Advertisement
Advertisement
Anirban Chakrabarti On Santosh Dutta

‘জটায়ু’র জন্য সন্তোষ দত্তর পরের সারিতে আমার নাম থাকবে, এটা গর্বের: অনির্বাণ

জটায়ুর জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জটায়ুর।

Anirban Chakrabarti remembering 'Jatayu' Santosh Dutta
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:December 2, 2024 2:12 pm
  • Updated:December 2, 2024 6:41 pm  

অনির্বাণ চক্রবর্তী: লোকে বলে আমার চেহারার সঙ্গে সন্তোষ দত্তের (Santosh Dutta) অনেক মিল। ভীষণই কাকতালীয় বিষয়। আমি রসিকতা করে বলি, ঈশ্বরপ্রদত্ত। আমার কোনও হাত নেই! আসলে সত্যজিৎ রায় ইলাস্ট্রেশন পরিবর্তন করে সন্তোষবাবুর আদলে জটায়ুকে আঁকেন। ‘একেনবাবু’ দেখে আমার সঙ্গে তার সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। এক, টাক। দুই গোঁফ… এই দুইয়েই হয়তো ‘গুলিয়ে গন্ডগোল’ হয়! তবে আমার মনে হয়, আমার মুখের গড়নটা ওঁর থেকে বেশি গোল। আজ জটায়ুর ‘পূর্বসূরী’ সন্তোষ দত্তের জন্মশতবার্ষিকী। প্রথমেই আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই।

ওঁর কথা লিখতে বসে শৈশবে উঁকি দিলাম। মানে এক গুণমুগ্ধ দর্শকের সঙ্গে কিংবদন্তী জটায়ুর আলাপচারিতা কীভাবে হল? সেটা বলি। একদম ছোটবেলায় আমি যখন বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করি, তখন যে কটি চরিত্র আমার মনে ধরেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ‘জটায়ু’। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, আমাদের প্রজন্মের বাঙালিদের কাছে সন্তোষ দত্তের ‘জটায়ু’র চরিত্রটা দারুণ প্রিয় হয়ে গিয়েছিল। ওই একেবারে শৈশবে পাওয়া আমাদের বয়সে বড় বন্ধুর মতো আর কী! প্রধান কারণই হল সন্তোষবাবুর অভিনয়। এত জীবন্ত, এত মজার প্রোর্ট্রায়াল, খুব কমই দেখা যায়। সত্যজিৎ রায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত জটায়ুকে উনি যেভাবে চিত্রায়িত করেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঙালিদের মনে সেই ছবি ফ্রেমবন্দি হয়ে থাকবে। সামনে পাওয়ার সৌভাগ্য না হলেও দর্শক হিসেবে খুব ছোটবেলাতেই ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। দর্শক-অভিনেতার সেই পরিচয়ে সন্তোষ দত্তর ‘জটায়ু’ আমার কাছে চিরন্তন। তবে লালমোহনবাবুর চরিত্রের বাইরেও নিজেকে ভেঙেচুরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছবিতে তিনি ধরা দিয়েছেন।

Advertisement
‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে সন্তোষ দত্ত

মাণিকবাবুর বহু সিনেমায় তাঁর অভিনীত চরিত্রের কথা মনে পড়ছে। যেগুলোর মধ্যে লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ত্বকের’ বাইরে আমরা তাঁকে অন্যভাবে পেয়েছি। যেমন- ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। আরেকটু যখন বড় হলাম। বুঝতে শিখলাম। অভিনয় সম্পর্কে একটু জ্ঞানের পরিধিটা একটু বাড়ল। তখন সন্তোষ দত্তের অভিনয়কে আলাদা আঙ্গিকেও আবিষ্কার করলাম ‘হারমোনিয়াম’, ‘তিন কন্যা’, ‘সমাপ্তি’র মতো ছবিগুলো। যে চরিত্রগুলো উনি লালমোহনবাবু বা জটায়ুর মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়তে দেননি। ততটাই দৃঢ় এবং বলিষ্ঠ তাঁর অভিনীত সেসব চরিত্রগুলোও। একেবারে অন্যধরণের চমৎকার অভিনয়। কে জানত, অদৃষ্ট যে তখনই ঠিক করে রেখেছিল, শৈশবের সেই বড় বয়সের বন্ধুর ভূমিকায় আমিই একদিন অভিনয় করার সুযোগ পাব?

