সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পিঠে রুকস্যাক। সেখানেই রাখা দুটি জাতীয় পতাকা (National Flag)। যা পতপত করে উড়ছে। পরনে ট্র্যাকশুট, টি-শার্ট। পায়ে চপ্পল। এভাবেই হাজার-হাজার পথ কিমি অতিক্রম করে ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনি দিয়ে হেঁটে চলেছেন তিনি। কখনও মাইলের পর মাইল জাতীয় সড়ক। আবার কখনও পাহাড়ে ঢাকা বরফের পিচ্ছিল পথ। ঘন জঙ্গল। দুর্গম পথে পায়ে-পায়ে বিপদের হাতছানি। তবুও তিনি হাঁটছেন। ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনে গত ৮ মাস ধরে এই ভ্রমণ চলছে পাঞ্জাবের (Punjab) যুবক ঋত্বিক সাক্সেনা। সম্প্রতি পুরুলিয়ার (Purulia)বলরামপুর ছুঁয়ে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর হয়ে ওড়িশার পুরীর পথে রওনা দিয়েছেন। সেখান থেকে তাঁর গন্তব্য, জ্যোতির্লিঙ্গ অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুন। এভাবেই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে গুজরাটের সোমনাথে তিনি এই ভ্রমণ শেষ করবেন। যা শেষ হতে আরও আট মাস। অর্থাৎ পায়ে হেঁটে ১৬ মাস ভ্রমণে ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের ইচ্ছা পূরণ করবেন তিনি।
পাঞ্জাবের ভাটিণ্ডা গ্রামের ২৫ বছরের ঋত্বিক সাক্সেনা। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। কিন্তু সেই সব কাজ, ঘর-সংসার ফেলে রেখে দেবাদিদেব মহাদেবের ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Jyotirlinga Shrines) চাক্ষুষ করতে এই যাত্রা। শিবের ভক্ত এই যুবক ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর ঘর থেকে বেরিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মা-বাবার অনুমতি নিয়েই ঘর থেকে বার হয়েছি। ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে তবেই এই যাত্রা শেষ করবো। গুজরাটের সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গে যাত্রা শেষ হবে।”
জ্যোতির্লিঙ্গ বলতে হিন্দু দেবতা মহাদেবের ১২টি বিশেষ মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলিকে বোঝায়। এই মন্দির দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র তামিলনাড়ু-সহ একাধিক রাজ্যে। ইতিমধ্যেই ওই যুবক কেদারনাথ, নাগেশ্বর, বিশ্বনাথ, বৈদ্যনাথ ঘুরে মল্লিকার্জুনের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। বাকি রয়েছে আরও দীর্ঘ পথ। রামেশ্বরম, ভীমশংকর, ত্রম্বকেশ্বর, সোমনাথ, ওঙ্কারেশ্বর, মহাকালেশ্বর, ঘৃষ্ণেশ্বরের মতো জ্যোতির্লিঙ্গ।
হিন্দু (Hindu) বিশ্বাস অনুযায়ী, অরিদ্রা নক্ষত্রের রাতে শিব স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাকে ঘিরে নানান কথা এই ভ্রমণ কালেই শোনাচ্ছিলেন ঋত্বিক। তাঁর কথায়, “জ্যোতির্লিঙ্গ হল সর্বোচ্চ অখণ্ড সত্য। যেখানে মহাদেব আংশিকভাবে আবির্ভূত হন। এই জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির গুলি সেখানেই গড়ে উঠেছে যেখানে শিব আলোর অগ্নিময় লিঙ্গরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।”
এর আগেও তিনি দেশের বিভিন্ন বজরংবলী মন্দির দর্শন করেছেন। কিন্তু হিন্দুদের কাছে যে এই জ্যোতির্লিঙ্গ শিবের পবিত্রতম মন্দির। সেই কারণেই তার দর্শনের ইচ্ছায় হাজার হাজার পথ পার হচ্ছেন। পাঞ্জাবের যুবকের কথায়, “এই দীর্ঘ পথে সমস্যা আছে। তবে অনেক ভালো লাগা আছে। ভ্রমণের শুরুর দিকেই একজন মানুষ আমাকে এই জাতীয় পতাকা দিয়েছেন। বলেছিলেন দেশের এই পতাকা অনেক বিপদ থেকেই বাঁচাবে । এই পতাকা একটা ধ্বজা। এক রাতে চোরেদের খপ্পরে পড়েও বেঁচে গিয়েছিলাম। তবে মোবাইল চুরি গিয়েছিল একবার। ” এই দীর্ঘযাত্রায় কখনও রাত কাটছে স্কুল বাড়ির ছাদে। আবার কখনও পার্বত্য উপত্যকায় কোন ছাউনিতে। মহাদেব রয়েছেন এই বিশ্বাসে হেঁটে চলেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.