‘ফেলু বক্সী’র শুটিংয়ের জন্য সম্প্রতি কলকাতায় আসেন পরীমণি। শুটিংয়ের মাঝেই দেন একান্ত সাক্ষাৎকার। সিনেমা থেকে ব্যক্তিগত জীবন, সব নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশে নায়িকা। প্রেমে কি তাঁর বিশ্বাস আছে? জানালেন শম্পালী মৌলিককে।
কলকাতায় এসে প্রথমবার কাজ করছেন তো সিনেমার জন্য?
না, প্রথম কাজ না এটা। এর আগে দুটো সিনেমা করেছি যৌথ প্রযোজনার। একটা ‘রক্ত’ আরেকটা ‘স্বপ্নজাল’। তখন শুটিংয়ে ১২-১৪ দিন করে থাকতে হয়েছে কলকাতায়। অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয়, জানাশোনা হয়েছিল তখন। এখনও তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়।
তবে শুধুমাত্র ভারতের ছবিতে (ফেলু বক্সী) প্রথমবার তো?
হ্যাঁ, প্রথম (হাসি)।
‘ফেলু বক্সী’ ছবিতে আপনার চরিত্রের নাম ‘লাবণ্য’। যতদূর জানি আপনি সোহম চক্রবর্তীর স্ত্রীর চরিত্রে?
না, এটা তো একদমই বলা যাবে না (হাসি)। শুধু বলতে পারি চরিত্রের নাম ‘লাবণ্য’। এটুকুই পারমিশন আছে। থাকলেও বলতাম না। কারণ, এরকম ক্যারেক্টার আমি কখনও করিনি। ভাবিওনি কখনও যে এরকম চরিত্র করব। নিজেই এই চরিত্রটা স্ক্রিনে দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। এটা আমার জন্য খুব স্পেশাল হয়ে থাকল।
‘ফেলু বক্সী’-তে প্রথমবার সোহম চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করছেন। যিনি এখানে খুব জনপ্রিয়।
ওখানেও খুব জনপ্রিয়। যখন খবর হতে শুরু করে, আমি একটা ছবিতে কাজ করছি, তার থেকে বেশি সোহমদার সঙ্গে কাজ করছি এই ব্যাপারটা ঘিরে আলোচনা ছিল। ওঁর অনেক ভক্ত বাংলাদেশে। আমার মনে হয় দুটো বিষয় মিলে বড় কিছু হবে।
এবং মধুমিতাও রয়েছেন এই ছবিতে।
হ্যাঁ, ওখানে উনি এত বেশি জনপ্রিয় কী বলব। ওঁকে বেশি চেনে ‘পাখি’ নামে, এত জনপ্রিয় ওঁর ওই চরিত্রটা।
কেমন লাগছে এখানে কাজ করতে?
প্রথম ধারণা ছিল যে এখানকার কাজগুলো খুব গোছানো হয়। সেটাই হচ্ছে। প্যাক আপ টাইমটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের মতো আর্টিস্টদের জন্য। সেটা পারফেক্টলি মেনটেন হচ্ছে। আমার তো একটাই চিন্তা ছিল বাবুকে (ছেলে) নিয়ে।
মানে পদ্মকে নিয়ে?
আপনারাও তাই বলেন! আমি তো ওকে আদর করে পদ্মফুল বলি।
ভালো নাম কি ‘রাজ্য’ তাহলে?
