Advertisement
Advertisement

Breaking News

RG Kar

প্রাইভেট কলেজে পড়া ‘বিপ্লবী’ ডাক্তারদের নিশানা অনিকেতের, সুদীপ্তার উত্তরে ফের বিঁধলেন পরিচালক

'দ্বিচারিতা' নিয়ে বিঁধলেন সুদীপ্তাকেও!

RG Kar: Aniket Chattopadhyay replied to Sudipta Chakraborty on Junior Doctors protest row
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:September 29, 2024 6:55 pm
  • Updated:September 29, 2024 6:55 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডের পর প্রথম থেকেই সরব সুদীপ্তা চক্রবর্তী। আন্দোলনকারী ডাক্তারদের পাশে থেকে বিনিদ্র রজনী জেগেছেন তিনিও। আর রবিবার পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় (Aniket Chattopadhyay) যখন প্রাইভেট কলেজে পড়া ‘বিপ্লবী’ ডাক্তারদের উদ্দেশে তোপ দেগে একটি পোস্ট করেন, তখনও প্রশ্ন তুলেছেন সুদীপ্তা (Sudipta Chakraborty)। বিকেল গড়াতেই অভিনেত্রীকে পালটা জবাব দিলেন ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ ছবির পরিচালক।

এদিন ডাক্তার তথা অভিনেতা কিঞ্জল নন্দর নাম না করেই অনিকেত লেখেন, “এক কোটি টাকা ডোনেশন দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের বিপ্লবী মুখ। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।” আর জি কর আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে কিঞ্জল প্রতিবাদে শামিল থেকেছেন। সেই প্রেক্ষিতে এই আন্দোলনের ‘মুখ’ বলে অভিনেতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অনেকে। এবার অনিকেত তাঁর নামোল্লেখ না করেই যে পোস্ট করেছেন, তার কমেন্ট বক্সে উত্তর দিয়েছেন কিঞ্জল নিজে। অন্যদিকে সুদীপ্তা চক্রবর্তী তাঁর ফেসবুক পোস্টে অনিকেতকে বিঁধে লেখেন, “এই বিপ্লবে সেই প্রথম দিন থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আছি আমি, অথচ আমি তো প্রাইভেট, পাবলিক, সরকারি কোনও মেডিক্যাল কলেজেই পড়িনি। ডাক্তারির ‘ড’-ও জানি না। একটা প্যারাসিটামল খেতে হলেও ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে খাই। তাহলে আমার কি আর এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিপ্লব করা হবে না? এই সমাজ কি আমাকে বা আমার বিচার চাওয়ার দাবিকে মেনে নেবে না? সম্প্রতি আমরা সিনেমা, টিভি, ওয়েব ইত্যাদি তে কাজ করেন এমন মহিলাদের ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে আমাদের জন্য একটা ফোরাম তৈরি করেছি। সেখানে কেউ হয়তো কোনও সরকারি ফিল্ম স্কুল থেকে পাশ করা, কেউ বেসরকারি, আর বেশির ভাগই কোথাও থেকে পাশ করা নয় (যেমন আমি)। সেক্ষেত্রে কি আমরা আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তে চলা অন্যায়ের (আপাতত শুধু মেয়েদের ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের উপর) বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলতে পারি আদৌ? আমি নিয়মকানুন অত জানি না। তুমি এত সিনিয়র এবং বিচক্ষণ, এত অভিজ্ঞতা তোমার, একটু যদি গাইড করে দাও ভালো হয়। উত্তরের অপেক্ষায় থাকব। পুণশ্চ: আমার বাবার নাম বিপ্লব। আমিও (তোমার মত) মনেপ্রাণে চাই বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।”

Advertisement

সুদীপ্তার পোস্টের প্রেক্ষিতে জবাবও দিলেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। এবার পরিচালক সওয়াল করলেন ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে। দীর্ঘ পোস্টে অনিকেত লিখেছেন, “সুদীপ্তা, একজন নয়, অনেকজনই কোটি টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের ম্যানেজমেন্ট কোটায়/এন আর আই কোটায় ভর্তি হয়ে ডাক্তার হয়, হবেন, হয়েছেন। বেশ করেছেন, এদেশে যাদের টাকা আছে তারা বেশি সুবিধে পাবে, তারা বড় স্কুলে পড়তে পারবে, তারা ভালো খেতে পারবে, এটা স্বাভাবিক, শ্রেণী বিভক্ত সব রাষ্ট্রেই সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা এই ক্যাপিটেশন ফির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলাম। সুদীপ্তা, তোর বাবা বেঁচে থাকলে জেনে নিতে পারতিস। আমরা বলেছিলাম, চিকিৎসা শাস্ত্রের মতো এক উচ্চশিক্ষায় মেধার ভিত্তিতে নয়, টাকার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া এক মারাত্মক সিদ্ধান্ত, আমরা তার বিরোধিতা করি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশার শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্যাপিটেশন ফি বাতিল করো। হ্যাঁ এটাই ছিল সেদিন বামপন্থী প্রত্যেক দলের সিদ্ধান্ত। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেটা এখনও বিশ্বাস করি।”

