দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কেউটের কামড়ে ছটফট করছেন সুন্দরবনের বাসন্তীর যুবক। চিকিৎসকের পরিবর্তে তাঁকে নিয়ে ওঝার দ্বারস্থ পরিবার। সেখানেই চলল তুকতাক। বিষ নামাতে যুবকের মুখে ঢালা হল ২ লিটার দুধ। ঠুসে দেওয়া হল গুচ্ছের আদা। এদিকে ক্রমশ যুবকের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে ভয়ে হাল ছেড়ে দেন ওঝা। তড়িঘড়ি যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। বরাতজোড়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক সর্দার। বৃহস্পতিবার ওই যুবক ধানখেতে গিয়েছিলেন কীটনাশক দিতে। সেই সময়ই তাঁর ডান পায়ে কামড় দেয় কেউটে। সাপটি দেখতে না পেলেও লেজটি কার্তিকের নজরে পড়ে। তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে বিষয়টা জানান তিনি। এরপরই চিকিৎসকের পরিবর্তে যুবককে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে ৬ ঘণ্টা ধরে রীতিমতো দাদাগিরি দেখায় ওঝা। চলে ঝাড়ফুঁক, তুকতাক। খাওয়ানো হয় গাছের শিকড়। তাতেও কাজ না হওয়ায় যুবককে খাওয়ানো হয় ২ লিটার দুধ। অভিযোগ, অসুস্থ যুবকের মুখে ঠুসে দেওয়া হয় গুচ্ছের আদা। এভাবেই পেরিয়ে যায় প্রায় ৬ ঘণ্টা। এদিকে কার্তিকের অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে।
রাতেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতায় শুরু হয় চিকিৎসা। তড়িঘড়ি আক্রান্তকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের তৎপরতায় মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেও বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন কার্তিক। এ প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ডাঃ সমরেন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছেন, “এবার নতুন ঘটনার আবির্ভাব হয়েছে। সাপে কামড় দিলে দুধ, আদা খাওয়ানো হচ্ছে। এটা বুজরুকি। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। সাপে কামড় দিলে গাছ-গাছড়া, দুধ কিংবা আদা খাওয়ালে সারবে না। বরং মারা যাবে রোগী। প্রয়োজন এভিএস। তাই সাপ কামড় দিলে সরাসরি নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে রোগী ১০০ ভাগ নিশ্চিতভাবে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরবেন। অন্যথায় মৃত্যু মুখে পড়তেই হবে, কেউ বাঁচাতে করতে পারবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.