কানু বহেলের ছবি ‘ডেসপ্যাচ’- এ মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে একফ্রেমে ঋতুপর্ণা সেন। কেমন ছিল ছবির অভিজ্ঞতা? জানালেন টলিউড অভিনেত্রী ঋ ওরফে ঋতুপর্ণা সেন (Rituparna Sen)। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
অনেকদিন পর আপনার বড় রিলিজ আসন্ন তাও হিন্দিতে। কানু বহেল-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকের ছবি ‘ডেসপ্যাচ’-এ দেখা যাবে আপনাকে। কেমন অনুভূতি?
ঋতুপর্ণা সেন: নিজের কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার আলাদা অনুভূতি আছে। সেটা নিশ্চয়ই খুব স্পেশাল। সবসময়ই চাই যেন আরও বেশি কাজ করতে পারি। এরকম একটা কাজ যখন জি ফাইভে আসছে, বেশি সংখ্যক লোকজনের চোখে পড়বে। আমি জানি না কেমন কাজ করেছি। কারণ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর আমার এখনও দেখা হয়নি। ডাবিং-এর সময় অল্প দেখা হয়েছে। কানু তো বলেছে, খুব ভালো হয়েছে। আমি খুব আশাবাদী এই কাজটা নিয়ে। এটা আমার কাছে পুজোর মরসুমের বোনাস (হাসি)।
‘মামি’-তে ছবিটার প্রিমিয়ার হল সম্প্রতি। কোনও ফিডব্যাক পেলেন মুম্বই থেকে?
ঋতুপর্ণা সেন: হ্যাঁ। অনেকে আমাকে মেসেজ করেছে। ওখানে কাস্টিং-এ যুক্ত যারা, তারা জানিয়েছে। এডিটর মানস, যে আমার বন্ধু– ওর স্ত্রী আমাকে জানিয়েছে যে, খুব ভালো হয়েছে। যাই হোক, এটা ছোট্ট পদক্ষেপ। আরও অনেক কাজ করতে হবে। অন্তত চেষ্টা করে যেতে হবে।
মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
ঋতুপর্ণা সেন: খুবই ভালো। আমার পুরোটাই প্রায় মনোজ স্যরের সঙ্গে রয়েছে। আর ফ্যাক্টরি ইত্যাদি সিনে অন্য অ্যাক্টরদের সঙ্গে। এখানে তিনজন নারী চরিত্র প্রধানত। তাদের কারও সঙ্গে কারও ক্রসওভার হয়নি, ট্র্যাকগুলো এমন। মনোজ স্যরের সঙ্গে কাজ বলতে– ইট’স লাইক আ গুজ বাম্প। লটারি পাওয়ার মতো আমার কাছে। যাঁর এত ছবি দেখেছি ছোটবেলা থেকে ‘শূল’, ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’, ‘সত্যা’ এবং এখনও দেখছি। তাঁর সঙ্গে হিরোইন হয়ে কাজ করা, ইট’স আ ডিফারেন্ট বল গেম। হি ইজ ভেরি নাইস, ভেরি ডাউন টু আর্থ। ভীষণ প্রফেশনাল, আবার খুব বাচ্চাদের মতন-ও। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আলাদা করে চাপ অনুভব করিনি। তবে ভয় পেয়েছি বেশি পরিচালককেই।
হিন্দি নিয়ে কি বেগ পেয়েছেন?
ঋতুপর্ণা সেন: ভীষণ। আমার হিন্দি যাকে বলে ‘বেঙ্গলি হিন্দি’। এখানে তো হিন্দির চর্চা খুব একটা করি না। মুম্বইয়ে পাঁচ-ছমাস থেকে হিন্দি ক্লাস করতে হয়েছে আমাকে। কানু প্রচণ্ড পারফেকশনিস্ট। আমার মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছিল, হিন্দিতে রিহার্সাল করতে করতে। সবাই খুব কোঅপারেটিভ ছিল, কিন্তু প্রচুর খাটতেও হয়েছে আমাকে।
প্রায় ১৪ বছর কাটিয়ে ফেললেন ইন্ডাস্ট্রিতে। একটা সময় অল্টারনেটিভ সিনেমার উজ্জ্বল মুখ ছিলেন আপনি। ‘গাণ্ডু’, ‘বিষ’, ‘কসমিক সেক্স’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবু পরবর্তী কালে সিনেমায় সেভাবে সুযোগ পেলেন না। কেন মনে হয়?
