ফাইল ছবি।
রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: নাবালিকা বিয়ে রুখতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় চাইল্ড হেল্পলাইন সার্ভিসে কর্মী নিয়োগ করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। নবনিযুক্ত কর্মীরা পুলিশ, ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মধ্যে সমন্বয় রক্ষার কাজ করবেন। কয়েকদিন আগে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। চারটি বিভাগে শূন্যপদের সংখ্যা আট। কিন্তু ওই আটটি পদে প্রায় ১১০০ আবেদন জমা পড়েছে বলে খবর। ডিস্ট্রিক্ট লেভেল সিলেকশন কমিটির মিটিংয়ে ওই কর্মী নিয়োগের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা নেওয়া হবে। জেলা শিশুসুরক্ষা ইউনিট নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে।
জানা গিয়েছে, চাইল্ড হেল্পলাইন সার্ভিসে (Child Helpline Services) প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, একজন কাউন্সিলর, তিনজন চাইল্ড হেল্পলাইন সুপারভাইজার এবং তিনজন কেস ওয়ার্কার নিয়োগ করা হবে। প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর প্রতি মাসে ৩৫ হাজার হাজার টাকা সাম্মানিক (Honourium) পাবেন। কাউন্সিলর এবং চাইল্ড হেল্পলাইন সুপারভাইজার প্রতি মাসে ১৮ হাজার ৫৩৬ টাকা করে পাবেন। কেস ওয়ার্কার পদের জন্য প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা সাম্মানিক দেওয়া হবে। চাইল্ড হেল্পলাইন সুপারভাইজার পদে তিনজন এবং কেস ওয়ার্কার পদে তিনজন নিয়োগ হবে। বাকি দুটি পদে একজন করে নিয়োগ করা হবে।
পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলায় নাবালিকা বিয়ে ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যের শীর্ষে রয়েছে। ১০ আগস্ট জেলাশাসক অফিসে চাইল্ড ম্যারেজ নিয়ে সেমিনার হয়। রাজ্য শিশুসুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাসের উপস্থিতিতে ওই কর্মশালায় নাবালিকা পালানোর তথ্য দেখে হতবাক হন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। এই জেলায় ২০২৩ সালে বাড়ি থেকে পালানো এবং বিয়ে করা ১১০৩ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০২৪ সালে এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা ৬২৬। শুধুমাত্র নথিভুক্ত ঘটনা থেকে এই উদ্ধারের (Rescue) ঘটনা ঘটেছে। নথিভুক্ত না হওয়া ঘটনার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ক্রমাগত নাবালিকা বিয়ে এবং পালানোর ঘটনা রুখতে ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ স্কুলে স্কুলে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কর্মসূচি চালু করেছে। পুলিশ অফিসাররা স্কুলে গিয়ে বয়ঃসন্ধিকালীন ছাত্রীদের নিয়ে সেমিনার করছেন। ১৮ বছরের আগে বিয়ের কুফল সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে ছাত্রীদের। শুধু তাই নয়, বয়ঃসন্ধিকালীন ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা জানতে স্কুলে স্কুলে ‘মনের কথা’ বাক্স বসানো হচ্ছে।
মনের কথা প্রকাশ্যে জানাতে কিংবা শেয়ার করতে অসুবিধা হলে চিরকুটে লিখে বাক্সে জমা করতে পারবে। পুলিশ সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর পাশে দাঁড়াবে। কোথাও নাবালিকা বিয়ের (Child Marriage) খবর জোগাড় করা, ওই কাজ রুখতে এলাকায় যাওয়া সহ নানাভাবে নিযুক্ত করা হবে নতুন নিযুক্ত কর্মীদের। এই জেলায় নাবালিকা বিয়ে আটকানোর জন্য ইউনিসেফ (UNICEF) কাজ করছে। পুলিশ ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করছে। তারপরও গোটা রাজ্যে নাবালিকা বিয়েতে সবার শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর। সচেতনতায় জোর দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.