ফাইল ফটো
দীপঙ্কর মণ্ডল: ক্যালেন্ডারের পাতায় গ্রীষ্মকাল আসতেই গোটা দেশে চড়চড়িয়ে চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহেই উত্তাপ বাড়ছে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের নানা স্থানে। আর সেই দাবদাহে হাঁসফাঁস করতে করতেই আশার স্বপ্ন দেখছেন ভারতবাসী। আমজনতার বিশ্বাস, এই উপমহাদেশের গ্রীষ্ম ঋতুর প্রবল তাপে জানেপ্রাণে নিকেশ হবে কোভিড-১৯ (Covid-19)। আশাবাদী ভারতীয়দের সেই সুখস্বপ্নে জল ঢেলে দিচ্ছেন গবেষকরা। ‘গ্রীষ্মবিলাসী’ ভারতবাসীকে হতাশ করে তাঁদের সাফ কথা, ‘গ্রীষ্মের দাবদাহে কোভিড-১৯ (Covid-19) ভাইরাস নিকেশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এই মারণ ভাইরাসের মৃত্যু সম্ভব ন্যূনতম ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমানে।’
লকডাউনের গৃহবন্দি দুনিয়া এখন মগ্ন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের ভার্চুয়াল জগতে। দিনরাত সেখানে চলছে ছবি ও বার্তার আদান-প্রদান, আলাপ আলোচনা, তথ্য বিনিময়। এই নিখিল বিশ্বজোড়া আড্ডার রকে স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে জোরালো আলোচনা করোনা ধ্বংসের সম্ভাবনা নিয়ে। সেই আলোচনার সূত্র ধরেই দুই জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে কোভিডের মৃত্যু নিয়ে নানা মনগড়া তত্ত্ব ছড়িয়েছে। সেসব তত্ত্বে কেউ কেউ দাবি করে বসেছেন, ‘ভারতবর্ষে এই সময় তীব্র গরম পড়ে। কোথাও কোথাও ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এই গরমে করোনা ভাইরাস বাঁচতে পারবে না।’ এই দাবিকে জোরালো করতে নিজের মতো করে বৈজ্ঞানিক ভাষ্যও জুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু, সেসব ‘জ্ঞানগর্ভ’ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে পাত্তা দিচ্ছেন না ভাইরো গবেষকরা। তাঁরা বলছেন, ‘এই গরমে কোভিডের মৃত্যু হয় না। অন্তত ৯২ থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছলে, তবেই শেষ হতে পারে এই মারণ ভাইরাস।’ ফ্রান্সের এইক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। গবেষণাপত্রটি কয়েকদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক ঘণ্টা ধরে করোনা ভাইরাসের নমুনা রাখার পরও দেখা গিয়েছে, তা নিজেকে সংখ্যায় বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে। তবে ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৫ মিনিট রাখার পর এই ভাইরাসের মৃত্যু ঘটে।
জীবাণু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় জল ফুটবে টগবগিয়ে, একমাত্র তাতেই মৃত্যুর ঠিকানা লেখা কোভিড-১৯ ভাইরাসের। তার আগে ভয়ংকর এই মারণ ভাইরাসকে খতম করার কোনও উপায় নেই। আর তাই শাকসবজি থেকে ফলমূল, বাজারের সবই ফুটন্ত গরম জল ঢেলে ধুয়ে নিতে বলছেন চিকিৎসকরা। নিষেধ করছেন কাঁচা দুধ বা কাঁচা সবজি খেতে। এমনকী বিধিনিষেধ চাপিয়েছেন ফ্রিজে রাখা বাসি খাবারের উপরও। ব্যবহৃত জামাকাপড়ের ক্ষেত্রে সেগুলিকে গরম জলে ধুয়ে, দিনভর কড়া রোদে শুকানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখানে আবার প্রশ্ন উঠেছে, শহুরে এলাকায় অনেকের বাড়িতেই ছাদ নেই। এক্ষেত্রে কী হবে? বিশেষজ্ঞদের নিদান, বেশ কয়েক ঘণ্টা কড়া রোদে সরাসরি শুকানো না গেলে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করে নিতে পারেন। তাতেও কিছুটা কাজ হতে পারে।
রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, মাংস, ডিম বা দুধের মতো প্রাণীজ প্রোটিনকে করোনা সংক্রমণের ভয়ে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন অবশ্যই দরকার। এজন্য উচ্চতাপে সেদ্ধ করে নিতে হবে প্রোটিন জাতীয় এই সকল খাদ্যবস্তু। বিজ্ঞানীদের মতে, ভাল করে সেদ্ধ করা খাদ্যবস্তু বা যে কোনও সামগ্রীতে শুধু করোনা ভাইরাস নয়, কোনও জীবাণুই বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে না। গবেষকদের কথায়, গরমকালে করোনা ভাইরাস মরে যাবে, একথা পুরোপুরি বুজরুকি! এসবে বিশ্বাস না করে বরং সবার উচিত বাইরে নিয়মমতো মাস্ক ব্যবহার করা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাঝেমধ্যেই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.