সংগ্রাম সিংহরায় : সেলফি তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে নদীর খাদে পড়ে মৃত্যু হল এক পর্যটকের। মৃত প্রিয়াঙ্কা বাগচি কলকাতার রাজারহাটের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শুক্রবার বিকেলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সিকিমের লাচুং চু নদীতে।
স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে লাচুং ঘুরতে এসেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। শুক্রবার বিকেলে সবাই মিলে লাচুং চু নদীর কাছে ঘুরতে যান। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের স্মৃতি মোবাইল ক্যামেরায় ধরে রাখতে সবাই যখন ব্যস্ত ঠিক তখনই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, বাকি সবাই নদীর থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন। কিন্তু, অতিরিক্ত সাহসী হয়ে নদীর দিকে পিছন করে ঝুঁকে সেলফি তোলার চেষ্টা করছিলেন প্রিয়াঙ্কা। হঠাৎ পা হড়কে নিচে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে খাদ থেকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্যাংটকের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। যদিও কেউ কেউ ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে ওই এলাকায় থাকা পর্যটকদের মধ্যে। এরপরই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে হিমালয়ান হোটেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের তরফে পর্যটকদের সেলফি তোলার উপর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল দাবি করেন, এই ধরনের হঠকারী কাজ যাতে রুখে দেওয়া যায় তার জন্য সরকারি বিধিনিষেধ দরকার। অন্যথায় এমন ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। সেলফি তুলতে গিয়ে এই ধরনের মৃত্যুর ঘটনা আগে অনেকবার ঘটলেও মানুষ যে সচেতন হচ্ছে না তা প্রিয়াঙ্কার দুর্ঘটনা ফের প্রমাণ করল। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, বারবার এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও বিপজ্জনক এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। আসলে দুর্গম জায়গায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট। তারপর নেটিজেনদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া বা তাদের থেকে তারিফ কুড়োনোর মানসিকতার বদল না হলে এইভাবে মৃত্যুর ঘটনা আর বাড়বে।
২০১৮ সালে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকাল সায়েন্সেস-র তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গোটা পৃথিবীতে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছে ২৫৯ জন মানুষ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ভারতে। তারপরই রয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা ও পাকিস্তান। মৃতদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের বয়স ১০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বলেও দাবি করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.