ছবি: প্রতীকী
রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: প্রথম উপার্জনের টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন ছেলে। তারপরই রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেই টাকা মায়ের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছেছিল কিনা জানতেই ফোন করেন মাকে। মায়ের সঙ্গে সুখ দুঃখের কথা বলতে বলতেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলে। কিন্তু আচমকা একটা ট্রেনের হর্নের শব্দে কেটে গেল ফোনটা। মা আর কিছু শুনতে পেলেন না। তারপর বারবার ফোন করেও ছেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। দূরে বাড়িতে বসে মা ভাবতেও পারেননি সেটাই ছিল ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ কথোপকথন।
বারবার চেষ্টা করে যখন জানতে পারেন সুইচড অফ হয়ে গিয়েছে ফোন, তখনই আঁচ করেন ঘটনাটা। অশুভ কিছু একটা আশঙ্কা করেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মায়ের মন মিথ্যে বলেনি। কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে ছেলে আর নেই। রবিবার রাতে সমুদ্রগড় ও কালীনগরের মাঝে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় সুমন রায়ের (১৯)। মঙ্গলবার সকালে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য কালনা আসে সুমনের পরিবার। এসে জানতে পারেন মর্মান্তিক সেই ঘটনার কথা। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অসাবধানতাবশত ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান সুমন। তারপর থেকেই শোকের ছায়া তাঁর পরিবারে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা।
রবিবার রাতে ওই যুবকের মৃত্যুর পর সোমবার সকালে মৃতদেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর জানানো হয়, রাতে কানে ফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করে রেল লাইন ধরে হাঁটার সময়ই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় উত্তর দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সুমনের। মঙ্গলবার পরিবারের লোকেরা আসতেই জানা যায় শেষ ফোন কলে মা মল্লিকাদেবীর সঙ্গেই কথা বলছিলেন তিনি। মৃতের বাবা গোপাল রায় বলেন, “ওই ফোন কলটাই যে ওর সঙ্গে শেষ কথা বলা হবে তা ভাবতেও পারিনি। ফোনে কথা বলার সময় বাড়িতে আমিও ওর মায়ের পাশেই বসেছিলাম। ও রেল লাইন ধরে হাঁটার সময় ফোনে কথা বলছিল জানলে কখনওই ফোন কেটেই দিতাম৷” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গারামপুর থেকে সুমুদ্রগড়ে সুমন এসেছিলেন তাঁতের কাজ করে রোজগারের আশায়। দু’মাস কাজ করার পর জমানো টাকা থেকে প্রথমবার মাকে আড়াই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। সেই টাকা পরিবারের কী কাজে লাগবে, সেসবই খোঁজ নিচ্ছিলেন সুমন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.