Advertisement
Advertisement
Narendrapur Ramkrishna Mission

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে বোর্ড-জয়েন্ট-নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেয় পড়ুয়ারা?

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে চোখধাঁধানো রেজাল্ট করেছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন।

How students of Narendrapur Ramkrishna Mission prepare for JEE NEET

ফাইল ছবি

Published by: Sayani Sen
  • Posted:May 16, 2024 5:06 pm
  • Updated:May 16, 2024 5:06 pm

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে বোর্ড-জয়েন্ট-নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেয় পড়ুয়ারা? সাফল্যের মন্ত্র শেয়ার করলেন বাংলার সেরা ছাত্রদের আঁতুড়ঘরের প্রধানশিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দজি। শুনলেন পৌষালী দে কুণ্ডু।

গত কয়েক দশকের মাধ‌্যমিক, উচ্চমাধ‌্যমিক, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার মেধাতালিকা দেখলেই বোঝা যায়, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন তাদের মান ও স্থান ধারাবাহিকভাবে ধরে রেখেছে। আবাসিক এই স্কুল-আশ্রমের পড়ুয়ারা কীভাবে পড়াশোনা করে বা কী এমন অভ‌্যাস করে যা তাদের অন‌্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে আলাদা করে তোলে? এবারও মাধ‌্যমিক ও উচ্চমাধ‌্যমিকে চোখধাঁধানো রেজাল্ট করেছে এখানকার ছাত্ররা। সেই সব কৃতীদের তৈরি করার পিছনে রয়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের স‌্যর, মহারাজদের অব‌্যর্থ টিপস। বছরের পর বছর তাঁদের ঠিক করে দেওয়া স্ট্র‌্যাটেজি অনুসরণ করেই সাফল্যের মুখ দেখে পরীক্ষার্থীরা।

Advertisement

এই শিক্ষাপীঠে কোন মন্ত্রবলে সবাই পড়াশোনা করে? বাংলার বাকি ছেলেমেয়েরাও তা জানুক। অনুপ্রাণিত হোক। বিশেষ করে এবার যারা বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হল, যারা জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষায় বসবে তারা কী করে টাইম ম‌্যানেজমেন্টের পাশাপাশি বোর্ড ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রিপারেশন নেবে? প্রশ্ন শুনে বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে‌ মিশনের পড়াশোনার কৌশল শেয়ার করলেন বাংলার সেরা ছাত্রদের আঁতুড়ঘর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধানশিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দজি।

বোর্ড ও জাতীয় স্তরের পরীক্ষার মধ্যে সংযোগ রেখে পড়াশোনা
পশ্চিমবঙ্গের রাজ‌্য জয়েন্ট, নিট, জেইই মেন বা জেইই অ‌্যাডভান্সের সিলেবাসের সঙ্গে বিভিন্ন বোর্ডের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসের খুব বেশি পার্থক‌্য নেই। পার্থক‌্য আছে প্রশ্নপত্রের ধরনে। জয়েন্ট, নিট পরীক্ষায় সব এমসিকিউ প্রশ্ন। কাউন্সিলের পরীক্ষায় এমসিকিউ, এসএকিউ, ডিকিউ থাকে। তাই সবাইকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি চ‌্যাপ্টার পড়তে হবে। আমাদের এখানে মাস্টারমশাইদের একটি গ্রুপ ছাত্রদের মূলত শুধু বোর্ড পরীক্ষার জন‌্য তৈরি করেন। আরও একটি গ্রুপের স‌্যর সকাল-সন্ধে বিদ‌্যালয়ে এসে জয়েন্ট বা নিটের জন‌্য প্রস্তুত করান।

নিটের জন‌্য
যারা নিট দিতে চাও তারা বায়োলজির উপর গুরুত্ব দাও। খুঁটিয়ে পড়ো এনসিইআরটির বই। এই বই ভালো করে পড়লে নিটে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। এর সঙ্গে আগের কয়েক বছরের নিটের প্রশ্নপত্র সলভ করো।

[আরও পড়ুন: শুধু ডিগ্রি পেলেই হবে না, কেন পড়ুয়াদের দেশ-দশের খবর রাখাও প্রয়োজন? জানালেন বিশেষজ্ঞ]

