নিজস্ব সংবাদাতা, তেহট্ট: ওদের কারও হাতে ক্রিকেটের গ্লাভস পড়ানো রয়েছে। কারো হাতে বা আবার কাগজের কাপ। কেউ শুধু হাসছে। কেউ বা হাসতে হাসতে থম মেরে যাচ্ছে। ওদের নাম অগ্নি, অয়ন, সৌর্য, রিওন। অটিজমে আক্রান্ত ওরা। তবে প্রতিবন্ধকতা ওদের আটকাতে পারেনি। এগিয়ে চলেছে ওরা নিজের মতো করেই। মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস।আর এই দিনটিকে উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে কৃষ্ণনগরে ছোট্ট পড়ুয়াদের রাখী পড়িয়ে হাত ধরার আবেদন রাখল তারা। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল অটিজমে আক্রান্ত বাইশ জন শিশু। তাদের বয়স দশ থেকে পনেরো। প্রায় দেড় কিমি পথ হাঁটল ওই শিশুরা।
[ আরও পড়ুন: চা শ্রমিক থেকে বিজেপির সম্ভাবনাময় প্রার্থী, চমকপ্রদ উত্থানে নজর কাড়ছেন জন বারলা ]
নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ‘উন্মেষ’ নামে একটি সংস্থা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিশুদের নিয়ে প্রায় বারো বছর ধরে কাজ করে চলেছে। বিয়াল্লিশ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে দেখভাল করেন সংস্থার কর্মীরা। তাদের মধ্যে ৩১ জন অটিজমে আক্রান্ত। এদিন হাঁটতে হাঁটতে হাতে গ্লাভস পরা অগ্নি নিজের মাথা, মুখে ঘুষি মারতে মারতে হাসছিল। ওটাই ওর আনন্দ। ওতেই খুশি অগ্নি। এদিন সে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ছোট্ট পড়ুয়াদের হাতে রাখী পড়িয়ে দেয় সে। মায়ের হাত ধরে এক হাতে কাগজের কাপ নিয়ে হাঁটছিল অয়ন। অয়নের মায়ের কাছ থেকে জানা গেল, ও শুধু কাপ নিয়ে পর পর সাজায়। নিজেই ভেঙ্গে দিয়ে ফের সাজায়। এটাই নাকি ওর খেলা। পাশে ছিল ওর বন্ধু রিওনও। বাজনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেচে ওঠে সে। একে একে স্কুলের পড়ুয়াদের রাখী পড়িয়ে দেয় ওরা। সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ব়্যালিতে অংশগ্রহণ নেন অভিভাবকরাও। তাদের প্রত্যেকের হাতেই ছিল অটিজম সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড। ছিলেন কৃষ্ণনগরের বহু বিশিষ্ট মানুষও।
[ আরও পড়ুন: ১০৮ বছরেও গণতন্ত্রের উৎসবে যোগ দেওয়ার উন্মাদনা, নজরে প্রবীণতম ভোটার]
বিশ্ব জুড়ে ১৯৯৯ সালে শুরু হয় অটিজম সচেতনতা পালন। তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি বিয়াল্লিশটা শিশুপুত্রে মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা এক। অন্যদিকে, পঁচাশিজন শিশুকন্যার মধ্যে একজন অটিজম আক্রান্ত। শৈবাল সরকার, কৌশিক ভট্টাচার্য, নন্দিনী নাগ, বিশ্বজিৎ দে- নামে এই চারজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অভিভাবক ‘উন্মেষ’ নামে একটি সংস্থার সূচনা করেন প্রায় বারো বছর আগে। শৈবালবাবুর বাড়িতেই এই শিশুদের চিকিৎসা চলে। স্পিচ থেরাপি, স্পেশাল এডুকেটর, অকুপেশনাল থেরাপি-এই তিন ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা এখানে রয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্যানুযায়ী, মূলত মস্তিষ্কে স্নায়ুর বিকৃতির জন্যই অটিজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। সত্তর থেকে আশি শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রেই প্রথমটায় রোগ ধরা যায় না। ছ’বছরের মধ্যে ভাল চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.