ফাইল ছবি
সুকুমার সরকার, ঢাকা: অফিস ও আদালত খুলে দেওয়ার পর বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এই অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন পদ্ধতিতে ফের লকডাউনের রাস্তায় হাঁটছে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। সংক্রমণ ঠেকাতে রেড জোন, ইয়োলো জোন ও গ্রিন জোন করার পরিকল্পনা করেছে। রবিবার থেকে রাজধানী ঢাকায় এই লকডাউন শুরু হওয়ার কথা। আর আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানে লকডাউন কার্যকর হবে এলাকাভিত্তিক। স্বাস্থ্য বিভাগ এই ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৫ জন মারা গিয়েছে। এর ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪৬ জন। শনিবার রাজধানী ঢাকার মহাখালি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এই তথ্য জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এই সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৬৩৫ জনের শরীরে করোনা জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এর ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৩ হাজার ২৬ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ঢাকার যেসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। সেসব এলাকা আজ কিংবা কালকের মধ্যেই লকডাউন করা হবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভা ও একটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন। রেড জোন ঘোষণার ফলে রবিবার বিকেল ৪টা থেকে ২১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডকে। এদিকে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লক্ষ ছাড়িয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকনমিস্ট (The Economist)। শুক্রবার আইসিডিডিআরবির বরাত দিয়ে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে এই পত্রিকা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারিভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তানেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি। ‘বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে ইকনমিস্ট বলছে, কম পরীক্ষার অর্থই হচ্ছে প্রকৃত চিত্র আরও বেশি খারাপ হতে পারে। ইকনমিস্ট বলছে, আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তা জন ক্লেমেনসের অনুমান, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ইতিমধ্যে সাড়ে সাত লক্ষ ছাড়িয়ে থাকতে পারে। যদিও সরকারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯১ জন। যাদের প্রায় অর্ধেকই ঢাকার।
তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমতের ভিত্তিতে ঢাকার কিছু এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হবে। এরপর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে সেসব এলাকা একই পদ্ধতিতে লকডাউন করা হবে। এবারের লকডাউনে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। লকডাউন করা ‘রেড জোন’ এর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কাউকেই ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া আক্রান্তদের মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে ওইসব এলাকার ম্যাপ তৈরি করছেন। রাজধানীতে এই কাজ প্রায় শেষ। দেশের অন্যান্য এলাকায় এখনও চিহ্নিত করার কাজ চলছে। যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা যাচ্ছে সে এলাকাকে ‘রেড জোন’ বলে ঘোষণা দিয়ে ওই এলাকা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হবে। একই পদ্ধতিতে ইয়োলো ও গ্রিন জোন চিহ্নিত করা হবে। এরপর প্রয়োজনে ইয়োলো জোনকেও লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়োলো জোনে কেউ খুব জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, যেসব এলাকায় রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে সেসব এলাকাকে লকডাউন করা হবে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একই প্রক্রিয়ায় সারা দেশে এই লকডাউন কার্যকর করা হবে। সারা দেশের চিত্রটা তৈরি করতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। তাই বৃহস্পতিবার নাগাদ সারা দেশের ঘোষণা আসবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.