শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: পাড়ায় ঢুকতে হলে সাবান জল দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে। পরতে হবে মাস্ক। এখন আর বাড়ি বাঁচানোর লড়াই নয়, লড়াই গ্রাম ও পাড়া বাঁচানোর। পাড়া বাঁচলে বাড়ি বাঁচবে। বাড়ি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। তাই পাড়ায় ঢুকতে হলে সাবান জল দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে। শুধু বহিরাগতদের জন্য এই ফতোয়া নয়, যাঁরা পাড়ার বাইরে নেহাৎই কোনও প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাঁদেরকেও ফের পাড়ায় ঢুকতে হলে সাবান জল দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে। তাই পাড়ায় ঢোকার মুখে রাখা হয়েছে এক বালতি জল আর সাবান। এমন অভিনব উদ্যোগ চন্দ্রকোনা এক নম্বর ব্লকের মাংরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলাদন্ড গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। ঘাটাল শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এক প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী যুবকদের এই উদ্যোগ প্রংশসা কেড়ে নিয়েছে প্রশাসনের। যেখানে শিক্ষার আলো এখনও ঠিকমতো পৌঁছয়নি। যেখানে এখনও ডাইনি প্রথা আজও প্রবল। সেই আদিবাসী গ্রামে করোনা নিয়ে সচেতনতার চাবিকাঠি খুলে দিয়েছেন আদিবাসী যুবকরা।
চন্দ্রকোনার মাংরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলাদন্ড গ্রাম। এই গ্রামের একেবারে এক প্রান্তে রয়েছে ৪০টি আদিবাসী পরিবার। যাঁদের প্রায় ১০০ শতাংশই কৃষিজীবী ও দিনমজুর। শিক্ষার হার ২০ শতাংশও পেরোয়নি। সেই পাড়ার ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে গ্রামের মূল রাস্তা। করোনা নিয়ে সারা দেশ জুড়ে চলছে তীব্র আতঙ্ক। আতঙ্কিত আদিবাসী পরিবারগুলিও। করোনা রুখতে বারবার সাবান জল দিয়ে হাত ধোয়ার নিদান দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও আবেদন করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে পাড়ায় ঢোকার মুখে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন আদিবাসী যুবকরা। আর সেই ঘেরার সামনে রাখা হয়েছে এক বালতি জল ও সাবান। পাড়ায় ঢুকতে হলে সাবান জল দিয়ে হাত ধুতে যেমন হবে, তেমনি পরতে হবে মাস্কও। নচেৎ ফেরত যাও। মূল উদ্যোক্তা শুকলাল হাঁসদা, নবীন হেমব্রম, কালিপদ সোরেন, সুনাল মুর্মূর মতো আদিবাসী যুবকরা। নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিয়ে শুক্রবারই পাড়ায় ঢোকার মুখে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। আর সামনেই রেখে দেওয়া হয়েছে এক বালতি জল ও সাবান।
কেন এমন উদ্যোগ? শুকলাল হাঁসদা বলেন, “করোনা ভাইরাসকে তাড়ানোর এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। করোনা ঠেকাতে বারবার সাবান জল দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি আমাদের পাড়ায় বহু লোকই যখন তখন ঢুকে পড়ছে। কোনও নিয়ম মানাা হচ্ছে না। কোনও প্রয়োজন ছাড়াই পাড়ায় চলে আসছেন অন্য পাড়ার লোক। তাই তাঁদের ঠেকাতে আমরা পাড়ার মুখে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছি। আর সামনে রাখা হয়েছে সাবান জল। সবাইকে হাত ধুয়ে পাড়ায় ঢুকতে হবে। পরতে হবে মাস্কও। আমরা পালা করে নজরদারি করছি।”
আদিবাসী যুবকদের এমন অভিনব উদ্যোগ জেনে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রকোনা এক নম্বর ব্লকের বিডিও অভিষেক মিশ্র। তিনি বলেন, “ওঁদের প্রশংসা না করে পারছি না। দারুণ ভালো উদ্যোগ। ওঁদের কাছ থেকে বাকিদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। এই সচেতনতা সবার প্রয়োজন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.