সন্দীপ চক্রবর্তী: রাজ্যের জেলায় জেলায় গ্রন্থাগারিক পদে বিরাট সংখ্যায় নিয়োগের সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হল। সব মিলিয়ে ৭৩৮ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সিলমোহর দিয়েছে নবান্ন। লাইব্রেরিয়ানে এত বিপুল সংখ্যায় নিয়োগ কার্যত এই প্রথম। প্রায় এক যুগ আগে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ হলেও তা সংখ্যায় ছিল নগণ্য।
জেলার সরকার পোষিত গ্রামীণ পাবলিক লাইব্রেরিতে শূন্যপদ নিয়ে বহুদিন ধরে প্রশ্ন উঠছিল। সেই প্রেক্ষিতে প্রায় ১৫ মাস আগে নিয়োগের ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জনশিক্ষা প্রসার ও লাইব্রেরি সার্ভিসেস দপ্তরের পক্ষে নিযুক্তি সংক্রান্ত নির্দেশনামা বৃহস্পতিবারই জেলাশাসকদের পাঠানো হয়েছে। আগামী ১০ মে’র মধ্যে নিয়োগ কমিটি গঠন করতে হবে বলে বলা হয়েছে। সেই সিলেকশন কমিটি গড়বে লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি। এই অথরিটির শীর্ষে থাকেন জেলাশাসক। মেম্বার সেক্রেটারি ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরি অফিসার। নিয়োগ হবে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে। লাইব্রেরি সায়েন্সে উত্তীর্ণ আবেদনকারীরা আবেদন করতে পারবেন অনলাইনে। এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকেও নাম চেয়ে পাঠানো হবে। স্বচ্ছতা বজায় রেখে দ্রুত প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে নবান্ন থেকে। রাজ্য চাইছে করোনার ধাক্কায় বই পড়ার মানসিকতা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখান থেকে মূলত ছাত্র ও যুবদের আবার বইমুখী করে তুলতে।
চাকরি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া হবে ১৭ মে। এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে নাম গ্রহণের শেষ তারিখ ১০ জুন। ওইদিনই অনলাইন আবেদন জমা করার শেষ দিন। ইন্টারভিউ হবে ১৪ থেকে ১৮ জুলাই। আর তালিকা চূড়ান্ত হবে ২৫ জুলাই। শূন্যপদের তুলনায় অতিরিক্ত বেশি সংখ্যায় আবেদন এলে যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব আবেদনকারীদের ইন্টারভিউয়ে ডাকতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইন্টারভিউয়ে কম্পিউটার ও বাংলার জ্ঞান যাচাই করা হবে। ফাইনাল প্যানেল এক বছরের জন্য গ্রাহ্য হবে। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর গ্রামীণ লাইব্রেরির অন্তর্গত টাউন ও ব্লক লাইব্রেরিতে স্থায়ীপদে চাকরির দায়িত্ব নেবেন বাছাইরা।
জেলাওয়াড়ি হিসাবে সব থেকে বেশি নিয়োগ হবে উত্তর ২৪ পরগনায়, ৬০। এছাড়াও পূর্ব বর্ধমানে ৫৫, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫২ জন করে নিয়োগের কথা। কলকাতার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪০। ২৩টি জেলার পাশাপাশি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ মিলিয়ে মোট নিযুক্তি হবে ৭৩৮। অন্য জেলার মধ্যে আলিপুরদুয়ারে ৬, বাঁকুড়ায় ৩১, বীরভূমে ৩৮, পশ্চিম বর্ধমানে ২৩, কোচবিহারে ৩৪, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১৪, দার্জিলিংয়ে (জিটিএ) ২১, হাওড়ায় ৩৬, জলপাইগুড়িতে ১৮, ঝাড়গ্রামে ১৭, মালদহে ২৯, মুর্শিদাবাদে ৩৬, নদিয়ায় ৩৭, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪০, পূর্ব মেদিনীপুরে ৪৪, পুরুলিয়ায় ৩০ ও উত্তর দিনাজপুরে ১২টি শূন্যপদ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চার হাজারের বেশি শূন্যপদ বলে দাবি করেছিল বিভিন্ন সংগঠন। রাজ্যে ২৪৮০টি গ্রন্থাগারের মধ্যে হাজারখানেক লাইব্রেরি কর্মীর অভাবে ধুঁকছিল। অনেক ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারকর্মীরাই লাইব্রেরিয়ানের কাজ সামলাচ্ছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে এই নিয়োগ-নির্দেশনামা গ্রন্থাগারগুলির উজ্জীবনে বড় ভূমিকা নেবে। পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির রাজ্য সভাপতি তহিদুল ইসলাম নিয়োগের সরকারি নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্বাগত জানিয়েছেন লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্তরাও। এরই মধ্যে রাজ্যের ৮০টি গ্রন্থাগারকে মডেল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.