স্বাস্থ্যকর্মীদের আসতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা।
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসতেই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন যুবক। যদিও বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও তার মৃতদেহ নামাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। বাধ্য হয়েই বাড়ির লোককেই ওই যুবকের মৃতদেহ নিচে নামাতে হয়। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর খবর দেওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকর্মীদের আসতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা।
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার নবদ্বীপ থানার চরমাজদিয়া চরব্রহ্মনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই যুবকের বয়স ৩৮ বছর। তাঁর আদি বাড়ি বিহারের মোগলসরাই জেলার ভগবানপুর থানার একটি গ্রামে। ওই গ্রামেই রয়েছেন তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তবে নবদ্বীপে তিনি তাঁর বাবাকে নিয়ে কর্মসূত্রে থাকতেন। মূলত লেপ-তোষক তৈরি করার কাজ করতেন তিনি। সেই কাজের সূত্রে বিহার থেকে এসে নবদ্বীপের ওই এলাকায় বেশ কয়েকবছর ধরেই ছিলেন। মাঝেমধ্যে যেতেন দেশে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে। মাসখানেক আগেও দেশে গিয়েছিলেন। ফিরেছিলেন কয়েকদিন আগে। ভিন রাজ্য থেকে আসায় নিয়মানুযায়ী তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। স্থানীয় হাসপাতালে গত ৬ সেপ্টেম্বর তার লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। বুধবার তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে । যদিও রিপোর্ট মোবাইলে দেখেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই যুবক। অবশ্য রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই যুবককে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু রিপোর্ট জানার পর থেকেই নিজের মনের জোর আর ধরে রাখতে পারেননি ওই যুবক। যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরের বারান্দায় তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় সবাই। যদিও তখনই খবর দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। সঙ্গে নবদ্বীপ থানার পুলিশকে জানানো হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নবদ্বীপ থানার পুলিশ খবর পেয়ে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসে। পঞ্চায়েতের ১৮৯ নম্বর বুথের পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব দেবনাথও ঘটনাস্থল আসেন। অথচ ভোর থেকে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরেও দেখা মেলেনি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। বেলা বারোটা নাগাদ ওই যুবকের পরিবারের লোকজনই ঝুলন্ত মৃতদেহ নিচে নামান। এরপরেও কেটে যায় আরও প্রায় আড়াই ঘন্টা। তখনও পৌঁছায়নি কৃষ্ণনগর থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের শববাহী গাড়ি। অবশেষে বেলা ২টা ৪০ মিনিটে এসে পৌঁছায় সেই গাড়ি। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নবদ্বীপ শ্মশানে। কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটারের মত। অথচ এই সামান্য পথ পেরিয়ে আসতে স্বাস্থ্যকর্মীদের লেগে গেল প্রায় ৬ ঘন্টা। স্বভাবতই স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে জেগেছে প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.