ছবি- এক্স হ্যান্ডেল
শম্পালী মৌলিক: সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘সূর্য’ (Surya) ছবিটি। বিরাট প্রচার পায়নি, উপরন্তু মৌলিক গল্প নয়। মালয়ালম ছবি ‘চার্লি’ এবং তামিল ছবি ‘মারা’ থেকে অনুপ্রাণিত ‘সূর্য’। পরিচালনায় শিলাদিত্য মৌলিক। প্রেক্ষাগৃহে যখন ‘কল্কি’ বা ‘ব্যাড নিউজ’ রয়েছে, বাংলা ছবিটিকে লড়াই করতে হচ্ছে। এতকিছুর পরেও বলব ‘সূর্য’ প্রতিকূলতার মেঘে ঢাকা পড়েনি, আলো ছড়াচ্ছে। রিমেক করলেও নিজস্বতা হারাননি পরিচালক। এই বাংলার প্রেক্ষাপটে এনে নিজের মতো করে নিয়েছেন দক্ষিণী ছবির কাহিনিকে। অ্যাকশন থাকলেও, এ ছবি প্রধানত প্রেমের গল্প বলে। এবং অবাস্তব প্রেমের গল্প নয়।
নামভূমিকায় বিক্রম চট্টোপাধ্যায় দেখালেন ‘পারিয়া’-র মতো অ্যাকশন এক্সপ্রেস চালানোর পর ‘সূর্য’র মতো
রোমান্সের ঝুল বারান্দাতেও তিনি মানানসই। যেখানে বসে অপেক্ষা করা যায়। চাই ধৈর্য, চাই তীব্র ইচ্ছে,
তবে তো ভালোবাসা ধরা দেবে! অ্যাডাপ্টেশন হলেও এমন নরম প্রেমের ছবি দেখতে ভালো লাগে।
ইদানীংকালে আমার হল-এ গিয়ে এমনও হয়েছে, প্রথমার্ধের পরে ছবিটা নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, শুধু কাজের খাতিরে পুরোটা দেখেছি। ‘সূর্য’ শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করে। কারণ, অধরা, অদেখা প্রেম ছোঁয়ার জার্নি! ছবির নায়িকা উমা (মধুমিতা সরকার) একজন ফোটোগ্রাফার। চাকরি থেকে বিতাড়িত হওয়ার দিনই, তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসে। ছেলেটি তার পুরনো বন্ধু (আত্মদীপ ঘোষ)। ফলে তাকে ম্যানেজ করে, বাড়ি ছাড়ে মেয়েটি। এক পাহাড়ি অঞ্চলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। লরির চালক, চাওয়ালা, শকটযান
চালক, ট্যাক্সি ড্রাইভার– এমন সব মানুষের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে সে একটু একটু করে ‘সূর্য’ ছেলেটির পরিচয় পায়। ঘটনাক্রমে নতুন কাজও পেয়ে যায়। লোকজনের মুখে ছেলেটার গল্প শুনতে শুনতে, তার আঁকা স্কেচ দেখতে দেখতে মেয়েটা প্রেমে পড়তে থাকে। এ ছবিতে কল্পনার একটা জায়গা রয়েছে। ‘আগামীকাল’ নামক আশ্চর্য এক জায়গায় পৌঁছে উমার আলাপ হয় হতভাগ্য নারী দিয়ার (দর্শনা বণিক) সঙ্গে। দিয়ার থেকে সূর্যকে আরও অনেকটা জানতে পারে। আর দেখে, মৃত্যুর কিনার ধরে হাঁটতে থাকা একঝাঁক হাসিখুশি মানুষ। বার্ধক্য, মারণরোগ, বিপর্যস্তজীবনও এদের সময় শেষ হওয়ার আগে মেরে ফেলতে পারেনি। জানতে পারে সূর্য একা বাঁচে না, অনেক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচে। সূর্যর ঝিলমিল লেগে থাকে তার আশপাশের সব মানুষের অস্তিত্বে। কিন্তু উমার সঙ্গে তার দেখা হয় না। মেয়েটার গন্তব্য সূর্য, কিন্তু বারবার ‘ট্রেন মিস’ সিকোয়েন্স। কীভাবে দুটো মানুষ পরস্পরকে খুঁজে পাবে তাহলে? শেষ পর্যন্ত দেখতে হয়।
ছবিজুড়ে ভয়ংকর সুন্দর নিঃসর্গ! অরুণাচলের প্রকৃতি দারুণ লাগবে বড় পর্দায় দেখতে। অয়ন শীলের ক্যামেরা বেশ ভালো। মধুমিতা এ পর্যন্ত যে কটি কাজ করেছেন তার মধ্যে এই কাজটা সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। বাস্তবে তিনি যেরকম ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন, সেই ফুরফুরে আপন খেয়ালে চলা মেয়েটি যেন ‘উমা’। অন্যদিকে দিয়ার চরিত্রে দর্শনা বণিক স্নিগ্ধ সুন্দর। স্বল্প পরিসরে নজরকাড়া মৌমিতা পণ্ডিত। পার্শ্বচরিত্রে প্রসূন গায়েন এবং শ্রীদীপ মুখোপাধ্যায় যথাযথ। তবে চিত্রনাট্যের কিছু খামতি রয়েছে, বিশেষ করে প্রথমার্ধে। যে কারণে
দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে প্রেমের শীর্ষ ছোঁয়ার তীব্রতা কিছুটা কম লাগে। প্রথমার্ধের আলগা সাবপ্লট এবং গল্পের অভিমুখ নির্ধারণ আরও সরাসরি হলে বেশি ভালো লাগত। তবুও বলব, সূর্য-উমার ভালোবাসার গল্প মন ছুঁয়ে যায়, দক্ষিণী ছবির সঙ্গে তুলনা হলেও। যাঁরা সে ছবি দেখেননি তাঁদের এই ছবি ভালোলাগার কথা। লয়-দীপের মিউজিক মন্দ নয়। শেষে বলব, বড় ছবির হিরো হওয়ার সুযোগ বিক্রম এবার পেতে পারেন। শুধুই পাহাড়ি হ্রদের স্নানদৃশ্যে নয়, তাঁর আবেদন ছাপ ফেলেছে ছবিজুড়ে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.