 

জয়েন্টের ক্ষেত্রে
জয়েন্টের প্রস্তুতির জন‌্য বাজারে বিভিন্ন লেখক, পাবলিশার্সের ভালো ভালো বই রয়েছে। সেগুলি মন দিয়ে পড়ার পাশাপাশি প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি চ‌্যাপ্টারভিত্তিক নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়া। প্রতি সপ্তাহে বা কিছুদিন অন্তর একটা করে চ‌্যাপ্টার শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই চ‌্যাপ্টারের উপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই তখন ছাত্রদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হয়। একাদশের শুরু থেকেই চ‌্যাপ্টার ভিত্তিক পরীক্ষা দিতে হবে। ধরা যাক, লাইটের চ‌্যাপ্টার পড়া শেষ হয়েছে। তখনই এই চ‌্যাপ্টার থেকে যতরকমের প্রশ্ন আসে তা সলভ করো। একাদশ শ্রেণিতে একদম ফাঁকি নয়। প্রথম দিন থেকে সিরিয়াস থাকো। মাধ‌্যমিক শেষ ছমাস পড়ে ভালো রেজাল্ট করা যায়। উচ্চমাধ‌্যমিকে সেটা সম্ভব নয়। দ্বাদশে পড়ার সময় ছোট ছোট পরীক্ষার মাধ‌্যমে একাদশের চ‌্যাপ্টারগুলি ঝালিয়ে নিতে হবে।

সিলেবাস শেষ কখন
দ্বাদশের সিলেবাস অনেক আগে শেষ করে রিভিশন ও জয়েন্টের প্রস্তুতি নিলেই বাড়তি সুবিধা হবে, এমন মনে করি না। অবশ‌্যই কনসেপ্ট ক্লিয়ারের ক্ষেত্রে একটু সুবিধা মেলে। তবে আমাদের সিলেবাস যে সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলে হয়েছে তা ফলো করলেই যথেষ্ট।

ওএমআর শিটে প্র‌্যাকটিস
নিট পরীক্ষা ওএমআর শিটে দিতে হয়। সঠিক উত্তরের জন‌্য নির্ধারিত গোল করা স্থান কালো করে ভরাট করে দিতে হয়। ওএমআর শিট ব‌্যবহার করাটাও দীর্ঘদিন অভ‌্যাস করা জরুরি। তা না হলে পরীক্ষার সময় দেরি হয়ে যাবে।

প্ল‌্যানিং ও টাইম ম‌্যানেজমেন্ট
রোজ শুধু নিজে পড়ার জন‌্য ছঘণ্টা সময় বের করো। তার বাইরে স্কুল-কোচিংয়ে গিয়ে পড়া থাকবে। কোন বিষয়ের জন‌্য কখন কতটা সময় দেবে তা নিজেকেই ঠিক করতে হবে। ছোট ছোট করে প্ল‌্যানিং করো। প্রথমে এক সপ্তাহের রুটিন বানাও। তারপর দেখো, ওই রুটিন মেনে কতটা পড়া সম্পূর্ণ হল। সবার এক টাইমটেবিল হয় না। নিজেকেই নিজের পড়ার অবস্থা বুঝে রুটিন ও টাইমটেবিল তৈরি করতে হবে। যে সময় তোমার পড়ায় মন বসে সেই সময়টাই পড়ো। একদিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পড়ব, একদিন গেম খেলে কাটাব, ঘুরতে যাব- করলে হবে না। জীবনে এই দুটো বছর নিজেকে শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখতে হবে। দিনে এতক্ষণ বোর্ডের পড়া পড়বে বা এতক্ষণ নিট-জয়েন্টের জন‌্য পড়বে-তা কিন্তু হয় না। সময় ভাগ করে এভাবে পড়া যায় না। বোর্ড পরীক্ষার আগে শুধু বোর্ডের সিলেবাস পড়ো, পুরনো প্রশ্ন সলভ করো। জয়েন্ট-নিটের আগে শুধু তার প‌্যাটার্ন ধরে প্র‌্যাকটিস করে স‌্যরকে দেখিয়ে নাও। সারা বছরের কোন মাসে কোন চ‌্যাপ্টার শেষ করবে তার প্ল‌্যানিং করতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে। প্ল‌্যানিংয়ের অভাব থাকলে সাফল‌্য আসা কঠিন। স‌্যর যে বিষয়ে পরেরদিন পড়াবেন তা আগেরদিন একটু নিজে পড়ে প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে তবে ক্লাসে যাও। এতে বুঝতে সুবিধা হবে।

