সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেইন্ট অ্যান্ড মিলারের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিল শ্যাম। মাঝরাতে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় লিখে ফেলেছিল ইস্তফাপত্র। আর একটি চিঠি শ্যাম লিখেছিল মাকে, ‘চাকরি গিয়াছে। আমার উপর আর খুব ভরসা করিও না।’ তার পর? তার পর তো গোটা একটা জীবন। আর একাকীত্ব। তার ভিতর দিয়ে জীবনের আলো-আঁধারি রহস্যকে চিনতে শেখা? আধুনিক জীবনের চূড়ান্ত কোলাহলেও নিঃসঙ্গতার নির্বাসন। আসলে যেন আত্মবিষে মগ্ন জীবন থেকে এক অন্যতর পথে হেঁটে যাওয়া। বহু দশক আগে মানুষের জীবনের এই অমোঘ ‘ঘুণপোকা’র আখ্যান নিজের লেখা শব্দে তিলে তিলে নির্মাণ করেছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সেই গল্পই এবার সেলুলয়েডে আসতে চলেছে পরিচালক পলাশ দের হাত ধরে।
ছয়ের দশকের দেশ পত্রিকার পুজোসংখ্যা। সেই সময় অভিজ্ঞ লেখকদের লেখাই পুজোসংখ্যায় প্রাধান্য পেত। অন্তত উপন্যাসে তাঁদেরই একাধিপত্য। কিন্তু সম্পাদক সাগরময় ঘোষ পরিবর্তন আনলেন পর পর দুই বছর তরুণ অথচ প্রবল সম্ভাবনাময় সাহিত্যিককে সুযোগ দিয়ে। প্রথমে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আত্মপ্রকাশ’। তার পর শীর্ষেন্দুর ‘ঘুণপোকা’। আধুনিক মানুষের একাকিত্বের অসামান্য ভাষ্য গড়েছিলেন শীর্ষেন্দু। যদিও তাৎক্ষণিক ভাবে মননশীল পাঠক ছাড়া সেভাবে স্বীকৃতি পায়নি এই উপন্যাস। কিন্তু যত সময় গিয়েছে, ততই পাঠকের হৃদয় উপলব্ধি করেছে এর অন্তর্নিহিত শক্তিকে। বর্তমান সময়ের চালচিত্রেও এই কাহিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফাঁদে পা দেওয়া নিঃসঙ্গ বাঙালি যুবকদের প্রতিনিধিত্ব করে।
পরিচালক পলাশ দে এর আগে ‘তরঙ্গ’, ‘অসুখওয়ালা’র মতো সিনেমা তৈরি করেছেন। অরোরা ফিল্মস প্রযোজিত ‘ওস্তাদ’ সিনেমাও তাঁর তৈরি। ‘ঘুণপোকা’র স্বত্ব পরিচালক কিনেছেন গতবছর সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি বলেন, “যবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছি, পড়তে শুরু করেছি, তখন থেকেই ‘ঘুণপোকা’ আমার অন্যতম পছন্দের একটা গল্প। তা নিয়ে সিনেমা তৈরি করব ঠিক করে রেখেছিলাম। প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে।”
তাহলে শুটিং কবে থেকে শুরু হচ্ছে? পলাশ জানালেন, এখনও প্রযোজক নিশ্চিত হয়নি। হ্যাঁ, কয়েকজনের সঙ্গে পরিচালকের কথা ইতিমধ্যেই হয়েছে। তবে ফাইনাল কিছু হয়নি। ঠিকঠাক প্রযোজক পেয়ে গেলেই বাকি কাজও নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে যাবে। শ্যামের চরিত্রে কাকে ভেবেছেন? পলাশ জানান, টলিউডের নামী অভিনেতার সঙ্গেই তাঁর কথা হয়েছে। তবে প্রযোজনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রকাশ করতে চান না। প্রসঙ্গত, ‘হীরের আংটি’, ‘কাগজের বউ’ থেকে গোয়েন্দা শবর, শীর্ষেন্দুর একাধিক কাহিনি সিনেমার পর্দায় দেখা গিয়েছে। তবে ‘ঘুণপোকা’ নিয়ে বাঙালি পাঠকদের বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে। ছোটগল্পে প্রসিদ্ধি লাভের পর এই নাতিদীর্ঘ উপন্যাসের মধ্যে দিয়েই শীর্ষেন্দু ঘোষণা করেছিলেন তাঁর আগমনের বিজয়ধ্বনি, যা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল সেই আখ্যান রুপোলি পর্দায় কীভাবে ফুটে ওঠে তা জানতে এখন থেকেই যে বাঙালি দর্শকরা অপেক্ষা করতে শুরু করলেন তা বলাই বাহুল্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.