ছবি: প্রতীকী
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: এ যেন এক অন্য বড়দিন। স্ত্রীকে ভালোবাসা জানাতে গিয়ে পুলিশের খপ্পড়ে। একসঙ্গে বাইক নিয়ে পথ দুর্ঘটনা। শেষে পুলিশ ও পুরসভার পক্ষ থেকে একগুচ্ছ গোলাপ কিনে তাদের সামনে জখম পা ও হৃদয় নিয়ে তাদের সামনে হাঁটু মুড়ে বউকে একগুচ্ছ লাল গোলাপ উপহার দেওয়া। যা দেখে সিউড়ি পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ‘আমার ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন বড়দিন পালন করিনি।’এই উপহারও চমকে দিয়েছে। পুলিশের তরফেও উপহার হিসাবে যুবকের অপরাধ মাফ করে তাকে সতর্ক করে মুক্ত করল পুলিশ।
সোমবার রাতে সিউড়ি শহরের ভালোবাসার চিহ্ন দেওয়া লাল গ্লোসাইনটি চুরি যায়। গত বছর পুরপ্রধানের উদ্যোগে সিউড়ি শহরের তিন জায়গায় আমার ভালোবাসার সিউড়ি লিখে বিপুল খরচ করে শহরের তিন প্রান্তে তিনটি কর্নার করা হয়। সেই কর্নার করার কিছুদিনের মধ্যে হাটজন বাজারেরটা কেউ বা কারা ভেঙে দিয়ে যায়। সোমবার অন্য একটি কর্নার থেকে শুধু ভালোবাসার চিহ্নটি চুরি যায়। লালকুঠি পাড়ার সার্কিট হাউসের সামনে সেই চুরি নজরে পড়ে মঙ্গলবার সকালে। সন্ধেয় আলোকিত ওই কর্নারে লোকেরা দাঁড়িয়ে ছবি তুলত। তাছাড়া হাই প্রোফাইল জোনে থাকা এমন কর্নার থেকে শুধু ভালোবাসা চুরি যাওয়ায় হতাশ শহরবাসী। তাদের প্রতিনিধি হয়ে পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, সিউড়ি শহরের ‘পুলিশের উদাসীনতা’কে নিয়ে কটাক্ষ করে। যা আঁতে লাগে পুলিশের।
বুধবার দুপুরেই মহম্মদবাজারের সেরেন্ডা থেকে বাপন বাদ্যকরকে গ্রেপ্তার করে সিউড়ি থানার পুলিশ। ডাকা হয় পুরপ্রধানকে। থানা চত্বর তখন যেন অন্য এক মুহূর্তের অপেক্ষায়। বাপন অকপটে স্বীকারোক্তি দেয় সে ওই কাজ করেছে। বাপনের শ্বশুরবাড়ি সিউড়ি রক্ষাকালীতলায়। বাপন জানায়, ‘সোমবার রাতে সিউড়ি এসে মদ্যপান করে নিজের বাইকে বাড়ি ফিরছিল। সার্কিট হাউস মোড়ের কাছে ভালোবাসার চিহ্ন দেখে তার মন ভালোবাসায় হু হু করে ওঠে। স্ত্রীকে এই কয়েকবছরে কিছু সে দিতে পারেনি। তাই যত্ন করে আলো-সহ সিউড়ির ভালোবাসার চিহ্নটি সে খুলে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ততক্ষণে নেশা চড়েছে। ফেরার পথে এসপির মোড়ের কাছে বাইক দুর্ঘটনা। সেখানেই তার চুরি করা ভালোবাসা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সে কথা স্ত্রীকেও সে জানায়।”
এরপর দু হাত তুলে তার অপরাধের জন্য যা শাস্তি তা মেনে নিতে রাজি বলে জানায়। পুলিশ ও পুরপ্রধান তখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় জানান, “এমন ভালোবাসা বিফলে গেলে চলে না। একগোছা লাল গোলাপ আনা হল। বাপনের হাতে তুলে দিয়ে বলা হল স্ত্রীকে ভালোবাসা জানাতে।” একইসঙ্গে সিউড়ি পুলিশের উদাসীনতা বলে পুরপ্রধানের যে কটাক্ষ তা তিনি প্রত্যাহার করে নেন। পুলিশকে মিষ্টিমুখ করান। এরপর সবার সামনে দুর্ঘটনায় জখম পা নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বাপন। স্ত্রীকে বড়দিনে লাল গোলাপ ফুল উপহার দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ ছেড়ে দেয় বাপনকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.