দুলু মুর্মু (ছবি- সুশান্ত পাল)
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: শুধুমাত্র পদবির ভুল। তাতেই বন্ধ রেশন একটি হতদরিদ্র পরিবারের। বন্ধ সমস্ত সরকারি প্রাপ্য। তাদের বাড়ি বলতে দুটি বাঁশের উপর ত্রিপল। ত্রিপলের আচ্ছাদনের তলায় রাত কাটে বর্ষায়। পেটে খিদে নিয়েই দিন চলছে তাঁর। এমনই হতদরিদ্র এক পরিবারের ছবি ফের ধরা পড়ল বীরভূমে। এবার মল্লারপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁকাগড়িয়া পাড়ায়। দীর্ঘদিন না খেতে পাওয়ায় ক্ষয়াটে রোগ ধরেছে শরীরে। যদিও জেলাশাসক মৌমিতা গোদারার দাবি, ওই মহিলা গত দু’সপ্তাহ আগে পর্যন্ত নিয়মিত রেশন তুলেছেন। অসুস্থতার জন্য দু’সপ্তাহ যেতে পারেননি।
দুলু মুর্মু। ষাটোর্ধ্ব ওই অবিবাহিত আদিবাসী মহিলা বাবার কাছেই থাকতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন একা। রেশনে যে খাবার মিলত তাতেই চলত তার পেট। কিন্তু রেশন কার্ড ডিজিটাল হতেই বদলে গিয়েছে তাঁর জীবনযাত্রা। ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ডে দুলু মুর্মু থাকলেও ডিজিটাল রেশন কার্ডে দুলু মুর্মুর জায়গায় হয়ে গিয়েছে দুলু লেট। তাতেই বন্ধ রেশন। দুলুর দাবি, রেশন সামগ্রী আনতে গেলে ডিলার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন রেশন কার্ডের নামের ভুল থাকায় রেশন দেওয়া যাবে না। ফলে প্রায় এক বছর ধরে রেশন বন্ধ। গ্রামের লোক মাঝেমধ্যে খেতে দিলে তাই খেয়ে পেট ভরায়।
[ নাতির চিকিৎসা করাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু দাদু ও জ্যাঠার ]
ডিলার অমৃত ঘোষ বলেন, “আমি কার্ড দেখলেই সামগ্রী দিই। ওই মহিলা রেশন সামগ্রী নিতেই আসেনি”। পদবির ভুলে এখনও পর্যন্ত মেলেনি বার্ধক্যভাতা। মেলেনি সরকারি বাড়ি। তাই ফাঁকা জায়গার উপর কয়েকটি বাঁশে প্লাস্টিকের ত্রিপল ঝুলিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে নিজেই। ত্রিপল ফুটে অবিরাম জল পড়ে ভিতরে। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান তিনি। ওই পঞ্চায়েতে সহায় প্রকল্পে শতাধিক অসহায় মানুষকে খাবার দেওয়া হলেও নজরে পরেনি দুলুর দিকে। তিনি বলেন, “আগে দিনমজুরি করতাম। খেতেও পেতাম। এখন কাজ করতে পারি না, খেতেও পাই না। তবু রেশন সামগ্রী পেয়ে এক বেলা খেতে পেতাম। কিন্তু পদবির ভুলে ডিলার আর রেশন দেয় না। কোথায় রেশন কার্ডের নাম সংশোধন করতে হয় তাও জানি না। ফলে এখন কেউ দিলে তবেই খেতে পাই। না দিলে সারাদিন না খেয়ে থাকি। দিন দিন চোখেও কম দেখছি। ফলে আগামী দিন কিভাবে যে চলবে বুঝতে পারছি না।”
ময়ূরেশ্বর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই মহিলা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি ওকে বলেছি বিডিও অফিসে গিয়ে কার্ডের নাম ঠিক করতে হবে। শুধুমাত্র নামের ভুলে রেশন পাচ্ছে না। বাড়ি কিংবা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। তবে আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধান করব। ওই মহিলাকে সহায় প্রকল্পে একবেলা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করব”।
[ সেনার চাকরির পরীক্ষায় ‘হাইটেক’ জালিয়াতি, পুলিশের জালে ৫ ]
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.