বাবুর একজন ডাক্তার আছেন, ‘রাজ্য এসেছে’ বলে অদ্ভুতভাবে ডাকেন। কিন্তু আমি ওটা চাই না, বলেছিলাম। আমার এক কাজিনের বাচ্চার নামও ‘রাজ্য’। বাসায় বাবুকে কেউ রাজ্য বলে ডাকেও না। ইন্টারভিউতে আমরা আসলে অনেকবার বলেছিলাম, ছেলে হলে আমরা নাম রাখব শাহিম মহম্মদ রাজ্য। ওখান থেকেই সবার মাথায় রয়ে গেছে। কিন্তু নানুভাই ওকে একটা নাম দিয়েছিল, ‘পুণ্য’। এটা আমি অনেক পরে জানতে পারি নানুর কাছ থেকে। ওর বয়স যখন এক বছর, তখন আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। মানে তখন সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু কাগজে-কলমে ডিভোর্স হয়নি তখনও। সেই সময় নানুভাই ওর আরেকটা নামের কথা বলেছিল। আমি বলেছিলাম, তুমি কেন বলোনি এতদিন? বলল, “না, মা যে নামটা দেয় সেটাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তাই বলিনি। যেহেতু তুমি ওকে রাজ্য বলে ডাকছ না আর, বাসায়-ও কেউ ডাকছে না, নিকনেম নিয়ে তুমি চিন্তা করছ কী দেবে। আমি একটা দিই?” আমি বলি, ‘হ্যাঁ বলো’। তখন ‘পুণ্য’ নামটা দেয়। বাবুর কাগজে কলমে নামটা থাকবে এই রকম শাহিম মহম্মদ পুণ্য। আর ‘পদ্মফুল’ আমি ওকে আদর করেই ডাকি। যখন জন্মায়, ডাক্তার যখন ওর মুখটা আমার চোখের সামনে নিয়ে আসে, এত পিঙ্কিশ একটা ভাব ছিল চেহারায়, মনে হচ্ছিল যেন পদ্মফুল ফুটে আছে।
নানুভাই তো আপনার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে। পুরোটাই। যতদূর জানি মা-বাবাকে অনেক ছোটবেলায় হারিয়েছেন আপনি। সেইখান থেকে আপনার অনেক স্ট্রাগল। ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
আমি এখনও মাঝে মাঝে ভুলে যাই, নানু নেই। এখনও ইউজড টু হতে পারিনি যে নানু নেই। এই শব্দটার সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ঠিকমতো হয়নি। এখনও মনে হয়, ইদের শপিংটা নানুভাইকে দিয়ে শুরু করব। অনেক সময় নানুভাইয়ের ফোন নাম্বার ডায়াল করে ফেলি যে, কী করছে এখন। ঘরে তো আমি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছি। যখন কাজে যেতাম দেখতাম যে, নানুভাই ঠিক আছে কি না। কী করছে? ঘুমাচ্ছে না খাচ্ছে? এইটা এখনও করে ফেলি।পরক্ষণেই মনে হয় নানু তো নেই!
কাজের জগতে আপনার যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে। তেমন কাজের থেকেও বেশি ব্যক্তিগত জীবনের কারণে আপনি বারবার মানুষের চর্চায় এসেছেন। সেটা কীভাবে দেখেন?
আমি নেগেটিভ কোনও কিছু আসলে দেখতে চাই না। যদি ফেস করি, অ্যাভয়েড করতে চেষ্টা করি। নেগেটিভিটি আমার জন্য এই মুহূর্তে খুব ক্ষতিকর। কারণ, এত ছোট একটা জীবনকে (ছেলে) আমার পরিচালনা করতে হয়, তো ধীরস্থির না থাকলে আমি তো ওটা সুন্দর করে সামলাতে পারব না। সমস্ত নেগেটিভিটি জীবন থেকে সাইড করে দিয়েছি।
ফেসবুক-এ আপনার ১৬ মিলিয়ন ফলোয়ার। কী করে সম্ভব করলেন?
আমি অনেক বড় একটা সংখ্যা দেখতে চাই (হাসি)। আমার আশেপাশে যারা আছে বা দর্শক বলে যে, আরেকটু যদি সিরিয়াস হয়ে কাজ করতে, মনে হয় আরও সুন্দর একটা কেরিয়ার থাকত। সেটা আমিও এখন ফিল করি। আমি আসলে সিরিয়াস ছিলাম না। দারুণ দারুণ চরিত্র পেয়েও, সেভাবে টেক কেয়ার করতে পারিনি। অনেক হেঁয়ালিপনা ছিল আমার মধ্যে। এখন যে ভাবে আমি সিরিয়াস হয়ে কাজটা দেখি, সেটা ভালো আসলে। সময়োপযোগী। এখন যতটুকুই করি প্রপারলি করার চেষ্টা করি।
তাহলে কি আরও একটু বেশি ছবিতে, সিরিজে আপনাকে পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, ডেফিনিটলি। এখন বাবুকে নিয়ে একটু ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। ও তো কথা বলতে খুব চেষ্টা করে। ও কী বলতে চায়, সেটা আমি যতটা বুঝতে পারব, অন্য কেউ বুঝবে না। তখন ও খামখেয়ালিপনা শেখে, জিদ করা শেখে, সেটা তো আমাদেরও হয়। একজন মানুষকে কথা বোঝাতে না পারলে, আমরা তো ধৈর্যহারা হয়ে পড়ি। তো আমি চাই ওকে আরেকটু টেক কেয়ার করতে।
মা হিসেবে যতটা সম্ভব আগলে থাকতে চান বুঝতে পারছি। তাতে যদি কাজ একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়…
দুবছর তো অলরেডি চলেই গেল। আমার মনে হয়, মানুষ আমাকে যেভাবে পুশ করে যে কাজে ফেরো, তোমাকে দেখতে চাই, এটা আমার জন্য খুব হেল্পফুল এই মুহূর্তে।
আপনার প্রথম ছবি ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ এই কথাটায় আজও বিশ্বাস করেন?
