বিভিন্ন শাখায় ছড়িয়ে সাইকোলজির বিস্তৃতি। চাকরির সুযোগ কোন ফিল্ডে? জানাচ্ছেন গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস কলেজের সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লীনা নায়ার সেনগুপ্ত। লিখছেন অনিন্দ্য সিংহ চৌধুরি।
স্কুল-কলেজে পড়ার চাপ তো আছে, কোর্স শেষে চাকরি পাওয়ার টেনশন। চাকরি পেলেও তা টিকিয়ে রাখার চিন্তা। আর কাজ যদি হঠাৎ চলে যায়, তাহলে অবসাদে ভোগার সম্ভাবনা। কেউ আবার, টাকা-খ্যাতি পেয়েও মনে শান্তি নেই। এখনকার দিনে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘মেন্টাল পিস’। আসলে, মনের গভীরে কী চলছে তা বোঝা সত্যি কঠিন। তাই সাম্প্রতিকালে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর আত্মহত্যা করার ‘খবর’ প্রায়ই শুনতে পাচ্ছি। ইট-কাঠ-পাথরের জগতে সকলেই কম-বেশি অবসাদে ভুগছি। তাই বর্তমান সময়ে মনস্তত্ত্ববিদ মানে সাইকোলজিস্টদের গুরুত্ব দারুণভাবে বেড়েছে। এটা তো মানতে হবে, বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মানুষের আচরণ বোঝার চেষ্টা করেন সাইকোলজিস্টরা।
স্কুল থেকে কলেজ কিংবা অনেক অফিসেই সাইকোলজিস্ট রাখার চল দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘কাউন্সিলর’:
সরকারি-বেসরকারি নার্সারি স্কুল থেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থা যাতে ‘ভাল’ থাকে, সেজন্য এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘কাউন্সিলর’ নিয়োগ করা হয়। এখন তো আইআইটিগুলিতে কাউন্সিলর থাকেই। মনে রাখা প্রয়োজন, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এখন তো সেনাবাহিনীতে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং কারাগারেও মনোবিদদের প্রয়োজন আছে। ক্রিকেট-ফুটবল থেকে এখন প্রায় প্রতিটি খেলায় সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হচ্ছে। ‘স্পোর্টস সাইকোলজি’ নিয়ে গবেষণা করছেন অনেকেই।
স্কুল-কলেজের শিক্ষক:
স্নাতক বা মাস্টার্সের পর নেট-সেট পাশ করে কিংবা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে স্কুল-কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ পাওয়া যায়। বেসরকারি স্কুলে তো মাস্টার্সের পর বিএড-এমএড করে অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন।
কর্পোরেট কোম্পানিতে:
বিশেষ করে বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থায় এইচআর-ওবি বিভাগে মনোবিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের দারুণ সুযোগ রয়েছে। কেননা, এখন বেসরকারি কোম্পানিগুলিতে কোনও কর্মচারী যোগ দেওয়ার আগে তার কাজের মানসিকতা রয়েছে কি না, তা এই মনোবিজ্ঞানের কর্মীরা পরীক্ষা করে দেখেন। প্রসঙ্গত, ডেটা অ্যানালিসিস এবং মার্কেট রিসার্চ-এ মতো কাজেও যোগ দিতে পারে সাইকোলজির ছাত্রছাত্রীরা। বিজ্ঞাপন ও মিডিয়া ক্ষেত্রে মনোবিদদের নিয়োগ করা হয়।
স্বাস্থ্য পরিষেবায়:
বর্তমান জেট-গতির যুগে বেশিরভাগ মানুষ মানসিকভাবে কিছুটা হলেও বিপর্যস্ত। তাই তো সাইকোলজিস্টদের ক্লিনিকগুলিতে লম্বা লাইন পড়ে যায়। এখন প্রতে্যকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসাপাতালে মনোরোগীদের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে। এখন ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’-এর গবেষণা ও চিকিৎসাতেও হেলথ সাইকোলজির প্রাসঙ্গিকতা ভীষণভাবে বেড়েছে।
ফরেনসিক ক্ষেত্রে:
মাস্টার্সের পর অনেকেই পুলিশ বিভাগ, অপরাধ শাখা, প্রতিরক্ষা, প্রশাসন বিভাগের মতো জায়গাগুলিতে ফরেনসিক সাইকলোজিস্ট পদে নিযুক্ত হয়ে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করতে পারে।
গবেষণা ক্ষেত্রে:
মাস্টার্সের পর বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী সাইকোলজির নানা বিষয় নিয়ে গবেষণায় যায়, এই যেমন, টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস, বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস, রাঁচিতে সিআইপি, কলকাতার আইওপি, দিল্লির ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস, ফরেনসিক সাইকোলজিতে গবেষণার জন্য রয়েছে গুজরাট ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, রিহ্যাবিলিটেশন সাইকোলজির জন্য আছে হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য মেন্টালি হ্যান্ডিক্যাপড, সেন্টার ফর হেলথ সাইকোলজি-সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস, হায়দরাবাদ। প্রসঙ্গত, এখন সোশ্যাল সাইকোলজি, কগনিটিভ সাইকোলজি, হেলথ সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি মতো ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে প্রচুর গবেষণা করা যায়। আইআইটি-তে সাইকোলজি নিয়ে পিএইচডি করা যায়। কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে সাইকোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট রয়েছে। আইআইএম-এর ছাত্রছাত্রীরা সাইকোলজিতে পিএইচডি করতে যায়।
রাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ:
উচ্চমাধ্যমিকে তো বটেই, স্নাতকস্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেশ কয়েকটি কলেজে সাইকোলজি নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। বারাসতের ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির অধীনে কলেজে পড়া যায়। স্নাতকের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি, আসানসোলের কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটি, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকেও মাস্টার্স করা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.