দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সাপে কামড়ানো যুবককে চিকিৎসকের পরিবর্তে নিয়ে যাওয়া হল ওঝার কাছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে দফায় দফায় চলল ঝাড়ফুঁক। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকালে যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল ঠিকই। তবে ততক্ষণে কেটে গিয়েছে প্রায় একরাত। তাই চিকিৎসায় কোনও লাভ হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরই মৃত্যু হল যুবকের। কুসংস্কারের মর্মান্তিক পরিণতির সাক্ষী সন্দেশখালি ব্লকের সুখদুয়ানি গ্রাম।
ঠিক কী ঘটেছিল? সন্দেশখালি (Sandeshkhali) ব্লকের সুখদুয়ানি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় বৈদ্য জীবনের ছাব্বিশটি বসন্তের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন সবে। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বাড়ির কাছে ঘাস পরিষ্কার করছিলেন সঞ্জয়। ঘাসের আড়ালেই যে ঘাপটি দিয়ে বিপদ বসে আছে তা টেরও পাননি। আচমকাই সাপের ছোবল। যেন গোটা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় তাঁর। মাটিতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লুটিয়ে পড়েন। সুস্থ ছেলেটার কী এমন হল, প্রশ্ন জাগে সকলের মনে। কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন সঞ্জয়কে সাপে কামড়েছে। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে।
স্থানীয়দের দাবি, ওঝা সঞ্জয়কে একটি গাছের অংশ খেতে দেন। সেই অনুযায়ী সঞ্জয় তা খেয়েও ফেলেন। তারপর তাঁর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে রাতে বাড়ি ফিরে যান। তবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই যুবক। অভিযোগ, তাঁর বমি হতে শুরু করে। তাই ফের সঞ্জয়কে রাত দশটা নাগাদ ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তারপরেও অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালে সকলেই বুঝতে ঝাড়ফুঁক ব্যর্থ। তাই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। কিছুক্ষণ চিকিৎসার পর হাসপাতালেই মৃত্যু হয় সঞ্জয়ের।
সর্পবিশারদ ডাঃ সময় রায় বলেন, “ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করানোর পরই আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয় যুবককে। তাঁর অবস্থা সেই সময় অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল। তাই আমাদের পক্ষে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।” সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সঞ্জয়কে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হত বলেও দাবি তাঁর। সমাজ বদলেছে। বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় মানুষের জীবনের প্রত্যেক মুহূর্ত হয়ে গিয়েছে একেবারে অন্যরকম। প্রযুক্তিক ছোঁয়ায় জীবনযাত্রা বদলালেও, মানসিকভাবে সত্যি এগোতে পেরেছে প্রত্যেক মানুষ? এই ঘটনার পর সেই প্রশ্নই যেন আরও একবার মাথাচাড়া দিচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.