সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: কুষ্ঠ আক্রান্ত শবর সম্প্রদায়ের এক মহিলাকে গ্রামে একঘরে করে রাখা হয়েছিল। ছড়ানো হচ্ছিল কুসংস্কার, গুজব। তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল শ্বশুরবাড়ি থেকেও। বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের নজরে আসতেই ওই মহিলার পাশে দাঁড়ালেন প্রশাসনিক কর্তারা। গ্রামে কুসংস্কার বিরোধী প্রচারেও নজর দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম ব্লকে আগুইবনি গ্রামপঞ্চায়েতের পূর্নাপানি গ্রামের পার্বতী শবর দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছিলেন। কুষ্ঠ আক্রান্ত এই বছর পঁয়ত্রিশের মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয় দেড় বছর আগে স্বামী মারা যান। এদিকে তাঁর নিজের শারীরিক অসুস্থতাও বাড়ছিল। পায়ে কুষ্ঠ ছড়াচ্ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে শ্বশুরবাড়ি থেকেও মিলছিল গঞ্জনা। তাড়িয়ে দেওয়া হয় শ্বশুরবাড়ি থেকেও।
এরপর গ্রামে তাঁকে একঘরে করে দেওয়া হয়। তাঁকে নিয়ে গ্রামে চলতে থাকে ভূত,প্রেতের নানা গুজব। ঝাড়গ্রাম ব্লক প্রশাসনের কাছে খবর আসার পরই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই মহিলার যথাযথ চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সমস্যা ছিল এক জায়গাতেই। অভিযোগ, মহিলা নাকি কিছুতেই ওষুধ খেতে চাইতেন না। জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াতেন।
পার্বতী শবর নামে ওই মহিলার এতটাই দৈন্যদশা যে মাটির ঝুপড়িতে মাথায় ছাওয়া বলতে ডালপালা। কোনও দরজা নেই। দিয়ে রুটি বেলেন কাঁচের বোতল দিয়ে। শুক্রবারই ঝাড়গ্রাম ব্লকের জয়েন্ট বিডিও সমস্ত খবর পান এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। শনিবার ঝাড়গ্রাম ব্লক অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের পরিদর্শক পল্লবী দত্ত, গ্রাম পঞ্চায়েতের সহায়ক প্রদীপ কুমার রায় এবং একজন চিকিৎসক ওই গ্রামে যান। মহিলাকে চাল,ডাল,গম সহ নানা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। রান্না করার বাসন পত্র,বালতি-সহ নানা ধরেনের সরঞ্জাম দেওয়া হয়। পাশাপাশি চিকিৎসক ওই মহিলাকে দেখা সহ গ্রামে একটি স্বাস্থ্য শিবির করে গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার করেন। প্রচারে বলা হয় কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে ভূত-প্রেতের কোনও সম্পর্ক নেই।
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রাম ব্লকের জয়েন্ট বিডিও চঞ্চল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘দেড় বছর আগে ওই মহিলার স্বামী মারা গিয়েছিল। কুষ্ঠ আক্রান্ত ওই মহিলাকে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ওষুধ খেতে চাইতেন না। ওনার শ্বশুরবাড়ি লোকজন তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। গ্রামবাসীরা একঘরে করে দিয়েছিল। খুবই খারাপ অবস্থায় ছিলেন। ওনাকে ব্লক থেকে খাদ্য সামগ্রী সহ রান্নার সরঞ্চাম দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক,অনগ্রসর শ্রেনী কল্যান দফতরের ব্লক পরিদর্শক,পঞ্চায়েতের সহায়ক গ্রামে এদিন গিয়েছিলেন। ওই মহিলা যাতে রুজি রোজগার করতে পারনে তার জন্য ঋনের ব্যবস্থা করা হবে।বাড়ি করে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হবে। তাঁর রোজগারের ব্যবস্থাও করা হবে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.