সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সমাজ-পরিবারে অগ্রাধিকার, যত অনুষ্ঠান-আচারের রাশ কি পুরুষদেরই হাতে? সেই প্রশ্নের উত্তরে অনেক তর্ক-বিতর্ক বহুকাল ধরে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতি ভেঙে অনেক নারীই এযাবৎকাল পিতা-মাতার মুখাগ্নি থেকে শ্রাদ্ধকর্ম করেছেন। এবার বাংলা টেলিপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তন্বী লাহা রায়ও (Tonni Laha Roy) সেই পথে হাঁটলেন।
গত ১৪ মে মাকে হারিয়েছেন মিঠাইয়ের তোর্সা। সেইসময়ে সৌমিতৃষা কুণ্ডুও অভিনেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছিলেন। শনিবার একাহাতেই মায়ের ঘাট কাজ সারলেন তন্বী লাহা রায়। গঙ্গাস্নান করে রীতি অনুযায়ী পিণ্ডদান করেছেন। আর সেইসমস্ত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছেন তাঁর মায়েরই এক কাছের মানুষ। অভিনেত্রী সেসব ছবি শেয়ার করে লিখেছেন- “আমাদের ছাড়া তুমি ভালো নেই জানি , তবুও ভালো থেকো মা।”
বহুদিন ধরে বাংলা টেলিভিশনের দর্শকদের অন্দরমহলে অতিপরিচিত মুখ তন্বী। ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘বেনে বউ’, ‘টেক্কা রাজা বাদশা’, ‘বাক্স বদল’-এর মতো সিরিয়ালে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘মিঠাই’ সিরিয়ালে তোর্সা তথা ‘টেসে’র চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। গত মাসে মুক্তি পাওয়া ‘আলাপ’ সিনেমায় মিমি চক্রবর্তী অভিনীত চরিত্র অদিতির বান্ধবীর চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন ছোটপর্দার তারকা।
View this post on Instagram
সম্প্রতি অভিনেত্রীর মা প্রয়াত হন। তিনি যখন মৃত্যুশয্যায়, তাঁর শীর্ণ হাতটি ধরেছিলেন তন্বী। সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অভিনেত্রী লেখেন, “মা…ও মা! এই হাত দিয়েই তো আগলে রাখতে আমাদের, বেরোলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার গাড়িটা দেখা যেতো, সবাইকে নিজের হাতে ইউনিক জিনিস বানিয়ে দিতে। এই হাতেই বছরের পর বছর স্টেরয়েড, অ্যাসিড, স্যালাইন সব সহ্য করেছো। তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো কিন্তু আমাদের দেখাওনি। নিজের ভাইকে ছোট বয়সে হারিয়েছো। মা, বাবাকে চলে যেতে দেখেছো এখন তাঁদের সাথেই আছো নিশ্চয়ই?”
এর পরই তাঁর সংযোজন, “মা…ও মা! তুমি দেখেছো আমার প্রথম নিঃশ্বাস, আমি দেখলাম তোমার নিঃশ্বাস… অক্সিজেন মাস্কের ভিতর থেকে জোরে জোরে আওয়াজ করে নিঃশ্বাস নিতে নিতে, আস্তে আস্তে আওয়াজ কমল কিন্তু নিঃশ্বাস তখনও চলছে, ভাবলাম এইতো এবার লড়ে ফিরছো বোধহয়! খেয়াল করলাম চোখের পাতা পড়ছে না তোমার, কিন্তু নিশ্বাস চলছে… ডাক্তার এসে বললেন আর মাত্র কিছুক্ষণ। এত কিছু করেও! বাপি আর নিজেকে সামলাতে পারল না। হাসপাতালের ৬৮ নম্বর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি মায়ের হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মাকে দেখছিলাম। মাকে ডাকলাম, দেখলাম ১০ সেকেন্ডে একবার করে গলার শিরাটা উঠছে, মানে মা আছে নিঃশ্বাস নিচ্ছে…মায়ের বেডে আমার চোখের জল পড়তেই নিজেকে সামলে নিলাম। তার পর কয়েক সেকেন্ড পেরিয়ে গেল শিরাটা থেমে গেল।” শনিবার বুকে কষ্ট চেপে শ্রাদ্ধকর্ম সারলেন তন্বী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.