সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাপঞ্চমীতে টানটান নাটক রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলে। একদিকে সম্মান রক্ষার্থে তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্য পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য মুকুল রায়। তার খানিকক্ষণ পরেই আবার তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ৬ বছরের জন্য মুকুল রায়কে সাসপেন্ড করল দল। মুকুল দল ছাড়লেও তাঁর ছেলে বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় তৃণমূলেই থাকছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শুভ্রাংশুর ঘোষণা, “এটা পুরোপুরি বাবার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এই ঘোষণার সঙ্গে আমি একমত নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক ছিলাম, আছি, থাকব।”
দল ছাড়ার ঘোষণার তিন ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হন মুকুল রায়। সোমবার সকালে দলের ওয়ার্কিং কমিটির পদ থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের এই সাংসদ। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়ার পাশাপাশি পুজোর পর রাজ্যসভার সাংসদ পদেও ইস্তফা দেবেন তিনি। আর এই ঘোষণার পরই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, “সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ছ’বছরের জন্য মুকুল রায়কে সাসপেন্ড করা হল। গত কয়েক বছর ধরে দলে থেকে দলকে দুর্বল করার কাজ করছিলেন তিনি। দল অনেকদিন ধরেই তাঁর উপর নজর রাখছিল। তাই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” পাশাপাশি, দলবিরোধী কোনও কাজ মেনে নেওয়া হবে না বলে এদিন জানিয়ে দেন পার্থ।
কিন্তু কেন তিনি তৃণমূল ছাড়লেন তা এদিন জানাননি মুকুল রায়। বলেছেন, “পুজোর পর এ বিষয়ে মুখ খুলবেন।” সে প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব বলেন, “পুজোর অপেক্ষা কেন! উনি এখনই ছেড়ে দিন না। উনি দল ছাড়লে তো আর পুজো বন্ধ হয়ে যাবে না!” পঞ্চমীর সকালে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মুকুল জানান, “১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলে আছি। অত্যন্ত দুঃখ এবং বেদনা সঙ্গে নিয়ে জানাচ্ছি, এই মুহূর্তে আমি দলের কোনও পদাধিকারী নই। আছি ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে। একইসঙ্গে দলের প্রতীকে নির্বাচিত দলের রাজ্যসভার সাংসদও।” এরপরই তিনি জানান, “ই-মেল করে আজই ওয়ার্কিং কমিটি ও প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়ছি। পুজোর পরই রাজ্যসভার সাংসদ পদে ইস্তফা দেব।” তৃণমূল ছাড়ার কারণ এদিন না জানানোর ব্যাখা করতে গিয়ে মুকুল বলেন, “এখন মানুষ দুর্গাপুজোয় মেতে আছে। এই সময় রাজনীতির কথা মানুষ ভালভাবে নেয় না। যেদিন সাংসদ পদ ছাড়ব সেদিন জানাব।” এদিকে মুকুলের এই দল ছাড়ার ঘোষণার পরই সাংবাদিক সম্মেলন করে পার্থ বলেন, “কয়েক বছর ধরে তিনি দলের মধ্যে থেকে দলকে দুর্বল করার পরিকল্পনা করছিলেন। তবুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে নতিস্বীকার করে তিনি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছিলেন। দল তা মেনে নেবে না। তাই এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছ’বছরের জন্য মুকুল রায়কে সাসপেন্ড করা হল।”
পাশাপাশি মুকুলকে রাজনৈতিক মৃগয়া বলেও কটাক্ষ করেন পার্থ। বলেন, “রাজনৈতিক মৃগয়াদের তো চেনা কঠিন। যাঁকে পাড়ার লোকরা চিনতেন না তাঁকে দলে এনে রেলমন্ত্রী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সাধারণ ঘরের ছেলে, সারা ভারতবর্ষের মানুষ তাঁকে চিনেছিল। যাঁরা বিজেপি বা অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন তাঁদের অনুরোধ করব, তাঁরা এই ঘটনা মনে রাখবেন। আর মুকুল রায়কেও বলব, পুজো শেষের অপেক্ষা কীসের! যদি ছাড়ারই সিদ্ধান্ত নেন, পুজোর আগেই রাজ্যসভার পদটাও ছেড়ে দিন।। তিনি ভুলে গিয়েছেন, জগদ্দলে হেরে যাওয়ার পরও তাঁকে স্নেহ করে কাছে টেনে একাধিক পদে বসিয়েছেন। তারপরও এই ধরনের ঘটনা।”
দেখে নিন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.