সন্দীপ্তা ভঞ্জ: বাঙালি না হয়েও বাংলার সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগ রয়েছে। ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক আর শাড়িতে তিনি আদ্যোপান্ত বাঙালি নারী। বাংলা ভাষা যেমন গরগরিয়ে বলেন, তেমনই সুকুমার রায়ের ‘সৎ পাত্র’ তাঁর ঠোটস্থ। এবার আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এসে জীবনের প্রথম কাজের স্মৃতি আউড়ে আবেগপ্রবণ বিদ্যা বালান (Vidya Balan)। যে পরিচালকের হাত ধরে অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন, তিনি আর নেই। তাই ‘গৌতমদা’র (হালদার) স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অভিনেত্রীর চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল।
সালটা ২০০৩ সাল। সদ্য মুক্তি পেয়েছে বিদ্যা বালানের প্রথম সিনেমা ‘ভালো থেকো’ ঠিক সেবছরই কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘থালি গার্ল’ হিসেবে হাজির ছিলেন অভিনেত্রী। কাট টু ২০২৪ সাল। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বিশেষ অতিথি। তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারের প্রথম সিনেমা ‘ভালো থেকো’ দেখানো হল ফিল্মোৎসবের দ্বিতীয় দিনে। দু দশক আগের সেসব স্মৃতি হাতড়ে চোখের জল মুছলেন বিদ্যা।
শুক্রবার শহরে পা রেখে নন্দনে পৌঁছে গেলেন বিদ্যা। কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের (KIFF 2024) মঞ্চেই তিনি সদর্পে স্বীকার করে নিলেন জীবনে অনেক বাঙালির কাছে তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি যেমন প্রদীপ সরকারের স্নেহধন্যা ‘পরিণীতা’ ছিলেন, তেমনই সুজয় ঘোষের ‘কাহানি’তে তিনি বঙ্গনারী ‘বিদ্যা বাগচী’। প্রথম সিনেমাও বাংলা। অন্যদিকে তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারে অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ‘মঞ্জুলিকা’ও বাঙালি ভূত। বিদ্যা বালান জানালেন, “বিজ্ঞাপনী কাজ করার সময়েও অনেকে বলেছেন আমাকে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের মতো দেখতে।” বলিউডে কাজ করলেও বাংলা তাঁর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সেপ্রসঙ্গ টেনেই অভিনেত্রীর মন্তব্য, “জীবনে অনেক বাঙালিকে আমার ধন্যবাদ জানানোর আছে। ওঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।” এদিন সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সকলের অনুরোধে ঝরঝরে বাংলায় গাইলেন, ‘তোমাতে আমাতে দেখা হয়েছিল’। শুধু তাই নয়, কলকাতার রাস্তা থেকে হলুদ ট্যাক্সি উঠে যাওয়ার কথা শুনেও মনখারাপ বিদ্যার। অভিনেত্রী বললেন, এই তো ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-র প্রচারের সময়েও কলকাতার হলুদ ট্যাক্সিতে চড়েছি।
কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর তিনি। বিদ্যা বালানের মন্তব্য, “আজ গৌতমদাকে নিয়ে কথা বলব। তাই ওঁর এবং চৈতী বউদির উপহার দেওয়া শাড়িটা পড়ে এসেছি। যে শাড়িটা পরেছিলাম দু দশক আগে সেই ছবির প্রিমিয়ারে।” কথা বলার আগে একমিনিট প্রয়াত পরিচালক গৌতম হালদারের উদ্দেশে নীরবতাও পালন করলেন শিশির মঞ্চে। ঠিক তার পরই কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে এল তাঁর। অশ্রুকণা মুছে হাসিমুখেই কলকাতার স্মৃতির সরণিতে হেঁটে বেড়ালেন এদিন বিদ্যা বালান। বাংলায় উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়রা তাঁর রোল মডেল। চিরাচরিত অভিনয়ের প্রশিক্ষণ না নিলেও চিত্রনাট্যই তাঁর ব্রহ্মাস্ত্র। একথাও জানালেন অভিনেত্রী। কবে দেখা যাবে তাঁকে বাংলা ছবিতে? প্রশ্ন ছুঁড়তেই বললেন, “বছর দুয়েক আগে অবধি আমার কাছে বাংলা সিনেমার প্রস্তাব আসত। এখন আর আসে না। আমি তো করতেই চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.