ঘটনা-অঘটনের কোলাজে কেটে যায় সময়। আনন্দ উদযাপনের সুযোগ যেমন আসে, তেমনই আসে বিপর্যয়কে সামাল দিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। ২০১৯ সালও বহু বিপর্যয়ের সাক্ষী। বাংলায় দাপুটে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল থেকে অসম, দক্ষিণ ভারতের ভয়াবহ বন্যা, কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে বাঙালি শ্রমিক নিধন থেকে দিল্লির সবজিমাণ্ডির ভয়াবহ আগুনের ঝলসে যাওয়া ৪৩টি প্রাণ – বছরশেষে সেই দুর্যোগভরা স্মৃতির পাতা উলটে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
বানভাসি অসম, কেরল
বর্ষার মরশুমে নদী ফুলেফেঁপে উঠে প্লাবিত মধ্য, উত্তর এবং দক্ষিণ কেরলের অন্তত ১২ জেলা। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১২১। একই ছবি ছিল পাশের রাজ্য কর্ণাটকেও। তুঙ্গভদ্রার জলে কর্ণাটকের বিস্তীর্ণ অংশ ভেসে গিয়েছিল। দুর্যোগে পড়ে ঐতিহ্যবাহী স্থান হাম্পি হেরিটেজ সাইট চলে গিয়েছিল জলের নিচে।
বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় এবছর চোখে পড়েছে কিছু অপরিচিত দৃশ্যও। বিপর্যয়মুক্তির পরও যেন সেসব চোখের সামনে ভাসে। বন্যার জল থেকে বাঁচতে প্লাবিত কর্ণাটকের বেলগামে একেবারে বাড়ির চালে উঠে আশ্রয় নিয়েছিল বিশালাকার কুমির।
অসহায় বন্যপ্রাণের আরেক ছবি দেখা গিয়েছিল অসমে। চলতি বছরের প্রবল বৃষ্টিতে ভরাডুবি কাজিরাঙ্গা অভয়ারণ্য সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রাণের ভয় একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সটান ঘরে ঢুকে উঠে গিয়েছিল বিছানায়।
জোড়া ফলা: ফণী, বুলবুল
প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচেনি আমাদের রাজ্যও। নভেম্বর মাসে আতঙ্কের ঘূর্ণিঝড় বা severe cyclonic storm বুলবুল বয়ে গিয়েছে শস্যশ্যামলা বাংলার উপর দিয়ে। প্রাণ কেড়ে, হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করে, বাড়িঘর ভেঙেচুরে সে দেখিয়েছে নিজের শক্তি।
তার আগেই পাশের রাজ্য ওড়িশার উপর দিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে আরেক ঘূর্ণিঝড় ফণী। অশনি সংকেত দিয়ে ঝড় আসার ঠিক আগেই উড়ে গিয়েছিল পুরীর মন্দিরের শীর্ষে থাকা একটি পতাকা। ভুবনেশ্বর শহরটি ফণীর দাপটে একেবারে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। প্রভাব কিছুটা পড়েছিল এরাজ্যেও।
জঙ্গিদের হাতে খুন ৫ বাঙালি শ্রমিক
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি আরও যেসব ঘটনা আমাদের বেদনাভারে ন্যুব্জ করেছে, তার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে ৫ বাঙালি শ্রমিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। স্রেফ পেটের টানে মুর্শিদাবাদ থেকে ভূস্বর্গে পাড়ি জমানোর মাসুল যে এভাবে গুণতে হবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি কেউ।
জতুগৃহ দিল্লির সবজিমান্ডি
এই ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে দিল্লিতে ঘুমের মধ্যেই আগুনে ঝলসে গিয়েছেন ৪৩ জন বিক্রেতা। কনকনে ঠান্ডায় সবজি মান্ডির সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছিল প্রায় গোটা রাজধানী। দু’দশকের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।
আমাজন অরণ্যে আগুন
দেশের বাইরেও বিভিন্ন প্রান্ত বিপর্যয়ের সাক্ষী থেকেছে ২০১৯। আমাজনের বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্যে এতদিন ধরে আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন বরুণদেব। এবার অগ্নিদেবের রোষানলে পুড়ল পৃথিবীর বৃহত্তম চিরহরিৎ অরণ্য। জঙ্গল সাফ করে চাষের যোগ্য করে তুলতে গিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকেছেন অরণ্যবাসী। পরিবেশবিদদের দাবি, এটা ‘ম্যান মেড’ বিপর্যয়।
অস্ট্রেলিয়া বনাঞ্চলের দাবানল
বছরের মধ্যভাগের অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের দাবানল চিন্তায় ফেলেছে আমাদের। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করেও কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি, বছর শেষেও। বড় বিপদ এড়াতে ক্রিসমাসে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সে দেশের প্রশাসন।
নিউজিল্যান্ডে অগ্ন্যুতপাত
বছরের শেষভাগে বিপর্যয়ের শিরোনামে উঠে এসেছে নিউজিল্যান্ডের অগ্ন্যুতপাতের ঘটনা। হোয়াইট দ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির চারপাশে বেড়াতে গিয়ে যেভাবে আচমকা লাভা স্রোতের ছ্যাঁকায় অগ্নিদগ্ধ হতে হয়েছে ২০, ২৫ জনকে, শুধু প্রাণটাই রয়ে গেছে, শরীরের বাকি অংশ দেখলে বোঝার উপায় নেই মানবদেহের আদল।
প্রকৃতি স্বমহিমায় বিরাজমান। কিন্তু তার প্রতি অবহেলা করে গতিশীল মানবসভ্যতার রথ। তাই তার আশীর্বাদের বদলে অহরহ বর্ষিত হয়েছে অভিশাপ। আবার নিজেদের অবহেলায় নিজেদের জীবনকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছি আমরা। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ যেন সুন্দর করে তুলতে পারি। আসুন, নতুন বছরে সেই আলোয় আলোকিত হই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.