‘প্রধান মুখ হওয়ার দায়িত্ব অনেক’, স্বয়ং মাধবন শুভেচ্ছা জানালেন টিম ‘সূর্য’ এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে। অভিনেতার মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক
প্রায় ১৪ বছর কাটিয়ে ফেললেন ইন্ডাস্ট্রিতে। এখনও কি স্ট্রাগল করতে হচ্ছে মনে হয়?
– আমার মনে হয় যে কোনও আর্টিস্টের ক্ষেত্রে স্ট্রাগল ইজ ইটার্নাল। সেই স্ট্রাগলের ফর্মটা চেঞ্জ হবে। আমারও তাই হয়েছে।
২০২৩ সাল আপনার ভালো গেছে। ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ আর ‘পারিয়া’-র মতো ছবির প্রধান মুখ ছিলেন। এ ছাড়া গত বছর ‘শেষ পাতা’-তে ইন্টারেস্টিং চরিত্রে ছিলেন। এবারে ‘সূর্য’ আসছে সামনের সপ্তাহে। পরিচালনায় শিলাদিত্য মৌলিক। অ্যাকশন থেকে রোমান্টিক মোডে ফিরছেন?
– এটা একেবারে রোমান্টিক ছবি তা নয়। এই ছবির ইউনিকনেস, ছবির সোল-এর মধ্যে। এই ছবি পজিটিভিটির কথা বলে, উন্নততর আগামীর কথা বলে। এমন একটা মানুষের গল্প, যে খুব নিঃস্বার্থে মানুষের জন্য করতে পারে। আমার চরিত্র সূর্য তেমনই। ভালো মানুষ হওয়া বা লোকের জন্য করাটা তো এত সহজ নয়। আজকের পৃথিবীতে এই চরিত্রটা ম্যাজিকাল।
মালয়ালম ছবি ‘চার্লি’ প্রথমে হয়েছিল। যেটা দুলকার সলমন করেন। তারপর হিট তামিল ছবি ‘মারা’ (মাধবন নায়ক) এবং মারাঠি ছবি ‘দেবা’ হয়। এদের অ্যাডাপ্টেশন এই ‘সূর্য’। মাধবন বা দক্ষিণী ছবিগুলোর সঙ্গে তুলনা আসতেই পারে…
– (হাসি) ‘চার্লি’, ‘মারা’ বা ‘সূর্য’ ছবির আত্মা। সেই সোল আর চরিত্রায়ন এক রেখেছি আমরা। কিন্তু দক্ষিণী সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের তো তফাত রয়েছে। ফলে দুটো প্রদেশে ছবি আলাদা হয়ে গিয়েছে। তুলনার ব্যাপারটা খুব রিলেটিভ। ‘পারিয়া’-র প্রোমোশনের শুরুতে লোকে বলেছিল, ফিল-টা ‘অ্যানিম্যাল’-এর মতো। প্রচুর মারামারির জন্য। সেই সিনেমা তো অ্যাডাপ্টেড ছিল না, তাতেও তুলনা হয়েছে। কাজেই তুলনা যাদের করার তারা করবেই। আবার কেউ স্ট্যান্ড অ্যালোন ছবি হিসাবেই দেখতে যাবে। দুই ধরনের দর্শকই আছে। আমাদের প্রযোজক প্রদীপ চক্রবর্তী আগের ‘মারা’ এবং ‘দেবা’ দুটো ছবিই প্রযোজনা করেছেন। এই ভদ্রলোক সারা পৃথিবীর অল ল্যাঙ্গোয়েজের রাইটস কিনেছিলেন। তার মধ্যে দুটো ভাষায় বানিয়েছিলেন, তামিল আর মারাঠি। এই সিনেমার আত্মাটা ওঁর খুব কাছের। এমন গল্প তিনি নিজের মাতৃভাষায় বানাতে চেয়েছিলেন। আর মাধবন স্যর এক্স হ্যান্ডেলে আমাদের পুরো টিমকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন (গতকাল), এটা আমাদের অত্যন্ত উদ্দীপ্ত করবে।
দারুণ ব্যাপার। তবে রিমেক নিয়ে দর্শকের দ্বিধা থাকে।
– যদি কেউ ঠিকভাবে একটা সিনেমার স্বত্ব কিনে অন্য ভাষায় ছবি করে তাতে আপত্তি থাকার কী আছে? আমাদের দর্শকদের একাংশ হিপোক্রিটিকাল। আরেক অংশ মাঝের এক সময়ের রিমেক দেখে বিরক্ত। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে বলছি। এদের মধ্যেই একটা অংশ হিন্দিতে ‘কবীর সিং’ দেখে বা ‘শয়তান’ দেখে। একটা ইন্ডাস্ট্রি যদি শুধু রিমেক করে অন্য ভাষার থেকে সেটা নিশ্চয়ই ভালো না। তাহলে নিজের রাইটার, ডিরেক্টরদের রেস্ট্রিক্ট করা হয়ে যায়। বছরে ৭০টা সিনেমার মধ্যে ৩ টে যদি অ্যাডাপ্টেড করা হয়, তাই নিয়ে এত নেগেটিভিটি থাকার মানে হয় না। হেলদি মিক্স হলে অসুবিধা কী! আরেকটা খবর দিই ‘পারিয়া’ও দক্ষিণী ভাষায় রিমেকের কথা চলছে। সেটা হলে খুশিই হব। কারণ আমাদের ছবিটা অন্য ভাষার অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছবে।
‘সূর্য’-তে আপনার দুই নায়িকা মধুমিতা এবং দর্শনা। এর আগে মধুমিতার সঙ্গে আপনার ‘কুলের আচার’ চলেনি। কতটা আশাবাদী লাগছে? বাংলা ছবির জন্য দর্শক টানা কঠিন এখন।
– কোন সিনেমা চলবে আর চলবে না, সেটা সিনেমার বিষয় বা গল্পের উপর নির্ভরশীল। মানুষ কানেক্ট করলে দেখবে। স্টারকাস্ট সেখানে কিছুটা কনট্রিবিউট করতে পারে, শুধু স্টারকাস্টের উপর নির্ভর করে সিনেমা হিট হয় না আজকের দিনে। ফ্লপ হওয়ার ক্ষেত্রেও তাই। এটা অন্য গল্প, অন্য পরিচালক।
শোনা যাচ্ছে, ছবির ট্রেলার লঞ্চের পর থেকে মধুমিতা সেভাবে প্রচারে অংশগ্রহণ করেনি। ঘটনাটা কী?