এরপরই পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “সেই সাধারণ বিরোধিতা কেবল মাত্র ক্যাপিটেশন ফির মধ্যেই কি সীমাবদ্ধ? কারণ প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। কারণ তিলোত্তমার মৃত্যুর পরে দুটো সমান্তরাল আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যার একটায় আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। সেটা হল মহিলাদের স্বাধীনতার লড়াই, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই, জেন্ডার ইকুয়ালিটির জন্য লড়াই এবং সেই লড়াই এর একটা দাবী তিলোত্তমার ধর্ষণ-হত্যার ন্যায় বিচার। পরোক্ষভাবে হলেও রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম দুর্নীতিও তার জন্য দায়ী। অতএব তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এই আন্দোলনের এক অঙ্গ। অন্যদিকে এই ধর্ষণ আর হত্যার প্রেক্ষাপটেই দ্বিতীয় আন্দোলনটা হল- জুনিয়র ডাক্তারদের, তাঁরাও তাঁদের সতীর্থের নৃশংস, ধর্ষণ আর খুনের প্রতিবাদ করছেন, তার পাশাপাশি তাঁদের সুরক্ষার প্রশ্নও তাঁরা তুলেছেন, তাঁদের আরও কিছু দাবি আছে যা রোগীদের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। এই দুই সমান্তরাল আন্দোলন কখনও কখনও এক জায়গায় মিলেছে, কিন্তু যখনই প্রশাসনিকভাবে আন্দোলন নিয়ে কথা হয়েছে, তখনই তাতে প্রথম আন্দোলনের কেউই ছিলেন না, বরং বলা যায়, প্রথম আন্দোলনের ধারাটা আলাদা হয়ে গিয়েছে, যা হতে পারতো এই মুহূর্তে সবথেকে বড় আন্দোলন, নারী সুরক্ষার আন্দোলন, লিঙ্গ সাম্যের আন্দোলন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

ওই পোস্টেই আন্দোলনকারী ডাক্তারদের ‘এজেন্ডা’ প্রসঙ্গে পরিচালকের মত, “যাবতীয় আলোচনা, বৈঠক, দাবি দাওয়া, যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তাঁদের চার্টার অফ ডিমান্ড-এ অনুপস্থিত নারী সুরক্ষার কথা, লিঙ্গ সাম্যের অধিকারের কথা। তাঁদের ৩/৫/৭ দফা আন্দোলনের মধ্যে সেসব কথা নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে এক সামাজিক আন্দোলন হয়ে উঠল মাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। কিন্তু সেখানেও তো একটা আশা ছিল, এই জুনিয়র ডাক্তারেরা কমিউনিটি হেলথ এর কথা বলবেন, গণ স্বাস্থ্যের কথা বলবেন। বলবেন কেন গত ১১/১২ বছরে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৮ গুণ বেশি পুঁজি ঢালা হয়েছে? কাদের মুনাফার জন্য ঢালা হয়েছে? কাদের স্বার্থে ঢালা হয়েছে? কেন আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেবল হাসপাতাল আর বড় বড় যন্ত্রপাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ, কেন প্রাইভেট কর্পোরেট সেক্টরে চিকিৎসা এখন এক ফাইভ স্টার হোটেল হয়ে দাঁড়িয়েছে? এই হাজারো প্রশ্ন কিন্তু ডাক্তারদের আন্দোলনের কোথাও নেই? নেই জেনেরিক ওষুধ আর ডায়গোনেস্টিক ঘাপলাবাজির কথা। তার মানে তাঁরা কাউকে আড়াল করতে চাইছেন? তাঁরা গণস্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত নন কেবল নিজেদের সুরক্ষা চাইছেন? এবং যখন এই আলোচনার পরিসরে আমরা চলে যেতে বাধ্য হই, এখন এই আন্দোলন জুনিয়র ডাক্তার, সিবিআই তদন্ত আর সুপ্রিমকোর্টের বিষয়, উবেই গিয়েছে। যে গণস্বাস্থের কথা আমরা বহুকাল বলেছি আর তার যুক্তি যুগিয়েছিলেন ডঃ পূণ্যব্রত গুন, যিনি এখন এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তখন বুঝি আবার এক মরীচিকার দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমাদের। আবার আন্দোলনের শেষে মানুষের হাতে পড়ে থাকবে পেনসিল। হ্যাঁ সেই জন্যেই আন্দোলনের মধ্যে আসুক গণস্বাস্থ্যের কথা, আসুক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর্পোরেট পুঁজির বিরুদ্ধে স্লোগান। তার বদলে সেই স্বাস্থ্য মাফিয়াদেরই দেখলাম আন্দোলনের মুখ হয়ে দাঁড়াতে।”

পোস্টের শেষপাতে সরাসরি সুদীপ্তা চক্রবর্তীর প্রশ্নের উত্তর দিলেন অনিকেত। পরিচালকের প্রশ্ন, “আমার কোন লেখায় বলেছি যে এই আন্দোলনটা করতে হলে, আন্দোলনে নামতে হলে ডাক্তার হতে হবে? মেডিক্যাল কলেজেই পড়তে হবে? বরং এই বিরাট সামাজিক আন্দোলনটা কেবল ডাক্তারবাবুদের সুরক্ষার আর তাদের সঙ্গেই সরকারের প্রধানদের বৈঠকের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করছি মাত্র। দুই, টলিপাড়ায় তোদের ফোরাম নিয়ে আমার খুব বেশি কিছু জানা নেই। তবে ওখানে যে অন্যায় চলে, চলে আসতো, সেটাই তো আমার প্রথম ছবির বিষয় ছিল। কিন্তু গত ৪-৫ বছর ধরে ওই টলিপাড়ার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই। কিন্তু তোদের উদ্যোগের জন্য আগাম সমর্থন জানিয়ে রাখলাম। আবার তার মানে এও নয় যে সেখানে যা যা হবে সবটাকেই সমর্থন জানাব, সাধারণ মানুষের জন্য, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য, ঠকে যাওয়া মানুষের জন্য যেটুকুই করবি, তাই ভাল, তাদের পাশে থাকার কথা বলছিস, এটাই তো বড় কথা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দ্বিচারীতাই প্রথম আর প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ভালো থাকিস।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub