অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (CAA) প্রতিবাদে শনিবার দিনভর হাওড়ার বিভিন্ন শাখায় রেল অবরোধের মুখে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। তবে রবিবার সকালে বিক্ষোভের আঁচ অনেকটাই স্তিমিত হওয়ায় রেল চলাচল স্বাভাবিকের পথে। কিন্তু তার মধ্যেও বিপত্তি। হাওড়া থেকে রৌরকেল্লাগামী ইস্পাত এক্সপ্রেস এবং হায়দরাবাদগামী ফলকনুমা এক্সপ্রেস বাতিল হওয়ার ঘোষণা ঠিকমতো না হওয়ায় তুমুল যাত্রীবিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠল খড়গপুর স্টেশন। ঘণ্টা দুই ধরে চলে বিক্ষোভ। পরে যাত্রীদের চাপে পড়ে বিকল্প ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ, তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সকাল ৬ টার আশেপাশে হাওড়া থেকে ইস্পাত এবং ফলকনুমা এক্সপ্রেস ছাড়ার নির্ধারিত সময়। শনিবার দফায় দফায় রেল অবরোধের জেরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ট্রেন যে সময়মতো ছাড়বে না, তা খানিকটা আঁচ করেই ছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু গোল বাঁধল অন্যত্র। সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ হাওড়া স্টেশনে ঘোষণা হয় যে ইস্পাত এবং ফলকনুমা দুটি ট্রেনই হাওড়ার বদলে আজকের জন্য ছাড়বে খড়গপুর থেকে। তাই
যাত্রীরা যেন লোকাল ট্রেন ধরে সেখানে পৌঁছে নির্দিষ্ট ট্রেন ধরেন। ঘোষণা শুনে লোকাল ট্রেন ধরে খড়গপুরে পৌঁছে যান তাঁরা।
কিন্তু খড়গপুরে দেখা গেল ভিন্ন ছবি। সাড়ে ন’টা নাগাদ খড়গপুরে যাত্রীরা পৌঁছে দেখেন, ৯.১৫ নাগাদ, নির্দিষ্ট সময়ে খড়গপুর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে ফলকনুমা এক্সপ্রেস। অন্যদিকে, ইস্পাত এক্সপ্রেসও বাতিল। ফলে দুই ট্রেনের যাত্রীদের রোষ আছড়ে পড়ে। স্টেশন মাস্টারের ঘরে ঢুকে তাঁর কাছে জবাবদিহি চান যাত্রীরা। বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতিও শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয় আরপিএফও। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলে এই বিক্ষোভ।
ইস্পাত বাতিলের ঘোষণা কেন হাওড়াতেই করা হল না? কেনই বা ফলকনুমা এক্সপ্রেসও অপেক্ষা না করে ছেড়ে চলে গেল? এসব প্রশ্নেরই উত্তর পেতে চাইছেন যাত্রীরা। কিন্তু স্টেশন মাস্টার তার কোনও সদুত্তরই দিতে পারছেন না। যাত্রীদের অভিযোগ, সমন্বয়ের অভাবে এমন সমস্যার মুখে পড়লেন তাঁরা। কিন্তু নির্ধারিত দিনে টিকিট কাটা, সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়াও আছে। সেক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষকে তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে বলে দাবি তোলা হয়।
রোমিলা সেন নামে সেকেন্দ্রাবাদের এক চাকরিজীবী, যাঁর ফলকনুমা এক্সপ্রেসে ফেরার কথা ছিল, তিনি বলছেন, ”রেল যা করল, তা নিন্দা করার মতো ভাষা নেই। নিজেদের টাকায় নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছতে চাই। তাতেও এত বাধা। আজ তো অবরোধ বা অন্য কোনও ঝঞ্ঝাট ছিল না, তাহলে আজও কেন ঠিকমতো ঘোষণা করা হল না?” এরপর যাত্রীদের চাপে পড়ে ইস্পাত এবং ফলকনুমা রুটের জন্য দুটি বিকল্প ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। ইস্পাতের যাত্রীদের জন্য বিশেষ হাওড়া-ঘাটশিলা এক্সপ্রেসের ঘোষণা করা হয়। আর ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেসে ফলকনুমার যাত্রীদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সকাল থেকে এই দীর্ঘ ঝঞ্ঝাট স্রেফ রেলের সমন্বয়ের অভাবে, এমনটাই মনে করছে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
ছবি: সৈকত পাঁজা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.