ধীমান রায়, কাটোয়া: কাটোয়ার (Katwa) গুলি কাণ্ডে এবার পুলিশের জালে নাবালিকার প্রেমিক লালচাঁদ শেখ। নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে লালচাঁদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়া এলাকায় বাড়ি থেকেই লালচাঁদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিনই তার বিরুদ্ধে নাবালিকার মা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, লালচাঁদ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার নাবালিকার সঙ্গে সহবাস করে। এমনকি সহবাসের ফলে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে বলেও দাবি তার মায়ের।
বুধবার রাতে প্রেমিক লালচাঁদ শেখকে লক্ষ্য করে ওয়ান সার্টার পিস্তল থেকে গুলি চালায় কাটোয়ার বাগানেপাড়ার বাসিন্দা সতেরো বছরের ওই কিশোরী। তার পরিবারের দাবি, শারিরীক সম্পর্কের পরেও বিয়ে করতে অস্বীকার করায় ওই কিশোরী তার প্রেমিককে ফোনে ডেকে চুম্বনের পর গুলি চালায়। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় কোনওরকমে প্রাণে বাঁচেন লালচাঁদ শেখ। তার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোরীকে। উদ্ধার হয় পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি। পুলিশ সূত্রে খবর জেরায় কিশোরী জানায়, একটি নাচের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে উত্তরপ্রদেশ থেকে ওই আগ্নেয়াস্ত্র চুরি করে কাটোয়ায় এসে প্রেমিককে খুন করার পরিকল্পনা ছিল ওই কিশোরীর।
কাটোয়ার বাগানেপাড়ায় টালির ছাউনি ভগ্নপ্রায় ঘরে বসবাস ওই কিশোরীর পরিবারের। কিশোরীর বাবা ও দাদা ভিনরাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকত কিশোরী। অভাবের সংসার। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তারপর আর পড়া হয়নি ওই কিশোরীর। মাত্র তেরো বছর বয়সেই লালচাঁদের সঙ্গে আলাপ হয় তার। কিশোরীর মা জানান, কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়ায় তাদের আত্মীয় রয়েছেন। আত্মীয়ের বাড়ি যাতায়াতের মাঝে লালচাঁদের সঙ্গে তার মেয়ের পরিচয় হয়েছিল।
দু’বছর আগে কাটোয়া শহরে একটি স্টেশনারী দোকানে কাজে লাগে কিশোরী। মাসিক ২৫০০ টাকা বেতন। কিশোরীর মায়ের কথায়,” আমরা গরিব। মেয়ের শখ মেটাতে পারতাম না। মেয়ে নিজের রোজগারেই নিজের খরচ জোগাত। কিন্তু দোকানে কাজ করার সময় লালচাঁদ তখন থেকেই আমার মেয়ের পিছু লেগেছিল। তখন দু’জনের মধ্যে প্রেম হয়। আর প্রেমে পড়ার পর দোকান মালিক কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেন।”
কিশোরীর মা জানান, লালচাঁদের সঙ্গে তার মেয়ে প্রেমে জড়িয়ে পড়ার পর তাদের বিয়ের জন্য দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিল। তখন লালচাঁদের পরিবার ৬০ হাজার টাকা এবং ৩ ভরি সোনার গয়না-সহ আরও কিছু সামগ্রী দাবি করে। কিন্তু মেয়েটির পরিবারের সেই সামর্থ্য ছিল না। কিশোরী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ঝাড়খণ্ডে মাসির বাড়িতে চলে যায়। পুলিশ জানতে পেরেছে, ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার পরেও কিশোরী লালচাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।
কিশোরী আশায় ছিল তার সঙ্গে প্রেমিক লালচাঁদের ঠিক বিয়ে হবে। তবে ভিনরাজ্যে চলে যাওয়ার পর বন্ধুবান্ধবদের কাছে লালচাঁদের সম্পর্কে খবরাখবর নেয় কিশোরী। কিশোরী পুলিশের জেরায় জানায়, সম্প্রতি সে জানতে পারে লালচাঁদ অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কিশোরীকে নিয়ে এলাকায় নানা কুমন্তব্যও করেছিল লালচাঁদ। তখনই কিশোরী তার বদলা নেওয়ার ছক কষতে থাকে। এদিকে, লালচাঁদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.