সুমিত বিশ্বাস, মানবাজার (পুরুলিয়া): সাবেক মানভূমে নারী স্বাধীনতার অন্যতম মুখ। সামাজিক আন্দোলনের (Social Movement) নেত্রী। মহাত্মা গান্ধীর ডাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার। ভাষা আন্দোলনের সেনানী। তবু আজ তিনি বিস্মৃতপ্রায়। মানভূমের ইতিহাসের পাতায় থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁর আন্দোলন, অতীত একেবারেই অজানা। আবছা হয়ে গিয়েছেন। ভাবিনি মাহাতো। আপনজনদের কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন ‘ভাবি পিসি’ নামে। ছোট থেকে বড় সবাই তাঁকে এই নামেই ডাকতেন। পুরুলিয়ার (Purulia) মানবাজার ১ নম্বর ব্লকের মাঝিহিড়ার বাসিন্দা। গ্রামে তাঁর মূর্তি আছে বটে। কিন্তু তা অবহেলাতেই পড়ে। এই গ্রামেই রয়েছে মাঝিহিড়া আশ্রম। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলনে সাবেক মানভূমের আরেক ক্ষেত্র।
কিন্তু গ্রামের মানুষ এই সংগ্রামী মহিলার ইতিহাস সেভাবে জানেন না। মাঝিহিড়া গ্রামে গিয়ে সেখানে পথচলতি গ্রামের বাসিন্দাদের ভাবিনি মাহাতোর কথা বললে হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন। তবে বয়স্করা কিছু কিছু তথ্য জানেন ওই সংগ্রামী (Freedomn Fighter) সম্পর্কে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে সাবেক মানভূমের এই অঞ্চলে সেভাবে মহিলাদের ব্লাউজ (Blouse) গায়ে দেওয়ার চল ছিল না। এই ভাবিনি মাহাতোই তা চালু করেছিলেন। ব্লাউজ পরার অভ্যেস তৈরি করেছিলেন মহিলাদের মধ্যে।
এর জন্য কম কটাক্ষের শিকার হতে হয়নি তাঁকে। অনেক কটাক্ষ করেছিলেন সমাজের মোড়লরা। কিন্তু তিনি দমেননি। নারী স্বাধীনতার (Women freedom movement) জন্য আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন। তাঁর দেখানো পথেই কুড়মি জনজাতির মহিলাদের অনেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তার ভাইপো জগৎপতি মাহাতো বলেন, “পিসিমার জন্য গর্ব হয়। নারী স্বাধীনতার অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন, আরেকদিকে সামাজিক আন্দোলন। এই সময় মহিলাদের গায়ে ব্লাউজ দেওয়ার চল ছিল না। পিসিমার সামাজিক আন্দোলনের কারণেই তা সম্ভব হয়েছিল। তবে এজন্য অনেকেই কটাক্ষ করেছিলেন তাঁকে।” লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, “আমরা তাঁকে ‘ভাবি পিসি’ নামে জানতাম। মানভূম জননী লাবণ্যপ্রভা ঘোষের সান্নিধ্যে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে গ্রেপ্তার হন। শিল্পাশ্রমে থাকতেন। চরকা কাটতেন। সেই সুতোর কাপড়ই পরতেন।”
সাবেক মানভূমের যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন সেই ভাষার লড়াইয়ে কলকাতায় (Kolkata) পদযাত্রা করেছিলেন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বেঁচে থাকা ভাবিনি মাহাতোর কথা জানেই না বর্তমান প্রজন্ম। আড়ালে থেকে অবহেলাতেই প্রাণ যায় তাঁর। ২০১৪ সালের ২৪ জুন মানবাজারে (Manbazar) ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু মানভূমের ইতিহাসে তিনি আজও জ্বলজ্বল করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.