স্টাফ রিপোর্টার: শুকনো মুড়ি খেলেও বিষম ঢেকুর। পাতলা মাছের ঝোল খেয়ে বুক জ্বালা। গ্যাস অম্বলের চোটে সারারাত ঘুমাতে পারতেন না চন্দননগরের বাসিন্দা অধ্যাপক দীপান্বিতা রায়। বছরতিনেক এমন চলার পর ভেবেছিলেন এটাই ভবিতব্য। কে জানত? তাঁর ছয় ইঞ্চির অগ্ন্যাশয়ে ঘাপটি মেরে ২০ সেন্টিমিটার মাংসপিণ্ড! চিকিৎসকদের কথায়, তলপেটটা ঢিবির মতো উঁচু হয়ে ছিল। যেন পেট ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে কিছু। চন্দননগরের স্থানীয় চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন হার্নিয়া। শেষমেশ ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যানে ধরা পড়ল জায়ান্ট সেরাস সিস্টাডেনোমা অফ প্যানক্রিয়াস। অগ্ন্যাশয়ের এক বিরল টিউমার। ১০০ জনের অগ্ন্যাশয়ে টিউমার হলে মাত্র দু’জনের এমনটা দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নথি বলছে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই এই টিউমারের আকার হয় ১ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের মধ্যে। কিন্তু এখানে?
গ্যাস্ট্রো ইনটেসটিনাল অ্যান্ড হেপাটো প্যানক্রিয়াটিকো বাইলারি সার্জন ডা. শুদ্ধসত্ত্ব সেনের কথায়, ২০ সেন্টিমিটার টিউমারটি অগ্ন্যাশয়ের লেজ থেকে মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মাত্র ছ’ইঞ্চি অগ্ন্যাশয়ে অতবড় টিউমার! তলপেটের একটা জায়গা উঁচু হয়ে ছিল। যেন পেট ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। শেষ এক বছর ধরে তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা। বছর পঞ্চান্নর অধ্যাপকের শরীরে বাসা বেঁধেছিল কোষ্ঠকাঠিন্যও। তবে এসবের নেপথ্যে কারণ একটাই। কাজ করছিল না তাঁর প্যানক্রিয়াস। চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেনের কথায়, শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এটি। প্যানক্রিয়াসের দু’টি কাজ। প্রথমত পাচক রস বা এনজাইম তৈরি করা। যা আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। দীপান্বিতাদেবীর প্যানক্রিয়াস সে কাজে পুরোপুরি ব্যর্থ। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নিত্যসঙ্গী হয়েছিল গ্যাস,অম্বল। শর্করা, আমিষ আর স্নেহ, তিন ধরনের খাবার হজমেই সাহায্য করে অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হওয়া উৎসেচক। প্যানক্রিয়াস কাজ না করায় কিছুই হজম করতে পারছিলেন না দীপান্বিতা। প্যানক্রিয়াসের সঙ্গে আবার কিছু ডাক্টের মাধ্যমে ইনটেস্টাইন বা অন্ত্রের সংযোগ থাকে। যেগুলি দিয়ে প্যানক্রিয়াসে তৈরি পাচক রস অন্ত্রে পৌঁছয়। তারপরেই খাবার হজমের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্যানক্রিয়াসের আর একটি কাজ হল ইনসুলিন বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরি করা।
দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল দীপান্বিতার। দেড় ঘণ্টার যে জটিল অস্ত্রোপচারে নতুন জীবন পেয়েছেন তিনি, তার নাম রেডিক্যাল অ্যান্টিগ্রেড মডিউলার প্যানক্রিয়াটোস্প্লেনেকটমি। সম্পূর্ণ টিউমারটি বাদ দেওয়া হয়েছে। রোগীর শরীর দুর্বল ছিল। অস্ত্রোপচারে রক্তক্ষরণ হলে বিপদ হতে পারত। সে কারণে অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারে ছিটেফোঁটাও রক্তক্ষরণ হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.