ভিডিও লেকচার শোনার অভ‌্যাস কমাও
করোনা পরবর্তী সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা স‌্যররা ব‌্যক্তিগতভাবে সাবস্ক্রিপশনের বিনিময়ে ভিডিয়ো লেকচার শেয়ার করেন। তা ল‌্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইলে যে কোনও সময় দেখে, বুঝে নেওয়া যায়। এর কিছু সুবিধা আছে। যেমন ক্লাসে স‌্যর যখন পড়ান তখন মন দিয়ে না শুনলে বা নোট নিতে মিস হলে পরে এই ধরনের ভিডিয়ো দেখে বুঝে নেওয়া যায়। ক্লাসের পড়ায় কনফিউশন থাকলে এবং তা কোনও স‌্যর বা বন্ধুরা মেটাতে না পারলে ভিডিও লেকচারে দেখাই যায়। কিংবা পরীক্ষা কাছে এসে গেলে শেষ মুহূর্তে দরকার পড়লে ভিডিয়ো দেখে নিলে ঠিক আছে। কিন্তু সমস‌্যা হল, দেখা যাচ্ছে স্টুডেন্টরা লাইভ ক্লাসে কম মনোযোগ দিচ্ছে। তারা ভাবছে, বিষয়টি পরে ভিডিওতে দেখে নেবে।

কিন্তু তা আর দেখছে না। এভাবে পড়া জমে জমে পাহাড়প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মকে প্রতিদিনের পড়াশোনায় ভিডিও লেকচারের নির্ভরতা কমাতে হবে। একইসঙ্গে মোবাইল ফোন, ভিডিও গেমস থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। সন্তান ভিডিও লেকচার শোনা বা অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার নাম করে সিনেমা দেখছে, ভিডিয়ো গেম খেলছে কি না সেদিকে নজর দিন বাবা-মায়েরা। আমাদের বিদ‌্যালয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব‌্যবহার ভবন শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া কেউ ব‌্যবহার করতে পারে না।

আবাসিক বিদ‌্যালয় হওয়ার কারণে একটু পিছিয়ে থাকা ছাত্ররা বাকি বন্ধুদের কাছ থেকে শিখে নেওয়ার সুবিধা এখানে পায়। কারও বুঝতে অসুবিধা হলে, প্রশ্ন থাকলে তা ক্লাসরুমের বাইরেও অনেকটা সময় নিয়ে বুঝিয়ে দেন এখানকার মাস্টারমশাইরা। তার বাইরেও কোনও প্রশ্নের উত্তর জানতে ছাত্ররা পরস্পরকে সাহায‌্য করে। এই গোটা পরিবেশ আমাদের ছেলেদের বোর্ড ও সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হতে এগিয়ে দেয়।

অবশ‌্যই যোগাভ‌্যাস বা ধ‌্যান করো
মনকে সুস্থির করা ভীষণ জরুরি। নিয়মিত যোগাভ‌্যাস বা ধ‌্যান প্র‌্যাকটিস করো। সকাল বা সন্ধ‌্যায় সময় না পেলে অন্তত রাতে ঘুমানোর আগে ১৫-২০ মিনিট ধ‌্যানাভ‌্যাস করো। এতে চট করে পড়ায় মন বসবে। যারা ধ‌্যান করার পদ্ধতি জানো না, তারা চোখ বন্ধ করে নিজের মনকে একটা বিন্দুতে নিবিষ্ট করার চেষ্টা করো। প্রথম প্রথম চোখ বন্ধ করলে মাথায় রাজ্যের চিন্তা কিলবিল করবে। সেটা স্বাভাবিক। তবু হাল না ছেড়ে মনকে যে কোনও এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা জারি রাখো

[আরও পড়ুন: আইটি ফার্মে কর্মী ছাঁটাই? চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সামলাতে এই কৌশল না জানলেই নয়]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement