয়া দুষ্কর হবে। এটা তাদের বুঝতে হবে।”
টানা সাতদিন খিদিরপুর থেকে পার্কসার্কাস, চেতলা লকগেটের বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে করোনা নিয়ে সতর্কতা ও সাবধানতার প্রচার করেছেন মেয়র নিজে। কিন্তু তিনি এলাকা থেকে চলে গেলেই যে ডাক্তারদের বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফের জটলা শুরু করে লকডাউন ভেঙে ফেলা হচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “বহু মানুষ পাড়ায়, বস্তির গলিতে, চায়ের দোকানে দলবেঁধে বসে জটলা করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পাশাপাশি, গাদাগাদি করে বসে থাকা, ঘরে থাকার মধ্যে যেমন সাত বছরের শিশু আছে, তেমনই সত্তুর বছরের বৃদ্ধাও আছেন। সামাজিক দূরত্ব বা স্যানিটাইজ দূরের কথা, মুখে মাস্ক দেওয়ার মতো নূন্যতম সাবধানতাও অধিকাংশ মানুষ নিচ্ছেন না। অথচ রাজ্য সরকার ও পুরসভা প্রতিটি এলাকায় প্রচুর পরিমানে মাস্ক বিলি করছে। করোনায় কী কী সতর্কতা নিতে হবে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হিন্দি, উর্দু ও বাংলায় প্রতিটি ঘরেই লিফলেট পৌছে দেওয়া হয়েছে। এমনকী পুলিশের গাড়ি থেকেও সাবধানবার্তা প্রচার হচ্ছে। কিন্তু খুবই দুঃখের, ওই সমস্ত এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই করোনার ভয়ংকর-প্রভাব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।” উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মেয়র নিজে এবং পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এই এলাকাগুলিতে পাঠিয়ে করোনা-সতর্কতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নাখোদা মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে অধিকাংশ মসজিদে জমায়েত গড়ে নমাজ পড়া বন্ধ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফিরহাদ।
রোম, মাদ্রিদ, প্যারিসের মেয়রদের সঙ্গে দু’দিন আগে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা সামাল দেওয়া নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন কলকাতার মেয়র। সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবের জেরে যে কী ভয়ংকর সর্বনাশ নেমে এসেছে তা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন মাদ্রিদের মেয়র। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ফিরহাদ বলেন, “মাদ্রিদ বা রোমের তুলনায় কলকাতার জনঘনত্ব অনেক গুন বেশি। ওদের মাত্র কয়েক লাখ, আর আমাদের এক কোটির উপর বাসিন্দা, প্রতিদিন বাইরে থেকে শহরে আসেন আরও এক কোটি। তাই যদি করোনা প্রতিরোধের সচেতনতার অভাবে একবার কলকাতায় সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়, তবে ভয়ংকর সর্বনাশ নেমে আসবে। তখন আক্রান্ত সবাইকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই খুবই কঠিন হবে।” তবে করোনা মোকাবিলায় কঠিন পরিস্থিতিতেও অনেক বস্তিবাসীর কিছু করার নেই বলেও মন্তব্য মেয়রের। কারণ, এক একটা ছোট ঘরে ১৫ থেকে ১৭ জন গরিব মানুষকে থাকতে হচ্ছে। লকডাউন নিয়ম বাইরে বেরিয়ে কেউ কেউ মানলেও ঘরে ঢুকে সেই গাদাগাদি করেই থাকতে বাধ্য। তাই করোনা সংক্রমণ স্টেজ-২ তে থেমে না গেলে আগামি দিন যে কী হবে তা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় কলকাতার মহানাগরিক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.