অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: বাড়িতে শৌচাগার নেই। তাই জামাইরা আর শ্বশুরবাড়িমুখো হন না। মেয়ে-জামাইকে শ্বশুরবাড়িতে আসতেও বলতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে লজ্জা কুড়ে কুড়ে খেত নাদের আলি আর ফিরদৌসি বিবিকে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা ঠিক করলেন, আর নয়। জমি বিক্রি করেই তৈরি করতে হবে শৌচাগার। করলেনও। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভগীরথপুরে।
[ দুর্গাপুরে বাড়িতে ঢুকে প্রাক্তন শিক্ষককে কুপিয়ে খুন, গ্রেপ্তার ১ দুষ্কৃতী]
রাখিবন্ধন উৎসবের অনুষ্ঠানে ফিরদৌসি বিবিকে সংবর্ধনা দিলেন ডোমকলের এসডিও দিব্যা লোকনাথন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন মহিলাকে। সে সব শুনে প্রৌঢ়া ফিরদৌসি বিবির লাজুক জবাব, ‘পঞ্চায়েতের কাছ থেকে শৌচাগার না পেয়ে খুবই রাগ হয়েছিল। মনে হয়েছিল আমার মতো গরিব মানুষ যদি না পায়, তো কারা পাবে? অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিলাম। তবু পাইনি। বাধ্য হয়ে পরিবার আর জামাইদের মন রাখতে ব্যাংকে রাখা জমি বিক্রির টাকা তুলেই ওই শৌচাগার তৈরি করেছি।”
লেখাপড়া করা হয়নি। অল্প বয়েসেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ফিরদৌসি বিবির পাঁচ মেয়ে। দুই মেয়ে আবার মূক ও বধির। তাই তাঁদের এখনও পাত্রস্থ করতে পারেননি ওই বৃদ্ধা। অন্য মেয়েরা অবশ্য বিবাহিত। কিন্তু বাড়িতে যে শৌচাগার নেই! তাই জামাইরা শ্বশুরবাড়ি আসতে চান না। জামাইদের বক্তব্য, “চারিদিকে নির্মল বাংলা নিয়ে এত প্রচার। অথচ শ্বশুরবাড়িতে গেলে কি না সেই মাঠেঘাটে শৌচকর্ম করতে হয়। আর তা করতে গিয়ে হামেশাই অপমানিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই শাশুড়িকে বলেছিলাম ছোট হলেও শৌচাগার বানান। তখন আপনার বাড়িতে যাব। তার আগে নয়।” শ্বশুর নাদের আলি জানান, “আমার সামান্য সবজির ব্যবসা। তার থেকে সংসারের চাল-ডালের জোগান দেওয়াই মুশকিল। শৌচাগার করব কী করে! তখনই মেয়েদের মা প্রস্তাব দেয়, শৌচাগার না থাকায় জামাইরা আসছে না। এটা কি ভাল হচ্ছে? তখনই মেয়ের মা জানায়, ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য পাঁচ কাঠা জমি বিক্রি করে যে টাকা ব্যাংকে রাখা আছে তা তুলেই বানাতে হব। যেমন বলা তেমন কাজ।” সব শুনে ডোমকলের বিডিও টি জি ভুটিয়া বেজায় খুশি। তিনি জানান, “খবরটি শোনামাত্র আমি শনিবার সেখানে গিয়ে সব দেখেছি। ওই মহিলার উদ্যোগ আমার খুব ভাল লেগেছে। সংবর্ধনার সঙ্গে তাঁর হাতে শংসাপত্রও তুলে দেওয়া হয়েছে।”
[ মোমো আতঙ্কের গ্রাসে উত্তরবঙ্গ, মারণগেমের লিংক পৌঁছল আরও তিনজনের কাছে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.