শুনেছি, সন্তোষবাবু নাকি ব্যক্তিগতজীবনে একেবারে অন্যধরণের মানুষ ছিলেন। পেশায় আইনজীবী। রাসভারী একটা মানুষ। পর্দায় যেভাবে দর্শক তাঁকে দেখেছেন, মূলত কমেডি চরিত্রে, তার থেকে আলাদা। তবে চেহারায় গাম্ভীর্য বজায় রাখলেও মানুষকে বেশ আপন করে নিতে জানতেন। অভিনেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলেও দর্শকদের মনে একটাই চরিত্র গেঁথে যায়। অভিনেতার শিল্পীসত্ত্বাকে সারাজীবন ধরে সেই চরিত্র বয়ে বেড়াতে হয়। দীর্ঘ কয়েক দশকে অনেক ‘জটায়ু’ এসেছেন বিভিন্ন পরিচালকদের হাত ধরে। আমি নিজেও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা’ সিরিজে জটায়ুর ভূমিকায় অভিনয় করেছি। কিন্তু বাঙালিকে আজও জটায়ু বললেই তাঁরা সন্তোষ দত্তের সমার্থক হিসেবে দেখেন। উনি যে কত বড় মাপের অভিনেতা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বা মাপকাঠিতে বিচার করার সেই ধৃষ্টতাও আমার নেই। ওঁর অভিনয়সত্ত্বার প্রমাণ ‘জটায়ু’ ছাড়াও ওঁর অভিনীত অন্যান্য চরিত্রগুলো।

‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে সন্তোষ দত্ত

একটা মজার অভিজ্ঞতা বলি। লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকায় আমাকে যখন সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) কাস্ট করেছিলেন, ভীষণ আনন্দিত বোধ করেছি। প্রথমত, আইকনিক একটা চরিত্র। সন্তোষ দত্তের জুতোয় পা গলানো। এবং দ্বিতীয়ত, বাঙালিদের মনের কাছের একটা চরিত্র। তবে শুধু যে আনন্দ হয়েছিল এমনটা নয়, একটু বুক ঢিপ ঢিপও করেছিল বটে! সন্তোষবাবুর আইকনিক লেভেলের একটা চরিত্রের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারব কিনা ভেবে! একথা অস্বীকার করা যায় না যে, ওঁর পরেও জটায়ুর ভূমিকায় আমরা অনেক বড়মাপের অভিনেতাদের দেখেছি। রবি ঘোষ, অনুপ কুমার, মোহন আগাসে, বিভূ ভট্টাচার্য… তবে আমাদের সকলের মনেই কিন্তু সন্তোষ দত্তর ‘জটায়ু’ আজও ফ্রেমবন্দি। এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। আমি যখন লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি, ওঁকে নকল করার কোনও চেষ্টা করিনি। কারণ ওঁর স্টাইলে জটায়ুকে তুলে ধরতে পারতাম না। ব্যর্থ প্রচেষ্টা হত। তাই নিজের মতো করে চেষ্টা করেছি। সেটা দর্শকদের ভালো-খারাপ যেটাই লেগে থাকুক না কেন, আমার পাওনা হল ‘জটায়ু’র জন্য সন্তোষ দত্তর পরে কোনও একটা সারিতে অনির্বাণ চক্রবর্তী নামটাও লেখা থাকবে। এটা আমার কাছে গর্বের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement