Advertisement
Advertisement

Breaking News

Young man carries mother's body on shoulder in Jalpaiguri

অর্থাভাবে মেলেনি শববাহী গাড়ি, মায়ের দেহ কাঁধে হাঁটছেন ছেলে, জলপাইগুড়িতে ভাইরাল করুণ ছবি

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অসহায় ছেলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

Young man carries mother's body on shoulder in Jalpaiguri । Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী।

Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 5, 2023 3:52 pm
  • Updated:January 5, 2023 7:29 pm  

শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সাকুল্যে মাত্র বারোশো টাকা ছিল তাঁর কাছে। এই টাকায় স্ত্রীর মৃতদেহ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য হাতজোড় করে কাকুতি মিনতি পর্যন্ত করেছিলেন বৃদ্ধ জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। কিন্তু রাজি হননি জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বাইরে থাকা কোনও অ্যাম্বুলেন্স বা শববাহী গাড়ির চালক। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না পেয়ে স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেন বৃদ্ধ জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। সঙ্গী ছেলে। জলপাইগুড়ি থেকে ক্রান্তির নগরডাঙা প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার পথ। মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন বাবা ও ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে জলপাইগুড়ির রাস্তার এই দৃশ্য নাড়া দিয়ে যায় অনেককেই। মনে করিয়ে দেয় ওড়িশার কালাহান্ডির দানা মাঝির ঘটনা। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন দানা মাঝি। বছর কয়েক আগের মর্মান্তিক সেই দৃশ্যের সঙ্গে এদিনের ঘটনার অনেকটাই মিল খুঁজে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার পরে অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তাঁরাই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে বৃদ্ধ জয়কৃষ্ণবাবুর স্ত্রীর দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

বুধবার রাতে অসুস্থ স্ত্রী লক্ষ্মীরানি দেওয়ানকে (৭২) মেডিক্যাল কলেজের অধীনে থাকা জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করেন ক্রান্তির বাসিন্দা জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীরানির। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে শববাহী গাড়ির খোঁজ শুরু করেন জয়কৃষ্ণ। হাসপাতালের বাইরে গাড়ি পেয়েও যান তাঁরা। কিন্তু মৃতদেহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে ৩ হাজার টাকা ভাড়া চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। জয়কৃষ্ণবাবু জানান, তাঁদের কাছে মাত্র ১২০০ টাকাই ছিল। অসুস্থ স্ত্রীকে বাড়ি থেকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পর্যন্ত আনতে ভাড়া দিয়েছিলেন ৯০০ টাকা। এক্ষেত্রে ১২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছিলেন তাঁরা। হাতজোড় পর্যন্ত করেছিলেন, কিন্তু রাজি হননি কেউই। জানান, দিনমজুরি করে এর বেশি দেওয়ার সামর্থ্য কোথায়? বাধ্য হয়ে বাবা আর ছেলে মিলে মৃতদেহ কাঁধে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘রাজনৈতিক কারণে দল পাঠাচ্ছে, আগে ১০০ দিনের কাজের টাকা দিন’, সরাসরি কেন্দ্রকে নিশানা মমতার]

ততক্ষণে এই দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে মৃতদেহ নিখরচায় বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তারা। গ্রিন জলপাইগুড়ি সংগঠনের সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। জলপাইগুড়ির মতো শহরে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। আমরা খবর পেয়ে এগিয়ে আসি। গরিব পরিবারটিকে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দিয়ে সাহায্য করি।” একইসঙ্গে হাসপাতালের বিনামূল্যের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা এবং বেসরকারি সংস্থার পরিষেবার নামে জোরজুলুম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ঘটনার খবরে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য প্রশাসন। মেডিক্যাল কলেজের সুপার এবং ভাইস প্রিন্সিপাল কল্যাণ খাঁ বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। হাসপাতালে রোগী সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। পরিবারটি রোগী সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে যোগাযোগ করলে নিখরচায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পেয়ে যেতেন। হয়তো তারা যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি। আর যারা অসহায় এই পরিবারটির কাছ থেকে এত বেশি টাকা ভাড়া বাবদ চেয়েছেন তারা অন্যায় করেছেন।”

ঘটনার কথা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন তিনি। এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য সমস্ত রকমের পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। এদিকে, প্রশাসন সূত্রে খবর অ্যাম্বুল্যান্স চালক অসহায় এই পরিবারটির কাছে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো জানান, ওই চালকের লাইসেন্স সাসপেন্ড করার জন্য আরটিও’র কাছে আবেদন জানানো হবে।

[আরও পড়ুন: টেট পরীক্ষার্থীকে কে করল ফোন? কলকাতা হাই কোর্টে মুখ খুলল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement