সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একজন রাজনীতিবিদ। আরেকজন সিনেমার মাধ্যমেই সামাজিক ইস্যুর মোড়কে রাজনৈতিক দর্শন প্রোথিত করে দিতেন। তবে দুজনের চিন্তাভাবনার যোগসূত্র ‘মার্কসবাদ’ আর সাহিত্যপ্রেম। বছর সাতেক আগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মৃণাল সেনের শেষ দেখা, শেষ আড্ডা। সেই সাক্ষাতেও হয়তো ড্রয়িংরুমে দুই বামবন্ধুর সিনেমা, রাজনীতি নিয়ে কত শত আলোচনা হয়েছিল। গোলাপে মোড়া উষ্ণ আড্ডাযাপনের সেই ছবি শেয়ার করে স্মৃতির সরণিতে ভেসে গেলেন মৃণালপুত্র কুণাল সেন। যে ছবি শেয়ার করে বুদ্ধবাবুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাল টিম ‘পদাতিক’ও।
রাজনীতিক, প্রশাসক হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আদ্যোপান্ত একজন সাহিত্য-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো। সেই সূত্রেই সম্ভবত সাহিত্যচর্চার প্রতি তাঁর আনুরাগ্য আতুঁরঘর থেকেই। রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়েও তাঁর সাহিত্যচর্চা এবং জ্ঞানভান্ডার ছিল অপরিসীম। বলাই বাহুল্য, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রশাসন সামলানোর পাশাপাশি মার্কস, লেনিন, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়র, কাফকা সব বুদ্ধবাবুর নখদর্পণে ছিল। সুস্থ থাকাকালীন শহরে কোনও ভালো নাটক বা সিনেমা তিনি মিস করতেন না। সিনেমার গুণগতমান নিয়েও মুখের উপর বলার সাহস রাখতেন। ৮ আগস্ট সেই সাহিত্য, সিনেমাপ্রেমী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিরবিদায় নিলেন। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে থরে থরে সাজানো সযন্তে রাখা বইগুলোও হল অভিভাবকহীন।
এদিকে মৃণাল সেন বরাবরই বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন তিনি তাঁর সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমা তাঁর রাজনৈতিক ভাষা হলেও কোনদিনই ছক বাঁধা গল্পের আশ্রয় তিনি নেননি। বারবার সিনেমার আঙ্গিক ভেঙেছেন। কলকাতা ট্রিলজিতে যেমন উত্তাল সময়ের ক্ষোভ-যন্ত্রণা যেমন ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তেমনই ‘ভুবন সোম’ ছবিতে বুর্জোয়া মানসিকতার আসল চেহারাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বামপন্থাকেই আদর্শ বলে মেনেছেন। তিনি নাকি নিজেকে মজা করে ‘প্রাইভেট মার্কসবাদী’ বলতেন। সেই রাজনৈতিক দর্শন থেকেই সংস্কৃতিমনস্ক বুদ্ধদেব ভট্টচার্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক। ‘বিষ্যুদসন্ধায়’ দুই বামবন্ধুর ছবি শেয়ার করে বুদ্ধচারণ করলেন মৃণাল সেনপুত্র কুণাল।
দুই বন্ধুর পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি। লালা গোলাপের তোড়া নিয়ে মৃণাল সেনের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর ৩৮, পদ্মপুকুর রোডের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০৩ সাল থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই ফ্ল্যাটেই কাটিয়েছিলেন মৃণাল সেন। যে ক্যামেরাবন্দি মুহূর্ত আজ বুদ্ধাস্তের পর সোশাল পাড়ায় ফেরি করছে কুণাল সেনের সুবাদে। ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, শেষবার বাবার সঙ্গে যখন উনি দেখা করতে এসেছিলেন। তারিখটা ১৫ মে, ২০২৭। মৃণাল সেনের প্রয়াণের ৬ বছর বাদে ৮ আগস্ট বুদ্ধদেবও চিরকালের জন্য বিদায় নিলেন। বুদ্ধ-মৃণাল সাক্ষাতের সেই ছবি শেয়ার করেই ‘পদাতিক’ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মনামী ঘোষরা শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন কমরেডকে। যে ছবি মৃণাল সেনের জীবন অবলম্বনেই তৈরি হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.