(হাসি) হ্যাঁ করি। কীভাবে, বলছি। আমার প্রথম পরিচালক যখন বলেছিল, সিনেমার নামে কিন্তু অনেক কিছু হয়। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কীরকম? পরিচালক বলে, যে ‘জিম্মি’ বা ‘তোকে দেখে নেব’ একটা সিনেমার নাম, এরকম অদ্ভুত নামও হয়। আর এই সিনেমার নাম এইটা। দেখবি, তুই খুব ভালোবাসায় থাকবি। সেটাই দেখলাম। প্রথম ছবিটা যতটা না ক্লিক করল, তার থেকে বেশি ‘পরীমণি’ নামটাকে মানুষ আগলে রাখতে শুরু করল। ভালোবাসা পাওয়া শুরু করলাম। হয়তো আমার ছবিগুলো সুপার ডুপার হিট হয়নি। নামটা কীভাবে যেন সুপার ডুপার হিট হয়ে গেল। (হাসি)
পরী তো আপনি বুঝলাম, পরী মণি নামের নেপথ্য কাহিনি কী?
হ্যাঁ, ‘মণি’-টা কখনওই আমার রাখা নাম না, ওটা আদর করতে করতে হয়ে গেছে। যেমন ‘পদ্মফুল’। সবাই বলে না, সোনামণি, জাদুমণি, নয়নমণি– সেরমই ‘পরি মণি’ এস্ট্যাবলিশড হয়ে গেছে।
পদ্মকে নিয়ে শুটিংয়ে আসেন, কীভাবে ম্যানেজ করেন?
ও খুবই ম্যানেজেবল পার্সন আসলে (হাসি) সুন্দর করে বুঝে যায়।
একজন মহিলা হিসেবে অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তা সত্ত্বেও খুব স্ট্রং আপনি। ভাঙা সম্পর্ক হলেও, আপনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এই জোরটা কোথা থেকে পান?
সময়, হয়তো। আমি নিজে তো কোনও কিছু চেয়ে আনিনি, তখন মনে হয়, এটা যখন হয়ে গিয়েছে, তারপরে কী হয় তার জন্য অপেক্ষা করি।
এখনও প্রেমে বিশ্বাস আছে?
না, আগে ক্যামেরার সামনেই বলতাম, প্রেম খুব ভালো জিনিস, প্রেমে থাকা উচিত, মানুষ প্রেমে সুন্দর থাকে। এখন মনে হয় খুব ইমম্যাচিওর কথাটা ছিল।
পরীমণির যদি প্রেমে বিশ্বাস না থাকে, কত হৃদয় ভেঙে যাবে বুঝতে পারছেন?
ভাঙুক, আমার কিছু করার নেই (হাসি)। আমার প্রেম এখন লক হয়ে গেছে পুণ্যের ওপর। আমার প্রেম এখন আমার ছেলে। ওর খাবার বানানো, ডায়পার চেঞ্জ করা, সব কিছুই আমার কাছে প্রেম মনে হয়।
কেরিয়ারের পিক সময়ে, ২০২১ সালে খুব খারাপ সময় গিয়েছে আপনার। ২৬ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছিল। আজকে ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
২৭ দিন। এখন আমি যে জন্য গেলাম, একটা তো প্রমাণ হল। আমি বুঝিনি, যে ভাবে ঘটা করে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে নিউজ হল, পরীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু কেসটা যে ডিসমিস হয়ে গেল, আমি যে উইন করলাম, সেটা কিন্তু ফলাওভাবে দেখিনি, আমার চোখে পড়েনি। আমি জানি না কেন। যখন উইন করলাম সবাই চুপচাপ, কানে কানে বলে।
ওই ২৭টা দিন নথিবদ্ধ করে রাখতে ইচ্ছে করে?
করেছি। বাবুর জন্য লিখে রেখেছি। বড় হয়ে দেখবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.