ঋতুপর্ণা সেন: আমার কাছে সত্যি এটার কোনও উত্তর নেই। এই প্রশ্ন এলে বলি, যারা কাজ করেছে তাদের জিজ্ঞেস করো। যে তারা কেন কাস্ট করে না আমাকে। তবে এটাও আমার ভালো লাগে, আমি যে ছবিগুলো করেছি, লোকে মনে রেখেছে। আজকে ‘গাণ্ডু’-র দশবছর হয়ে গেছে, বা ‘কসমিক সেক্স’-এরও। লোকজনের কাছে সেই ফিল্মের স্মৃতি দগদগে। সেখানে বলব, হয়তো তারা ডেঞ্জারাস জিনিসকে ধরতে ভয় পায়। আবার অনেক ট্যাবুও আছে লোকজনের। যে, বাবা ‘গাণ্ডু’-র মতো ছবি করেছে, তাকে কী করে নেব? আমার মধ্যে এই ভাবনাগুলো বেশিক্ষণ থাকে না। কারণ, আমাকে কাজ করতেই হবে। কে আমাকে নিল, বা নিল না সেটায় অত পাত্তা দিই না।
এক শ্রেণির দর্শক -সমালোচকের প্রশংসা যেমন পেয়েছেন, তেমন এই ছবিগুলোর জন্য কিছুটা অসম্মানও পেয়েছেন। আজকের দিনে করলে হয়তো অতটা ক্রিটিসিজম ফেস করতে হত না। এখন ফিরে তাকালে কেমন লাগে?
ঋতুপর্ণা সেন: প্রচুর ক্রিটিসিজম, নেগেটিভিটি ফেস করেছি। কিছু করার নেই, ওটা আমার কপালে ছিল। এই ছবিগুলো আমাদের এই টিমটা ছাড়া কেউ করতে পারত না। কিন্তু ভুল জায়গায় কাজটা করে হয়ে গেছে। কলকাতা এবং বাঙালি প্রোগ্রেসিভ খুবই। কিন্তু সেক্সুয়ালিটির দিক থেকে হয়তো কেউ-ই তেমন প্রোগ্রেসিভ নয়। ওই ছবিটা আমরা যখন করেছিলাম, তখন সেই সাহস ছিল, এখনও আছে। বেশ করেছি, সেই সময় ওটা দরকার ছিল। হয়ে গেছে ন্যাচারালি।
টেলিভিশনের বেশ কিছু কাজ করেছিলেন, এবং এখনও করছেন। এনজয় করেন?
ঋতুপর্ণা সেন: হ্যাঁ, বেশ কিছু। আমি কাজ মাত্রই উপভোগ করি। কোনওদিন আমি সেই আর্টিস্ট নই, যে শুটিংয়ে গিয়ে বলবে, কখন প্যাক আপ হবে। ব্রেক আপ-এর পর কাজের মধ্যে নিজের জীবনটা আরও উপভোগ করতে শুরু করি। ফিল্ম, সিরিয়াল, যাই হোক, আমি কাজ ভালোবাসি। স্টার জলসায় যেমন এখন ‘তেঁতুলপাতা’-য় করছি। খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র আমার। সবাই বলে নেগেটিভ শেডস ইত্যাদি। আমার মনে হয়, দাপুটে অভিনয় করার সুযোগ সিরিয়াল দেয়। যে কটা সিরিয়াল করেছি, প্রত্যেকটা আলফা ফিমেল টাইপের চরিত্র করেছি। এখানেও তাই। সুন্দরী, ক্লাসি একজন মহিলা অথচ কীভাবে সংসারটা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেখার। সিরিয়ালে নিজের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়– কী ভালো করলাম। (হাসি)
কিউ-এর সঙ্গে ব্রেক আপ-এর পর আর প্রেমে পড়েননি?
ঋতুপর্ণা সেন: নাহ্। সাবধানি হয়ে গিয়েছি বলে বোধহয় (হাসি)। আমার মনে হয়েছিল, প্রেমটা একটু ব্যাকসিট নিতে পারে। আগে আমাকে কাজ করতে হবে। এই মুহূর্তে জীবনেই ফোকাস। মা চলে যাওয়ার পর আরওই কাজের মধ্যে ঢুকে গেলাম। এই যে ‘ডেসপ্যাচ’ আসবে বা আরেকটা বাংলা সিরিজ আসছে, ‘ক্লিক’-এ ‘বাড়ুজ্যে ফ্যামিলি’ বলে। যেখানে আমি যোগা ইন্সট্রাকটরের চরিত্রে। মজার সিরিজ। এগুলো আনন্দের। প্রেমও নিশ্চয়ই দরকার। কিন্তু জোর করে নয়। যখন সঠিক সময় আসবে হবে, না হলেও না হবে। আই ক্যান টেক কেয়ার অফ মাই সেলফ।
সিনেমার কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে শোনা যায়। উঠে আসে ‘কমপ্রোমাইজ’-এর প্রসঙ্গও। কী বলবেন?
ঋতুপর্ণা সেন: দেখো, আজকে যদি কিউ আমার বয়ফ্রেন্ড না হত তখন, ওই ছবিগুলো কি আমি করতে পারতাম? না, পারতাম না। একদিনের কমপ্রোমাইজ করতে পারতাম কি না জানি না। কিন্তু কাজ পেতে গেলে প্রেম করতে হবে, এই বোঝাটা আমি এখন আর নিতে পারব না। কাজ করতে গিয়ে প্রেমে পড়ে গেলাম, তার সঙ্গেই রয়ে গেলাম, এতে ক্ষতিই হয়। একজনের হয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি ভালো ব্যবহার, ভালো কাজ, র্যাপো-তে বিশ্বাস করি। তারপর সবটা তো নিজের হাতে থাকে না (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.