শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: এই মাস পেরলেই রথযাত্রা। জুলাই ১ তারিখ রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। আর তার আগে মুর্শিদাবাদের (Mushidabad) রঘুনাথগঞ্জের আঠাশ বছরের যুবক সুদীপ্ত সরকার মহা ব্যস্ত তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে। সুদীপ্তর হাতের নিপুণ ভাস্কর্যে ফুটে উঠছে কাঠের মাত্র তিন ফুটের মহাপ্রভু জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা! এরকম দশটি মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে জার্মান,অস্ট্রেলিয়া,দক্ষিণ আমেরিকা, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ ও নেপাল। চলছে শেষ পর্ষায়ের তুলির টান।
রঘুনাথগঞ্জ দু’নম্বর ব্লকের তেঘড়ির যুবক সুদীপ্ত সরকার ওরফে বাপ্পা দাস। ২০০৯ সালে নিজের বাড়িতে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার কাঠের মূর্তি দেখে প্রথম মূর্তি গড়ার কাজে হাত লাগান সুদীপ্ত। প্রথম থেকেই তিন দেবদেবীর কাঠের (Wood) মূর্তি গড়া শখ ছিল তাঁর। ২০১৩ সাল থেকে মূর্তি গড়ার কাজকে ব্যবসা হিসাবে বেছে নেন তিনি। সারা বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫০টি মূর্তি সরবরাহের বরাত পেয়ে থাকেন। মুর্শিদাবাদের বাইরে হাওড়া, কোচবিহারের পাশাপাশি বিহার ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ ও বেঙ্গালুরুতেও বাপ্পা দাসের তৈরি কাঠের মূর্তির চাহিদা প্রচুর।
১ জুলাই রথযাত্রার (Rath Yatra) আগে এবার জগন্নাথ-বলরামপুর-সুভদ্রার দশটি মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে জার্মান, দক্ষিণ আমেরিকা, মালয়েশিয়া, নেপাল, বাংলাদেশ ও অস্টেলিয়ায়। নিমকাঠ দিয়ে তৈরি মূর্তির সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩ ফুট। শুধুমাত্র কাঠের উপর খোদাই করে কোনও পেরেক ব্যবহার না করেই মহাপ্রভুর মূর্তি গড়া হয়। তারপর মূর্তিতে রং করা হয়। বিনা পেরেকে নিমকাঠ দিয়ে ৮ ইঞ্চির উচ্চতার কম মহাপ্রভূর মূর্তি গড়া হয় না। তিন ফুটের মহাপ্রভুর মূর্তির দাম ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। আড়াই ফুটের মূর্তির দাম ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া ৮ ইঞ্চির মূর্তির দাম ৮ হাজার টাকা। ফাল্গুন মাস থেকে রথযাত্রার জন্য মূর্তির অর্ডার নেওয়া শুরু হয়।
সারা বছরে ১০০ টি বিভিন্ন আকারের কাঠের মূর্তি গড়ে থাকেন বাপ্পা দাস। বড় সাইজের একটি মূর্তি গড়তে সময় লাগে প্রায় একমাস। ছোট সাইজের জন্য সময় লাগে দশ থেকে বারো দিন। তিন দেবদেবীর মূর্তির পোশাক ও গয়না তৈরিতে তাঁকে সাহায্য করেন স্ত্রী অঙ্কিতা সরকার। বাপ্পার কথায়, ”বাড়ির মহাপ্রভুর মূর্তি দেখে প্রথম শিশু কাঠ দিয়ে মূর্তি গড়ি। কারও কাছ থেকে কোনও প্রশিক্ষণ নিইনি। মহাপ্রভু নিজেই তাঁর দাসকে দিয়ে নিজের মূর্তি গড়িয়ে নিচ্ছেন। তাই মহাপ্রভুর দাস হিসাবে সকলের কাছে আমি আজ সুদীপ্ত ওরফে বাপ্পা দাস পরিচিত। যতদিন বেঁচে থাকব মহাপ্রভুর দাস হিসাবেই সেবা করে যাব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.