দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা এশিয়ার বৃহত্তম চর্মশিল্পে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে মুখ থুবড়ে পড়বে কলকাতার বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে। আশঙ্কায় দিন গুনছেন চর্মশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
চামড়া থেকে চর্মজাত দ্রব্য তৈরি করতে যে সব কাঁচামালের প্রয়োজন, তার সিংহভাগই আসে চিন থেকে। গত বছরের শেষদিক থেকে সেখানে নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাড়তে থাকায় চিনের সঙ্গে এখন সমস্ত আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ। ফলে উৎপাদনও কার্যত বন্ধ। বেড়েছে সংকট। সিঁদুরে মেঘ দেখছে চর্মশিল্পের বাজার। ফলে একদিকে কাঁচামালের অভাব, অন্যদিকে বিশ্বের যে সমস্ত বাজারে বানতলা থেকে চামড়ার জিনিসপত্র সরবরাহ করা হতো, সেই সমস্ত দেশেও চর্মজাতা দ্রব্যের চাহিদা না থাকায় তীব্র সংকটের মুখে বানতলা চর্মনগরী। বানতলা চর্মনগরীর মালিক সংগঠনের কর্তারা জানাচ্ছেন, যদি এভাবে মাস খানেক চলতে থাকে, তবে ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ থেকে ছ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বানতলায় একটি বড় কারখানা আছে আনসার পারভেজের। সেখানে বড় বড় ড্রামে রাসায়নিকের সাহায্যে চামড়া শোধনের পাশাপাশি চামড়ায় রঙ করার কাজ চলছে এই মুহূর্তে। শাহিদ জানালেন, “আর ক’দিন কারখানা চালাব, বুঝতে পারছি না। কাঁচা চামড়া দেশে পাওয়া গেলেও চামড়া শোধনের জন্য মূলত সোডিয়াম সালফাইড বা চাইনিজ সোডা লাগে। সেটা চিন থেকে আসে। করোনার জেরে আপাতত সেই মাল আমরা আমদানি করতে পারছি না। ফলে সপ্তাহখানেক পরে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না আমাদের।” আরেক ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ খান বলেন, “ইটালি আমাদের সবথেকে বড় ক্রেতা। তাদের ওখানে করোনার প্রভাবে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারা এখন শপিং মল তো দূরের কথা, নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান-বাজার বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ওষুধ আর রেশন কিনতে কেবল বাইরে বেরচ্ছেন। আগামী তিন মাস আমাদের রপ্তানি বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।” বানতলা ট্যানারি সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘এখন যে পরিমাণ ব্যবসা হচ্ছে, তার থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসা কমে যাবে।”
বাম আমলে তৈরি হয়েছিল বানতলা চর্মনগরী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর প্রশস্ত করা হয়েছে চর্মনগরীর ব্যবসার পরিধি। ট্যানারি শিল্পকে আরও বেশি প্রশস্ত করাই ছিল রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এশিয়ার বৃহত্তম চর্মনগরী বানতলায় এই মূহুর্তে ৬০০’র বেশি ছোট-বড় কারখানায়। প্রতিদিন এক লক্ষের কাছাকাছি শ্রমিক চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি কাজ করেন। বানতলায় সেই সমস্ত দ্রব্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দেয়। বানতলার ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডসের বিপুল চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও জাপান, জার্মান, ইটালি, স্পেন, ফ্রান্সে রপ্তানি করা হয় বানতলার দ্রব্য। ভারতের কানপুর ও বানতলা শিল্পনগরীর ওপর ভরসা করে ফি বছর মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আসে এই চর্মশিল্প থেকে। সেই শিল্পেই এখন অশনি সংকেত। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে সেই শিল্প সম্ভাবনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.