রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: পুজো মানেই সর্বত্র আনন্দের ছোঁয়া। উমা আসছেন। এমনদিনে মন খারাপের কোনও চিহ্ন থাকা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু কোনও কোনও বাড়িতে উৎসবের মেজাজ ফিকে। আনন্দ সেখানে প্রবেশাধিকার পায়নি। তেমনই একটি বাড়ি শতরূপা দেবনাথের। মাসখানেক আগে তার ক্যানসার ধরা পড়ে। কিন্তু দুর্গাপুজো তার মুখে একটু হলেও হাসি ফুটিয়েছে। পুজোর বোনাস থেকে অসুস্থ এই ছাত্রীর কেমোর জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে কালনার বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। আর পুজোর মুখে মেয়ের চিকিৎসার খরচ পেয়ে হাসি ফুটেছে শতরূপা ও তার পরিবারের মুখে।
কালনার নিভুজির বাসিন্দা শতরূপা দেবনাথ কয়েক মাস আগেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। কৃষ্ণদেবপুর হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী শতরূপা স্কুলের বেঞ্চে পায়ে আঘাত পেয়ে গুরুতর জখম হয়েছিল। সেই জখম পরবর্তীকালে তা বোন-ক্যানসার রূপ নেয়। পরিবারের লোকজন তাকে চেন্নাইয়ের একটি নামী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসকরা তার পায়ে অস্ত্রপচার করেন। কিন্তু শতরূপার পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল কেমোথেরাপি দেওয়ার। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতই দুর্বল ছিল যে মেয়েকে সুস্থ করার জন্য কেমো দেওয়ারও টাকা ছিল না। তাই পুজোর মুখে অন্য বাড়ির বাবা-মায়েরা যখন কচিকাঁচাদের নতুন পোশাক কেনায় ব্যস্ত, তখনই শতরূপার বাড়ির চিন্তা ছিল মেয়ের কেমোর খরচ কীভাবে জোগাড় করা যায়।
ওই এলাকাতেই মহিলাদের গোষ্ঠী ঋণের কাজের জন্য যাতায়াত করছিলেন সংস্থার কয়েক জন কর্মী। তাঁরাই গ্রামে গিয়ে জানতে পারেন টাকার অভাবে ক্যানসার আক্রান্ত ছাত্রীর চিকিৎসা হচ্ছে না। তারপরেই ওই সংস্থার কর্মী কৌশিক পাল, কোয়েল রায়, রাখাল মণ্ডল, তৈলক্ষ বিশ্বাসরা সহকর্মীদের নিয়ে শনিবার সকালে শতরূপাদের বাড়ি পৌঁছে যান। সেখান থেকেই পরিবারের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন তাঁরা। কৌশিক পাল বলেন, “আমরা চাই পুজোর সময় কেউ সমস্যায় না থাকে। তাই ওর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করলাম।” ওই ছাত্রীর মা রিঙ্কু দেবনাথ বলেন, “আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। ওনারা পাশে না দাঁড়ালে ওর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারতাম না। পুজোর আনন্দ বলে আর কিছুই থাকত না।” মহালয়ার দিনে ওই যুবকদের এমন মানবিক কাজের প্রশংসা করছে কালনার সুশীল সমাজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.