সৌরভ মাঝি, বর্ধমান: মাঘের কনকনে ঠান্ডায় ফুটপাথেই পড়ে ঠকঠক করে কাঁপছে সে। জটাধরা চুল। ময়লা জমে একগাল দাড়িতে জট ধরেছে। পরনের বস্ত্র মলিন, শতচ্ছিন্ন। অনেকেই দেখেও না দেখার ভান করে মুখ ফিরিয়েছে। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপাও দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু সকলেই এক নন। মানবিকতা আজও সমাজে রয়েছে। কতিপয় যুবকের চেষ্টায় সেই ভবঘুরেকে এখন দেখে চেনার জো নেই। ক্লিন শেভড। ছোট করে কাটা মাথার চুল। পরনে তুলনামূলকভাবে ভাল জামাকাপড়। নিয়মিত খাবারও খাচ্ছে ওই ভবঘুরে যুবক।
মানবিকতার অনন্য নজির গড়লেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির একদল যুবক। ভবঘুরেকে তথাকথিত সভ্যসমাজে বসবাসের উপযুক্ত করে তুলেছেন তাঁরা। এখন বাড়ি ফেরানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন। কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। ভবঘুরে যুবক কথাই যে বলতে পারেন না। নাম-ঠিকানা মিলবে কীভাবে এখন সেটাই প্রশ্ন। এর আগেও গলসির এই যুবকের দল আর এক ভবঘুরেকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেবাযত্ন করে সুস্থ করেছিলেন. পরে তাকে বাড়িও ফেরানো হয়েছে।
[ ‘চিন্তা করিস না, ৪২-এ বিয়াল্লিশ হবে’, মা যোগাদ্যা নাকি অভয় দিয়েছেন অনুব্রতকে! ]
গলসির এই যুবকের দলে রয়েছেন পেশায় শিক্ষক ফিরোজ আলি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সাদ্দাম হোসেন খান, শেখ সুরজ, শ্রীমন্ত বাউড়ি, শেখ চন্দন, শেখ মিঠু-সহ আরও কয়েকজন। ফিরোজ আলি নিজে হাতে স্নান করান যুবককে। সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন চেহারা দেন। তারপর স্থানীয় নাপিত ডেকে চুল, দাড়ি কামানো হয়। নখ কাটা হয়। জামা, প্যান্ট, শীতবস্ত্র পরানো হয়। খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়। ফিরোজ জানান, ওইভাবে পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের সকলেরই খুব খারাপ লেগেছিল। তাই সকলে মিলে চেষ্টা করেছেন ওই ভবঘুরে যাতে ভালভাবে থাকতে পারেন তার জন্য। তিনি বলেন, “আমরা সমাজবদ্ধ জীব। অন্যের বিপদে আমরা এগিয়ে না এলে সমাজটা রক্ষা হবে কীভাবে। বিপদে-আপদে এইভাবে এগিয়ে এলে সমাজের উপকার হবে।”
শেখ সুরজ জানান, ভবঘুরেকে দেখে প্রথমে তাঁরা মনে করেছিলেন বয়স্ক মানুষ। কিন্তু চুল, দাড়ি কাটার পর বুঝতে পারেন বয়স্ক নয়, যুবক। তবে কথা বলতে পারে না। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কারণেই কথা বলতে পারে না, না কি কোনওভাবে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। শ্রীমন্ত, চন্দনদেরও একইকথা। তাঁরা চাইছেন কোনওভাবে ওই যুবককে যাতে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়। আপাতত তাঁরা ভাত খাওয়ানো থেকে অন্যান্য খাবারের বন্দোবস্ত করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী অসীম পাল, শেখ মাবুদরা জানান, তাঁদের দোকানেও আসে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। চা-বিস্কুট দিলে খেয়ে চলে যায়। কিন্তু বাড়ি কোথায়, নাম কী জানতে চাইলে শুধুই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ভবঘুরে ওই যুবক।
[ রোদে-জলে নষ্ট হচ্ছে সবুজসাথী সাইকেল, ক্ষোভে ফুঁসছে বালুরঘাট ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.