বাকি পাঁচটা বছরের থেকে একেবারেই আলাদা ২০২০। যা কেড়েছে অনেক কিছু। প্রত্যেককে এমন কিছু অভিজ্ঞতার সাক্ষী করেছে, যা হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি কেউ। সেই সঙ্গে নতুন কিছু খটমট শব্দের সঙ্গেও পরিচিতি ঘটিয়েছে, যা বর্তমানে সকলের নিত্যসঙ্গী। এমনই কিছু শব্দ তুলে ধরল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
প্যানডেমিক – ‘প্যানডেমাস’ থেকে আসা ‘প্যানডেমিক’ (Pandemic) শব্দটিকে ইতিমধ্যেই বছরের সেরা শব্দ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একটি রোগ যা বিরাট জনসংখ্যার উপর একসঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সেক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এই শব্দটি। চলতি বছরের মার্চে করোনাকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন– করোনাকালে সকলের কাছে অত্যন্ত পরিচিত দুটি শব্দ ‘কোয়ারেন্টাইন’ (Quarantine) ও ‘আইসোলেশন’ (Isolation)। করোনা আক্রান্ত হলে বা আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে ১৪ দিনের নির্ভৃতবাস অনিবার্য। এই পর্যায়টিকেই বলা হয় ‘কোয়ারেন্টাইন’। সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই একাকী দিনযাপনই ‘আইসোলেশন’। সঙ্গে মেনে চলতে হয় সমস্ত কোভিডবিধিও।
লকডাউন ও আনলক– করোনা থাবা বসাতেই ‘লকডাউন’ (Lockdown) জারি হয় দেশে। বন্ধ করে দেওয়া হয় গণপরিবহণ-সহ সমস্ত কিছু। রাতারাতি স্তব্ধ হয়ে যায় দেশ। ঘরবন্দি হয়ে পড়েন প্রত্যেকে। প্রায় আড়াই মাস বন্দিদশা কাটিয়ে ‘আনলক’ পর্যায়ে পা রাখেন সকলে। ধীরে ধীরে ছাড় মিলতে থাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কোভিড বিধি মেনে একে একে চলতে শুরু করে বাস-অটো। খোলে দোকানপাট। নতুন এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হন সকলে।
সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং– করোনার কারণে ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ (Social Distancing) শব্দটি বর্তমানে সকলেরই মুখে মুখে। মারণ ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে মোক্ষম অস্ত্র এই ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ বা ‘সামাজিক দূরত্ব’। যদিও বর্তমানে ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’য়ের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ‘ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং’ বা ‘শারীরিক দূরত্ব’ শব্দটি। ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্স’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে অভিধানে।
কনটেনমেন্ট জোন– করোনার কারণেই এই ‘কনটেনমেন্ট জোন’ (Containment Zone) শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছে আমজনতা। সংক্রমণ ঠেকাতে কোনও নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হলে, বা চলাফেরার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম জারি করা হলে ওই এলাকাকে ‘কনটেনমেন্ট জোন’ বলা হয়।
কমিউনিটি স্প্রেড বা গোষ্ঠী সংক্রমণ– গোষ্ঠী সংক্রমণ হল, যখন কোনও রোগ একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে ও ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘চেইন রিঅ্যাকশান’ ও বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোগ নির্মূল অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। কারণ, কার মারফত কে সংক্রমিত হয়েছেন তা শনাক্ত করা কার্যত অসম্ভব।
অ্যাসিম্পটোমেটিক– শব্দটির বাংলা অর্থ উপসর্গহীন। যা কমবেশি সকলেরই জানা। তবে নোভেল করোনা ভাইরাসের কারণেই দৈনন্দিন জীবনে শব্দটির ব্যাপক প্রয়োগ ঘটেছে। কোনওরকম উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও যাঁদের শরীরে করোনার অস্বিত্ব মিলেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এই অ্যাসিম্পটোমেটিক (Asymptomatic) শব্দটি।
কোমর্বিডিটি– কোনও করোনা আক্রান্তের ক্রনিক কিডনি রোগ, সিওপিডি, স্থুলতা জাতীয় কোনও সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে কোমর্বিডিটি (Comorbidity) শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলি করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভাইরাল লোড– মারণ করোনা আমজনতাকে পরিচিত করেছে ‘ভাইরাল লোড’ (Viral Load) শব্দটির সঙ্গে। যার অর্থ রক্ত বা লালারসে উপস্থিত ভাইরাসের পরিমাণ।
রেসপিরেটর– করোনা কালে অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলির মধ্যে অন্যতম এই রেসপিরেটর (Respirator)। বিশেষ করে করোনাযোদ্ধা বা চিকিৎসকদের জন্য বাতাসের শুদ্ধিকরণে ব্যবহৃত হয় এই যন্ত্র। এটি ব্যবহার করলে, কোনও ক্ষতিকারক পদার্থ, অ্যারসেল, ড্রপলেট বা জীবাণু নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করতে পারে না।
থার্মাল স্ক্যানিং– লকডাউনের ঠিক আগে ‘থার্মাল স্ক্যানারে’র সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আমজনতার। শপিং মল, ধর্মস্থান-সহ সমস্ত জায়গায় প্রবেশের আগে ওই বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করাই হল ‘থার্মাল স্ক্যানিং’ (Thermal scanning)। যা এখনও বর্তমান।
সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট- নোভেল করোনা ভাইরাসকে ধ্বংস করতে প্রথমে চিনে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (Sodium hypochlorite) স্প্রে করা হয়েছিল। সুফলও মেলে বলেই দাবি করা হয়। পরবর্তীতে কলকাতাকে করোনা মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন- করোনার কারণেই বর্তমানে প্রত্যেকের কাছেই অত্যন্ত পরিচিত নাম হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (Hydroxychloroquine)। প্রথম দিকে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে করোনা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলা হচ্ছিল, পরবর্তীতে এটিকেই মারণ ভাইরাস মোকাবিলায় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.