রেললাইন লাগোয়া এই ছাতাটাঁড় মাঠ। মাঠেই পড়েছে তাঁবু।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অমৃতসরের ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেয়নি। রেললাইনের পাশে ২০-৩০ মিটারের মধ্যেই যাত্রার আসর বসিয়ে বিতর্কে জড়াল পুরুলিয়ার ঝালদার একটি দুর্গাপুজো কমিটি। গত ২০ অক্টোবর পাঞ্জাবের অমৃতসরে রেললাইনের পাশের জমিতে রাবণ দহন অনুষ্ঠানের ভয়াবহ পরিণতির স্মৃতি এখনও টাটকা। সেদিন ট্রেনে কাটা পরে একসঙ্গে অনেকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার একদিন পরেই ঝালদা শহরের দুর্গাপুজো কমিটি পুরসভার কার্যালয়ে রাবণ দহন করে বিতর্কে জড়ায়। সেই বিতর্কের রেশ এখনও কাটেনি। ফের আলোচনার শীর্ষে উঠে এল ঝালদা। এবার যাত্রাপালার আসরকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রেললাইন লাগোয়া ছাতাটাঁড় মাঠে বসেছে তাঁবু। রবিবার রাত থেকেই শুরু যাত্রাপালা। আগামিকাল সোমবারও থাকছে পালা।
এদিকে অমৃতসর কাণ্ডে ক্ষত এখনও শুকোয়নি। তার আগেই ঝালদার এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও রেল সূত্রের খবর, এই যাত্রাপালার দুদিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় ট্রেনের গতি ৩০ কিলোমিটারে বেঁধে দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, যাত্রাপালা হচ্ছে পুর শহরের তিন ওয়ার্ড লাগোয়া ঝালদা–দঁড়দা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এদিকে যাত্রার তাঁবুর অদূরেই রয়েছে রেললাইন। সেখান থেকে কোটশিলা-মুরি শাখার ট্রেন চলাচল করে। রেললাইন লাগোয়া মাঠে যাত্রার আসরের খবর পৌঁছেছে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। শুধু যাত্রা হলে তো আর হবে না। দর্শক আসারও ব্যাপার রয়েছে। তাই একই সঙ্গে পুর শহর ও লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকার দর্শক টানতেই এই যাত্রাপালার অবস্থান। রেলকর্তারাই বা কোথায় যান। তাই ঠিক হয়েছে যাত্রা শুরুর বেশকিছু সময় আগে থেকে শেষ হওয়ার পরেও খানিকক্ষণ ওই এলাকায় ট্রেনের গতি থাকবে ৩০ কিলোমিটার।
মূলত কোটশিলা-মুরি শাখায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলে। কিন্তু অমৃতসর কাণ্ডের পর কোনওরমক ঝুঁকি নিতে চাইছে না রেল। তবে বিপদ এড়াতে আরও বন্দোবস্ত হয়েছে। যাত্রার শুরু আগে থেকে শেষ হওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ ওই এলাকায় রেললাইন বরাবর আরপিএফ মোতায়েন থাকছে। তারপরেও বিপদের আশঙ্কা একটা থেকেই যাচ্ছে।আসলে রেলের নির্দেশিকার প্রতিলিপি জেলা প্রশাসনের কাছে না আসাতেই যত বিপত্তি হয়েছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অমৃতসরের ঘটনার পরই রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের তরফে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, রেললাইন লাগোয়া ৫০ মিটার এলাকায় জনসমাবেশ বা ওই ধরনের অনুষ্ঠান করা যাবে না। রেললাইন লাগোয়া এলাকার জমি রেলেরই থাকে। যদি কোনও জায়গায় তা ব্যক্তি বিশেষের জমি হয়, তবে সেক্ষেত্রে বিষয়টি রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীন।
এদিকে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে তাঁদের কাছে কোন নির্দেশিকা আসেনি। ফলে যাত্রাপালার আয়োজক ওঝাপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটিও রেলের নির্দেশিকা মানতে নারাজ। পুজোকর্তাদের দাবি, যাত্রাপালার আয়োজনের আগে ব্লক, থানা ও মহকুমা শাসকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। রেলের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। তবে এদিন বিষয়টি নিয়ে ঝালদায় শোরগোল পড়ে যায়। বিষয়টি দক্ষিণপূর্ব রেলের রাঁচি ডিভিশনের ডিআরএম বিজয় গুপ্তার কানেও আসে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাঁচি ডিভিশনের সেফটি অফিসারকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলেন। ডিভিশনাল সেফটি অফিসার বি কে সিনহা বলেন, “আমরা ওই এলাকায় ট্রেনের গতি বেঁধে দিয়েছি। ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলবে। তাছাড়া রেললাইন বরাবর আরপিএফ মোতায়েন রয়েছে।”
ঝালদা জুড়ে শোরগোল পড়েলেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি মহকুমা শাসক সুশান্ত কুমার ভক্ত। ওঝাপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এই যাত্রানুষ্ঠান নতুন নয়। ফি বছরই ভাইফোঁটার পরে এই ছাতাটাঁড় মাঠেই যাত্রার আসর বসে। এর আগে এনিয়ে কোনও বিতর্কও হয়নি। একাদশীর দিন অমৃতসর কাণ্ডে একসঙ্গে এত প্রাণহানির পরেই রেললাইন লাগোয়া জমিতে যাত্রানুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। তাই যাত্রার আসরে ঝালদা প্রশাসনের তরফে শুধু মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন ঝালদার উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক। সভাপতি ঝালদা পুর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লকের কাউন্সিলর তপন কান্দু। তিনি বলেন, “এই যাত্রানুষ্ঠান করতে যা যা অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় আমরা তা ব্লক, থানা, মহকুমা শাসক কার্যালয় থেকে নিয়েছি। তাছাড়া রেলও আমাদের কিছু বলেনি।” সমস্ত রকম অনুমতি মিললেও গোটা ঝালদার বাসিন্দারা চাইছেন নির্বিঘ্নেই মিটুক যাত্রাপালার আসর। তাহলেই স্বস্তি।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.