দোরগোড়ায় ২০২০। বছরের শেষ সপ্তাহ। ২০১৯ কেমন কাটল বিনোদন জগতের? ব্লকবাস্টার হিট, মেগা-ফ্লপ সবই দেখেছে বলিউড থেকে টলিউড। তবে এবছর নজর কেড়েছে সেরা কন্টেন্টের বেশ কয়েকটি ছবি। যেগুলি সিনে-সমালোচকদের পরীক্ষায় পাশ করার পাশাপাশি সিনেপ্রেমীদেরও মন কেড়েছে। সেরা ১০-এর তালিকা SangbadPratidin.in-এ৷
উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক: বছরের শুরুই হয়েছে ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’ দিয়ে। শুধু কন্টেন্ট নয়, সংলাপেও বাজিমাত করেছে ভিকি কৌশল অভিনীত ‘উরি’। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। কাশ্মীরের উরির সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। যার যোগ্য জবাব ফিরিয়ে দিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল ভারতীয় সেনা। সেই বীরত্বের কাহিনিই বড়পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক আদিত্য ধর। যে ছবি বক্স অফিসে সাড়া তো ফেলেইছে, বছরভর সিনেপ্রেমীদের মুখেও ঘুরেছে সিনেমার সংলাপ। কারগিল বিজয় দিবস উপলক্ষে মহারাষ্ট্র সরকার রাজ্যজুড়ে সিনেমা হলে ‘উরি’ দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল। ‘উরি’তে ভিকি কৌশলকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নৌ-সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন এক যুবক। ‘উরি’র নামে স্পেশ্যাল থালি চালু হয়েছে মুম্বইয়ের এক রেস্তরাঁয়। পয়লা নম্বরে থাকার সব রসদ রয়েছে ‘উরি’তে।
আর্টিকল ১৫: ২০১৪ সালের বদায়ুন গণধর্ষণকাণ্ড অবলম্বনে অনুভব সিনহা তৈরি করেছেন ‘আর্টিকল ১৫’। পরশুরাম সেনা, উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ অনেকেই এই ছবিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। বহু বিতর্ক পেরিয়ে মু্ক্তি পেয়েছে। তবে সিনেপ্রেমীদের নজর কেড়েছে পুলিশ অফিসার আয়ুষ্মান খুরানা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান, গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রসঙ্গ তুলেছে ‘আর্টিকল ১৫’। ছবিতে দৃঢ় স্বরে, স্পষ্ট ভাষায় বোঝানো হয়েছে সংবিধানের ১৫ নং ধারা। পরিচয় করিয়েছে অচেনা এক ভারতবর্ষের সঙ্গে। “বিভেদ-বৈষম্য অনেক তো হল, এবার বদলানোর সময় এসেছে”, জাতির উদ্দেশে এমন বার্তাই দিয়েছে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘আর্টিকল ১৫’। ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে লন্ডন ইন্ডিয়া চলচ্চিত্র উৎসবেও।
গাল্লি বয়: এবছর ৯২ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেরা আন্তর্জাতিক বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে ভারত থেকে অফিশিয়াল এন্ট্রি পেয়েছিল জোয়া আখতার পরিচালিত ‘গাল্লি বয়’। যদিও অস্কার দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে রণবীর সিং-আলিয়া ভাটের ছবি, তবে সিনেপ্রেমীরা রণবীরের ব়্যাপার অবতার এখনও ভুলতে পারেননি। মুম্বই-এর ঘিনঘিনে বসতি থেকে উঠে আসা এক ব়্যাপার কীভাবে জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে ওঠে, সত্য ঘটনা অবলম্বনে স্বপ্নের পিছনে দৌড়নোর সেই লড়াকু কাহিনিই ‘গাল্লি বয়’-এর প্রতিপাদ্য।
সুপার ৩০: পাটনার গণিতবিদ আনন্দ কুমারের ৩০ জন হতদরিদ্র ছেলেমেয়েদের নিয়ে লড়ার গল্প। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রচলিত শ্রেণিবৈষম্যের উপর কষিয়ে চড় বসিয়েছে এই ছবি। সওয়াল করেছে আমাদের বিবেককে। সত্যিই কি জোর যার মুলুক তাঁর? সিংহাসনের উত্তরসূরি হিসেবে যথাযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও কি রাজার ছেলেই রাজা হবে? গল্পের পরতে পরতে প্রশ্ন তুলেছে ‘সুপার ৩০’। পর্দায় আনন্দের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন হৃতিক রোশন। ‘সুপার ৩০’র ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ বার্তাতে মজেই বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের মতো একাধিক রাজ্যে করমুক্ত করা হয়েছে এ ছবিকে।
