Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kapil Sharma

কপিল শর্মার শোয়ে রবিঠাকুরের গান নিয়ে ব্যঙ্গ! কী বলছেন ইমন, ইন্দ্রদীপ, লগ্নজিতা?

কপিলের শোয়ে কবিগুরুর ‘একলা চলো রে’ গানটির কথা ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গিতে প্রদর্শনের জন্য বেজায় ক্ষুব্ধ শ্রীজাত।

Indradeep Dasgupta Iman Chakranorty Lagnajite on Kapil Sharma Show tagor song controversy
Published by: Akash Misra
  • Posted:November 1, 2024 8:42 pm
  • Updated:November 1, 2024 8:42 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কপিল শর্মার শোয়ে (The Great Indian Kapil Show) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে মশকরা। কবিগুরুর ‘একলা চলো রে’ গানটির কথা ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গিতে প্রদর্শনের জন্য বেজায় ক্ষুব্ধ শ্রীজাত। সোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করে দীর্ঘ পোস্টও করেছেন তিনি। সেখানেই সাফ হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন যে, “দিন সাতেক সময় দিলাম। ক্ষমা না চাইলে কপিলের শোয়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করব। ইতিমধ্যেই বিশিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে।” তবে শুধুই শ্রীজাত নয়, কপিল শর্মার শোয়ে রবিঠাকুরের গানের এই ব্যঙ্গকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী এবং সুরকার ও পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত।

সংবাদ প্রতিদিনকে ইমন জানালেন, ” আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যিনি বানিয়েছেন। আমি জানি না, আমার জ্ঞানত মনে হয় না, কোনও দেশের যিনি জাতীয় সঙ্গীত বানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে সেই দেশের নাগরিকের ঠাট্টা, সেই দেশের মানুষ তাঁর কাজ নিয়ে কোনও মস্করা করতে পারে কিনা। এটা পৃথিবীর অন্য়কোনও দেশে সম্ভব কিনা। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে সম্ভব হয়েছে। ” অন্যদিকে শিল্পী ইমন চক্রবর্তী জানান, ”বুঝে হোক, না বুঝে হোক, কোনও সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে নিয়ে ছেলাখেলা করার আমার, আপনার, পৃথিবীর কোনও মানুষের নেই। আমি এইটুকুই বলতে পারি।”

Advertisement

এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে লগ্নজিতা জানিয়েছেন, ”আমি কপিল শর্মার শো দেখি না। শ্রীজাতদার পোস্টও দেখিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু কম করা হয় বলে, তবে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হতেই থাকে। কিন্তু, সেটা নিয়ে যদি কেউ ব্যঙ্গ করেন তবে আমিও প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হব। রবীন্দ্রনাথ তো শুধু বাঙালির নয়, গোটা জাতীর গর্ব। তাই এই ভাবে কারও সৃষ্টি নিয়ে ঠাট্টা করা যায় না।”

ঠিক কী ঘটেছে?

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’ দর্শক মহলে বেজায় জনপ্রিয়। পেটে খিল ধরা কন্টেন্ট আর কমেডিয়ান কপিল শর্মার সঞ্চালনা দেখে অনুরাগীরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেই শোয়েই রবি ঠাকুরকে অপমান! ‘বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি কি সবসময়েই খোরাক?’ প্রশ্ন তুলে ক্ষোভপ্রকাশ শ্রীজাতর। ফেসবুক পোস্টে ঠিক কী লিখেছেন? তাঁর কথায়, “দিনপাঁচেক আগে নেটফ্লিক্সে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’-এর একটি নতুন পর্ব সংযোজিত হয়, যেখানে অতিথিদের মধ্যে অভিনেত্রী কাজল ও কৃতী স্যানন উপস্থিত ছিলেন। সেই পর্বের মাঝামাঝি সময়ে কপিলের এক সহকারী শিল্পী বা কৌতুকাভিনেতা ক্রুষ্ণা অভিষেক উপস্থিত হন এবং সম্ভবত কাজলকে বাঙালি বংশোদ্ভুত হিসেবে পেয়েই রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে মশকরার সরঞ্জাম হিসেবে বেছে নেন। হঠাৎ তো বেছে নেননি, সেভাবেই চিত্রনাট্য সাজানো ছিল। ঠিক কী হয়েছে, কেমনভাবে হয়েছে, এখানে বিস্তারিত বলছি না। কিন্তু ‘একলা চলো রে’ গানটি নিয়ে ক্রুষ্ণা অভিষেক যে ব্যাঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তার উদ্রেক করেছেন, তা সম্মান ও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে গেছে, অন্তত আমার চোখে। পর্বটি যথাস্থানে আছে, কেউ চাইলে দেখে নিতে পারেন, আর যাঁরা ইতিমধ্যেই দেখেছেন, তাঁরা ভালই জানেন। এই কদর্য উপস্থাপনার বিরুদ্ধে আমি আমার লিখিত অভিযোগ ও আপত্তি জানালাম। যে বা যাঁরা ওই কৌতুকদৃশ্য রচনায়, উপস্থাপনায়, অনুমোদনে ও সম্প্রচারে জড়িত থাকলেন, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালাম। স্পষ্ট ভাষায়, দ্ব্যর্থ উচ্চারণে।”

