সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি বরাবরই বেপরোয়া, নিজের ভাবনার বাইরে কোনও কিছু গুরুত্ব দিতে নারাজ। ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো বোধহয় মারণ জীবাণু করোনা মোকাবিলার রাস্তাটাও সবচেয়ে ভাল জানেন। নইলে কি আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার আপাতত নিষিদ্ধ করার পরও তিনি বলতে পারেন, ব্রাজিল ওই ওষুধ ব্যবহার করবে? নির্দেশিকায় কোনও বদল আনবে না দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক? ব্রাজিলের এই ভূমিকা দেখে স্তম্ভিত বিশ্বের তাবড় চিকিৎসকরাও।
করোনা মোকাবিলায় প্রথমে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছিল WHO. তা নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে কম চোরা লড়াই হয়নি। এই ওষুধ সরবরাহ নিয়েই ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক অম্ল-মধুর হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ‘বন্ধু’ ট্রাম্পকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দিয়ে সাহায্য করায় মানভঞ্জন হয়েছে। সে যাই হোক, সম্প্রতি এই ওষুধের বিপদ টের পেয়েছেন গবেষকরা। বলা হচ্ছে, ওষুধটি যত না কার্যকর, তার চেয়ে বেশি ঝুঁকির। শুক্রবার এক মেডিক্যাল জার্নালে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সোমবারই WHO জানিয়েছে, আপাতত করোনার চিকিৎসায় বন্ধ থাকবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার।
এই নিষেধাজ্ঞা আর সকলে মেনে চললেও বেঁকে বসেছে ব্রাজিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ”আমরা এ নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত বা গাইডলাইন বদলাচ্ছি না। যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।” সূত্রের খবর, এ নিয়ে ব্রাজিল প্রশাসনের অন্দরমহলে ইতিমধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে। তা প্রকটও হচ্ছে শোনা যাচ্ছে, দেশের সদ্য পদত্যাগী স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেলসন টেককে নাকি প্রেসিডেন্ট বলসোনারো চাপ দিয়েছিলেন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার জারি রাখতে। তিনি তাতে রাজি না হয়ে পদত্যাগ করেছেন। সোমবার, ঠিক এরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে ওষুধ ব্যবহারে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে না, এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
করোনা সংক্রমণ পরিসংখ্যানে বিশ্বে আপাতত দ্বিতীয় স্থানেই ব্রাজিল। সাম্প্রতিককালে সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার এতটাই বেশি হয়ে গিয়েছে যে রাশিয়াকে টপকে আমেরিকার ঠিক পরেই স্থান করে নিয়েছে ব্রাজিল। এখনও পর্যন্ত ২৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে আমাজনের দেশে। যে করোনা ভাইরাসকে প্রাথমিকভাবে ‘লিটল ফ্লু’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো, সেই রোগই তাঁর দেশে ক্রমশই জোরাল কামড় বসাচ্ছে। তা সত্ত্বেও বলসোনারো WHO’র পরামর্শ মানতে নারাজ। তাঁর এহেন কাণ্ডকারখানা দেখে অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনার সঙ্গে তুলনা করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.