দ্য স্কাই ইজ পিংক: ‘জীবনে আর কিছুই বাকি নেই…’ যদি মনে কখনও এই ভাবনা এসে থাকে, তাহলে বলব ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ দেখুন। বাস্তবের প্রেক্ষাপট। পালমোনারি ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত দিল্লির মেয়ে আয়েষা চৌধুরি, যে কি না কটা মাত্র বসন্ত দেখেই বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে, তার জীবনকাহিনি অবলম্বনে সোনালি অতি যত্নে তৈরি করেছেন এই ছবি। অসুস্থতা, রোগ-ব্যধির মাঝেও পরিচালক সোনালি বোস উপহার দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা-ফারহানের মিষ্টি একটা রসায়ন। প্রিয়াঙ্কা যদি এই ছবির অর্জুন হন, তাহলে জায়রাকে সেই গল্প টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সারথি কৃষ্ণ নির্দ্ধিধায় বলা যায়।
এবার আসা যাক টলিউড ছবির কথায়। ২০১৯-এ মন ভাল করা ছবি উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ পরিচালকজুটি শিবপ্রসাদ-নন্দিতাকে।
কণ্ঠ: প্রথমটা যখন ল্যারিঞ্জ ক্যানসার আক্রান্ত এক বাচিক শিল্পীর জীবনযুদ্ধের গল্প, দ্বিতীয়টি প্রশ্ন তোলে জাতপাত-ধর্ম সংক্রান্ত বিভেদ নিয়ে। মধ্যবিত্ত পারিবারিক মূল্যবোধের সঙ্গে নাটক, গান, ঘটনা মিশিয়ে একের পর এক সুস্বাদু ছবি বানিয়ে চলেছেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা। ‘কণ্ঠ’তে নজর কাড়ে পরিচালক শিবুর অভিনেতা শিবু হয়ে ওঠা। পাওলি-জয়া আহসানও দুর্দান্ত ছবিতে।
গোত্র: মানবতা বড়, না জাত-ধর্ম? রক্তের রং তো তোমারও লাল। আমারও। তাহলে ভেদাভেদ কেন? আজকের জন্য এই ছবি খুব প্রাসঙ্গিক। ‘গোত্র’র মতো আরও কয়েকটা ছবি হলেই বোধহয় সমাজ শিখবে যে একসঙ্গে বসে সিন্নি-খই এবং শিমুই পায়েস লেহনের স্বাদ কেমন।
ঘরে বাইরে আজ: নতুন মোড়কে রবি ঠাকুরের ‘ঘরে বাইরে আজ’। ছবির কাহিনি যেমন আধুনিকতার মোড়কে মুড়েছে, সঙ্গে বদলেছে চরিত্রের নাম। অনিমেষ-বৃন্দা-সন্দীপের ত্রিকোণ প্রেমের সমান্তরালে রাজনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ প্লট। এবং অবশ্যই তা অপর্ণা সেনের সাহসী পরিচালনার জন্য। পরিচালকের রাজনৈতিক গল্প বলা ভঙ্গীতে নিঃসন্দেহে ‘ঘরে বাইরে আজ’ টলিউডে ব্যতিক্রম ছবি। প্রথম আত্মপ্রকাশেই নজর কেড়েছেন তুহিনা দাস। এই প্রথম অপর্ণার সেনের দৌলতে সিনেদর্শক একফ্রেমে অনির্বাণ এবং যিশুকে দেখল।
তারিখ: ‘নির্বাসিত’র পর পরিচালক চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ছবি। চিত্রনাট্যও নিজে সাজিয়েছেন। অনবদ্য চিত্রনাট্যের জন্য ৬৬তম জাতীয় পুরস্কারও বাগিয়ে নিয়েছেন পরিচালক চূর্ণী। ছকভাঙা ন্যারেটিভ স্টাইল। এক মুক্তমনা-স্বাধীন চিন্তার অধ্যাপকের পেশাগত জীবনের ঝক্কি এবং ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের বহুতলিক অবস্থানকে চূর্ণী সাজিয়েছেন ফেসবুক-এর ফর্ম্যাটে। ফলে ফেসবুকে পাঠানো এবং পাওয়া পোস্টের মতো আগু-পিছু হয়ে ঘটনা পরম্পরা পর্দায় এসেছে ‘তারিখ’-এর সূত্র ধরেই। নামের সার্থকতা এখানেই। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এবং ঋত্বিক চক্রবর্তীর যুগলবন্দি দুরন্ত।
সাঁঝবাতি: পয়লা ছবিতেই মন কেড়েছেন শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়-লীনা গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালকদ্বয়। ছোটপর্দায় কাজের সুবাদে দর্শকদের নাড়ি যে তাঁরা ভালই বোঝেন, ‘সাঁঝবাতি’ তাঁর প্রমাণ। ছানাদাদু-মিষ্টিদিদা (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-লিলি চক্রবর্তী) এবং চাঁদু-ফুলির (দেব-পাওলি) রসায়ন ইতিমধ্যেই মনে ধরেছে সিনেপ্রেমীদের। কোনও অনাত্মীয়, যাঁর সঙ্গে চোদ্দো পুরুষেও রক্তের সম্পর্ক নেই। সেই মানুষগুলিই যখন আমাদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে, তখন ওরাই ‘অসহায়’ আমাদের অন্ধের যষ্ঠি। ‘সাঁঝবাতি’ও ঠিক এরকমই এক ছকভাঙা সম্পর্কের গল্প বলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.