শংকর রায়, রায়গঞ্জ: কথায় বলে নারীর অসাধ্য কিছুই নেই। ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’, সবেতেই নারী সিদ্ধহস্ত। একথা যেন আক্ষরিক অর্থেই খেটে যা উত্তর দিনাজপুরের একমাত্র মহিলা মুচির ক্ষেত্রে। চারদিকে যখন আন্তর্জাতিক নারীদিবসের (International Women’s Day) শুভেচ্ছার বন্যা এবং নানা নীতিকথার ফুলঝুরি, তখন নির্বিকার চিত্তে নিজের কাজ করে চলেছেন ইসলামপুরের সুজিয়া দেবীরাম।
এক সময় যে মহিলা চার দেওয়ালের অন্দরে স্বামীর সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকতেন, তিনিই আজ গোটা সংসারের হাল ধরেছেন। প্রায় আড়াই দশক ধরে ইসলামপুর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা সুজিয়াদেবী। একফালি ঘরেই মুচির কাজ করে চলেছেন। ক্রেতাদের এগিয়ে দেওয়া জুতো পালিশ করে দেন, চপ্পল সারিয়ে দেন। সবই হাসিমুখে করেন ষাটোর্ধ্ব বিধবা। আর এই রোজগারেই গত ২৪ বছর ধরে লালন-পালন করছেন।
জেলার একমাত্র মহিলা চর্মকার সুজিয়া দেবীরাম। চমৎকার কাজ করেন। কখনও কেউ খোঁজ নেন কী? প্রশ্ন শুনেই কড়া ভাষায় বৃদ্ধা বলেন, “চব্বিশ বছর ধরে জুতো পালিশ করে পেটের ভাত জোটাচ্ছি। সকালে ন’টায় দোকান খুলি। আর রাত ন’টায় বন্ধ হয়। এর মধ্যেই যা রোজগার হয় তা দিয়ে খাবার জোগাড় করি। তিনবার ঘরের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু সেই আমার ঝুপড়ি ঘরেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকি।”
এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কপালের ফের, বিয়ের পরই জামাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিবাহিত মেয়ে আবার মায়ের আশ্রয়েই ঝুপড়িতে ফিরে আসেন। এখন আর শরীরে তেমন জোর নেই। একটানা কাজ করতে পারেন না সুজিয়া দেবীরাম। অল্প সময়েই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। “কত লোক কত সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুই পাচ্ছি না। আর তো শরীর চলছে না”, আক্ষেপ বৃদ্ধার। তবুও কাজ করে যেতে হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের মুখ চেয়ে জুতো পালিশ করে চলেছেন উত্তর দিনাজপুরের একমাত্র মহিলা মুচি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.