সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারের অভিযোগ ছিল। সমস্যার কথা বারবার বলা সত্ত্বেও সুরাহা হতো না। এবার সেসব বঞ্চনা অনেকটাই শেষ। সন্দেশখালির দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের (Shahjahan Sheikh) শাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে। আর তাতেই নিশ্চিন্তির হাওয়া বইছে সন্দেশখালির (Sandeshkhali) মহিলা মহলে। রবিবার মিষ্টিমুখ করে, সকলকে চা খাইয়ে আনন্দে মাতলেন তাঁরা। তবে এই দাবিও তুলছেন তাঁরা। শুধুমাত্র শিবু হাজরা নয়, শেখ শাহাজানকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। তবেই পুরোপুরি শান্তি ফিরবে সন্দেশখালিতে।
শনিবার শাহজাহানের দুই অনুগামী শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে। সন্দেশখালি নিয়ে ওইদিনই সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার (Rajeev Kumar) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আর তাঁর এই সাংবাদিক বৈঠকের ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যেই ন্যাজাট থেকে গ্রেপ্তার (Arrest) হয়েছে শিবু হাজরা। আর সেই খবর শুনেই এতদিনের চাপা আতঙ্কের পরিবেশ বদলে গিয়েছে সন্দেশখালিতে। শনিবার সন্ধেবেলাই সেখানে চা, মিষ্টি বিলি করা হচ্ছিল। আর রবিবার সন্দেশখালির খুলনা, শিতুলিয়া, পাত্রপাড়া ও জেলিয়াখালি-সহ একাধিক গ্রামের মহিলাদের একেবারে রাস্তায় বেরিয়ে আনন্দ করতে দেখা গেল। একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দিলেন তাঁরা। সকলেই বলছেন, দীর্ঘদিনের এই অত্যাচার বন্ধ হওয়ায় স্বভাবতই খুশি। আজকের দিনটা তারা একটু স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারছেন।
এদিকে, রবিবারই তৃণমূলের তিন নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু, বীরবাহা হাঁসদা গিয়েছেন সন্দেশখালি লাগোয়া ন্যাজাটে। নদী পেরিয়ে টোটোয় চড়ে তাঁরা সেখানে পৌঁছে যান। একটি সভা করে সন্দেশখালির যে বাসিন্দাদের টাকা শিবু হাজরা বা উত্তম সর্দাররা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের সেই টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেই লক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নথিবদ্ধকরণের কাজ চলছে।
অভিযোগ, সন্দেশখালির বেশ কয়েকটি গ্রামবাসীদের মাছের ভেড়ির লিজের টাকা বাকি। সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দাররা। বেশ কিছুদিন ধরেই সন্দেশখালি ২নং ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েতে অর্থাৎ জেলেখালি, মণিপুর, সন্দেশখালি ও খুলনা-সহ একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করছিলেন, ওই দুই তৃণমূল নেতাই এক টাকায় মাছের ভেড়ি দখল করে দিনের পর দিন মাছ চাষ করতেন। মূলত সন্দেশখালি এলাকা সুন্দরবন লাগোয়া। তাই সেখানে মৎস্য চাষ করেই দিনের পর দিন সংসার চালানো ও রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতেন এলাকার মানুষজন। সেই টাকায় নাকি জোর করে ভাগ বসাতেন ওই দুই তৃণমূল নেতা। বিক্ষোভের আগুন ছড়াতেই গ্রামের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে যান।
শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তারা লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমনকী টাকা চাইতে গেলে জুটেছে অভব্য আচরণ। তাই সেই সমস্যার সমাধানে এবার আসরে নামল শাসকদল তৃণমূল। গ্রামে গ্রামে গিয়ে তৃণমূল প্রতিনিধিরা একটি তালিকা তৈরি করছেন এবং যারা বঞ্চিত, তাঁদের প্রাপ্য টাকা ফেরতের সমস্ত রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। সন্দেশখালি দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মহেশ্বর সর্দারের নেতৃত্বে দলীয় নেতা ও কর্মীরা দোকানে দোকানে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উপযুক্ত নথি এবং খাতা দেখে কত টাকা বকেয়া রয়েছে, সমস্ত নথিবদ্ধ করছেন। এদিকে, শিবপ্রসাদ হাজরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সন্দেশখালি-২ ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.