শ্রীজাতর সংযোজন, “কৌতুক আর তামাশা’র মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখা আছে, সেটা ঝাপসা হয়ে এলেই বিপদ। কী বলছি, কাকে নিয়ে বলছি, কতটুকু বলছি, এসব না-ভেবে কেবল লোক-হাসানো TRP-র জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে হতে মানুষ এক সময়ে নিজের সীমা বিস্মৃত হয়। তখন তাকে মনে করিয়ে দিতে হয়, এই চৌকাঠ পেরনো তোমার উচিত হয়নি। আমি সেটুকুই করছি। বাঙালি মনীষীদের নাম বা কাজ নিয়ে ইচ্ছেমতো হাসিঠাট্টা করাই যায়, ভারতের অন্যান্য অংশের কিছু বাসিন্দাদের এমনটাই ধারণা। বাংলা ভাষা থেকে সংস্কৃতি, সবটাই তাঁদের কাছে খোরাক। ঠিক যে কারণে অমোঘ লীলা দাস বিবেকানন্দকে নিয়ে মস্করা করার স্পর্ধা পান। পরে বিরোধের স্বর চড়লে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। কিন্তু ভারতের নানা অংশে ঘুরে দেখেছি, বাঙালিদের সবকিছু নিয়ে একটু ঠাট্টা-ইয়ার্কি অনেকেরই মজ্জাগত। কেউ বলতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুল করে ফেললে সে একরকম। কিন্তু দেড়েকষে পিছনে লাগব বলে বাঙালি আইকনকেই বেছে নেওয়া, এ-জিনিস তো নতুন দেখছি না। আমি নিশ্চিত, গালিব, কবীর বা প্রেমচন্দের লাইন নিয়ে এমন কুৎসিত মস্করা করার সাহস হতো না এঁদের। পরের দিন শো বন্ধ হয়ে যেত। বাঙালি এসব ঠাট্টায় অভ্যস্ত, অতএব বাঙালিকে নিয়ে মস্করা করাই যায়, তাও আবার একজন বাঙালি অভিনেত্রীর সামনে, যিনি এই মস্করায় হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। আমার এহেন লেখায় যদি কারও মনে হয় আমি প্রাদেশিক, তাহলে কিছু করার নেই। আমি তবে গর্বিত প্রাদেশিক। সেইসঙ্গে এটাও বলি, যিনি আমার দেশের জন্য জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন (বাকি অন্যান্য অনেক কিছু যা যা করেছেন সেসব আর বললাম না), তাঁর প্রতি পরিকল্পিত অসম্মানে ক্ষুব্ধ হতে গেলে প্রাদেশিকতা লাগে না। ‘The Great Indian Kapil Show’-তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর গানের অবমাননা করার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ভারতীয় নাগরিক এবং একজন সামান্য অক্ষরকর্মী হিসেবে আমি অসম্মানিত ও আহত বোধ করছি। আমি মনে করছি, এ-অসম্মান রবীন্দ্রনাথের একার প্রতি নয়, বরং সমস্ত ভারতীয় ভাষাভাষী শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি অসম্মান, বাংলা যার মধ্যে অন্যতম ভাষা।”

ওই পোস্টেই শ্রীজাতর হুঁশিয়ারি, “‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’এর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিও জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে উল্লিখিত পর্বের ওই অংশটি পুনর্সম্পাদনা করবার দাবিও থাকল। ছেড়ে দিলে দেওয়াই যায়, কিন্তু কতদিন এবং কতদূর ছাড়ব, সেটা ভাবা দরকার। আমি সাতদিন সময়সীমা ধার্য করলাম, বিনীতভাবেই। আর হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবির সঙ্গে পরামর্শ করেই এই পোস্ট লিখছি, এটাও জানিয়ে গেলাম। আজ থেকে এক সপ্তাহ, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর, ২০২৪-এর মধ্যে আমার দাবিগুলি গৃহীত, বিবেচিত এবং পূর্ণ না-হলে আমি আইনের পথে হাঁটব। বাংলা ভাষার একজন শব্দশ্রমিক হিসেবেই হাঁটব।”

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement