পলাশ পাত্র, তেহট্ট: কাগজের কাপে হোক কিংবা ভাঁড়ে, পথে-ঘাটে চা তেষ্টা পেলে পাঁচ টাকা তো খরচ করতেই হয়। কিন্তু যদি বলি, এক টাকাতেও এক কাপ চা পাওয়া যায়! বিশ্বাস না হলে চলে যান কৃষ্ণনগরে। পুরসভার সামনে মাত্র এক টাকাতেই প্রতিদিন চা বিক্রি করছেন এক যুবক। তাঁর সাফ কথা, ‘আমার চলে গেলেই হল। মানুষের কাছ থেকে বেশি কেন নেব?’
কৃষ্ণনগর শহরে রাজার দিঘির কাছে নর্থ গড় লেনে থাকেন সন্তু দাস। তাঁর বাবা একসময়ে রিকশা চালাতেন। পরে কৃষ্ণনগর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে চাকরি পান। অভাবে সংসারে স্কুলের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। কিশোর বয়সেই কৃষ্ণনগর পুরসভার সামনে চায়ের দোকান দিতে হয় সন্তুকে। তখন চা বিক্রি করতেন এক টাকায়। তারপর জলঙ্গী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। পুরসভায় বাবার চাকরি পাকা হয়েছে। সংসারেও এখন আর ততটা অভাব নেই। সন্তু দোকানে কিন্তু চায়ের দাম বাড়েনি। এখনও ১ টাকাতেই লিকার চা পাওয়া যায়! আর যদি দুধ চা খেতে চান, তাহলে দিতে হবে দু’টাকা!
ভোর চারটে দোকান খোলেন সন্তু। দোকান বন্ধ করতে করতে বিকেল গড়িয়ে যায়। প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে যাঁরা কৃষ্ণনগর পুরসভায় আসেন, তাঁরা সন্তুর দোকান থেকেই চা খান। দিনে কম করে হলেও চার হাজার টাকার কেনা-বেচা হয়। কথায় বলে, চেষ্টা থাকলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু, তা বলে এই বাজারে এক টাকায় এক কাপ! এও কি সম্ভব? সন্তু দাসের দাবি, দুই চামচ চা-পাতা দিয়ে নাকি দশ কাপ চা তৈরি করা যায়। এক চাপ তৈরি করতে খরচ হয় বড়জোর সত্তর পয়সা! তাই লোক ঠকাতে রাজি নন ওই চা-বিক্রেতা। বরং ন্যায্য দামে সবাইকে চা খাইয়েই তৃপ্তি পান তিনি। পুরসভার বাইরে যে এমন অভিনব চায়ের দোকান চলে, তা জানেন কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রশাসক সৌমেন দত্তও। সন্তুকে সবরকমভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.