– শুনেছিলাম ওর বাড়িতে কিছু সমস্যা হয়েছে। তাই মেসেজ করেছিলাম যে, ‘কিছু হেল্প লাগলে বলিস।’ কী হয়েছে কেউ পরিষ্কার জানে না। আর ও আমাকে এখনও জানায়নি। তাই মনে হয়, বাড়িরই কিছু হয়তো সমস্যা হয়েছে। আর মধুমিতা, দর্শনা ছাড়া প্রসূনদা, শ্রীদীপ, মৌমিতা পণ্ডিত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে।
এত বছর কাজ করছেন, বিশেষ করে শেষ দুবছর দারুণ ছাপ ফেলেছেন। তবুও আবির, পরমব্রত, ঋত্বিক, যিশুদের নাম যেমন একসারিতে উচ্চারিত হয়, সেই জায়গাটায় পৌঁছতে আপনার এখনও অনেকটা পথ বাকি রয়েছে। নিজের কখনও মনে হয়েছে?
– আমি বিষয়টা এইভাবে দেখি না। প্রত্যেকটা ছবি দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আরও ভালো কাজ পেতে প্রত্যেকটা সিনেমা আমাকে এগিয়ে দিচ্ছে। যাদের নাম বললে বা ধরো, দেবদা, জিৎদার মতো স্টার, প্রত্যেকে দারুণ, তারা অনেক বছর ধরে মুখ্য চরিত্রে কাজ করছে।
আরেকটু বেশি উত্থান আশা করেননি?
– আসলে এটা লাইফ-লং প্রসেস। অনেক নায়ক-নায়িকাকেই দেখেছি লিডিং চরিত্রে করেছেন, তাঁরা হয়তো আজকের দিনে কাজ পাচ্ছেন না। তাঁরা আবার আগামী দিনে পাবেন। ২০২২-এ ‘কুলের আচার’ মুক্তি পায়, আজকে ২০২৪ সাল। আমি ফরচুনেট, এর মধ্যে অনেকেরই মনে হয়েছে আমাকে প্রধান চরিত্র করে সিনেমা বানানো যায়। সেটা কিন্তু খুব বেশি দিন নয়। প্রধান মুখ হওয়ার দায়িত্ব অনেক। বুঝতে পারছি…
– ২০১০-এ ‘বেডরুম’ করি। তারপর ‘এলার চার অধ্যায়’-এ খুব নিম্নমানের কাজ করেছিলাম। তারপর আমাকে কেউ লিড রোলে ভাবেনি বহু বছর। তারপর ২০১৫-য় ‘ইচ্ছে নদী’ ঘটে। আবার মানুষ জায়গা দেওয়া শুরু করে। সে ‘সাহেব বিবি গোলাম’ হোক বা ‘খোঁজ’। কিছু প্রমিনেন্ট কাজ করতে পারি। তারপর আবার লম্বা সময় আমার কাছে কাজ ছিল না, ২০২১ পর্যন্ত। একটা সময়ে টিভি-তে বিরতি টানি, কারণ মানুষকে জানাতে হত সিনেমায় প্রধান চরিত্র পেতে চাই। পুরোটা ঘটাতে সময় লেগে গেল। আমার সিনেমার জার্নি কিন্তু অনেক নতুন।
এখন কী করছেন?
– ‘দুর্গাপুর জংশন’-এর ডাবিং চলছে। ‘পারিয়া টু’ লিখছে তথাগত। আবার আমাকে ফিজিক্যাল ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তিনটে টাইমলাইন আছে। দেরি আছে ওটার এখনও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.