অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: এক সদ্যোজাত শিশু অশ্বত্থ গাছে পরিণত হয়েছে৷ কোনও এক ভক্তের কাছে এই স্বপ্নাদেশ আসে। অশ্বত্থ গাছের নিচে সন্তানের মঙ্গল কামনায় মায়েদের জল ঢালতে হবে৷ ব্যাস, তার পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে শোরগোল। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার৷
এই গুজবে বিশ্বাস করে বৃহস্পতিবার দলে দলে মহিলা সকাল থেকেই গাছে জল ঢালতে শুরু করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলদার বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামের মানুষ যেখানে অশ্বত্থ গাছ পেয়েছেন, সেখানেই জল ঢালতে শুরু করেন। অশ্বত্থ না পেলে, বট গাছের গোড়াতেও বহু মহিলা জল ঢেলেছেন। সকালে স্নান করে, ধূপ-ধুনো জেলে তাঁরা জল ঢেলেছেন। কেবল বেলদাই নয়, পাশের ও দাঁতন থানার বিভিন্ন গ্রামেও মহিলারা গুজবে বিশ্বাস করে ভিড় করেন বিভিন্ন অশ্বত্থ গাছের তলায়। জানা গিয়েছে, ওড়িশার চন্দনেশ্বর এলাকা থেকে এই গুজব ছড়িয়েছে। যদিও পুলিশ এই বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্যরা।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের জেলা সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী বলেছেন, “এই ধরনের অবাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে কিছু অসাধু ব্যক্তি৷ এইটা সেরকম কিনা, বলা যাচ্ছে না৷ কারণ ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছে, সেই সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য এখনও আমাদের কাছে নেই। আমরা খোঁজখবর করছি।” বেলদা থানার ওসি অমিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “এই ধরনের কোনও গুজব কিংবা ঘটনার বিষয় জানা নেই৷”
এদিন অভূতপূর্ব দৃশ্য৷ মন্দির থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে কিংবা কোনও পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনে যেখানে বট কিংবা অশ্বত্থ গাছ রয়েছ, সেখানেই মহিলাদের ঢল নেমেছে৷ এই দৃশ্য নজরে পড়েছে বেলদা থানার দেউলি, সুজানগর, বারবেলিয়া, রানিপুর, বালিসূচ, খাকুরদা, ঠাকুরচক, গুড়তলা, শ্যামসুন্দরপুর, বড়মোহনপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। তার সঙ্গে দাঁতন থানার বড়া, কাঁটাপুর সহ বেশ কিছু এলাকাতেও এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে৷
সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে এই গুজব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে৷ গৃহবধূ অমৃতা মাইতি বলেছেন, “সন্তানের জন্য সব কিছু করা যায়৷ সে যদি গুজব হয় তাও৷ তাই আমরা মা-কাকিমাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে স্নান করে ভেজা কাপড়ে জল ঢেলেছি অশ্বত্থ গাছের গোড়ায়৷” লাগাতর এসব ঘটনা সত্ত্বেও এলাকার আশেপাশে পুলিশকে দেখা যায়নি। বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের অনুপস্থিতিও চোখে পড়েনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.