শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় লজ্জা ও ক্ষোভে স্কুল যাওয়া বন্ধ করেছিল মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ব্লকের শেরপুর গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুষমা খাতুন। মেয়ের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত বাড়ির সোনার গয়না এবং ছাগল বিক্রি করে শৌচালয়ও করেছিলেন সুষমা খাতুনের মা সায়েমা বিবি। শৌচালয় হওয়ায় আনন্দে ফের স্কুলে যাওয়া শুরু করে সুষমা। এবার সেই ছাত্রীকে ব্লকের রোল মডেল করে শৌচালয়হীন পরিবারগুলোকে সচেতন করল সামশেরগঞ্জ ব্লক প্রশাসন। সুষমার মতো ছোট্ট শিশুটিও তাদের শৌচালয় গড়তে বলায় লজ্জায় শৌচালয় গড়তে উদ্যোগী হচ্ছে অনেক পরিবার।
[স্ত্রীকে কটূক্তি, থানায় ঢুকে অভিযুক্তকে বেদম মার জেলাশাসকের]
সামশেরগঞ্জ ব্লকের শেরপুর গ্রামের পেশায় রাজমিস্ত্রি আইনুল হক দু’বছর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান । সেই সময় দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তাঁর স্ত্রী সায়েমা বিবি। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থায় কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। গ্রামের লোকেদের মতো তাঁরা বাড়ির পাশের মাঠেই শৌচকর্ম করতে অভ্যস্ত ছিলেন। দু’বছর আগে নির্মল বাংলা কর্মসূচি সফল করতে যখন মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে প্রচার অভিযান শুরু হয়, তখন গ্রামের অনেকের বাড়িতেই শৌচাগার তৈরি করে দেয় প্রশাসন। কিন্তু বাদ পড়ে যান সায়েমা বিবি। উপভোক্তাদের তালিকা তাঁর নাম ছিল না বলে অভিযোগ। কিন্তু, তাতেও অবশ্য কোনও অসুবিধা হচ্ছিল না।
এদিকে প্রচারাভিযান শেষে গ্রামের বাসিন্দা থেকে শুরু করে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ব্যপক সচেতনতা অভিযান গড়ে তোলা হয়। নিত্যদিন প্রেয়ার লাইনে দাড়িয়ে বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে কি না তা জিগ্যেস করতেন প্রধান শিক্ষক। সকলের সামনে লজ্জায় পড়তে হত সুষমাকে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে আচমকাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় সুষমা। বাড়িতে সুষমা সাফ জানিয়ে দেয়, শৌচালয় না হলে স্কুল যাবে না সে। মেয়েকে স্কুল পাঠানোর তাগিদে তিন হাজার টাকা দিয়ে ছাগল ও আট হাজার টাকা দিয়ে কানের দুল বিক্রি করে এবং বাড়ির কিছু টাকা দিয়ে মোট ১৪ হাজার ৫০০ টাকায় শৌচালয় গড়ে তোলেন সায়েমা বিবি। বাড়িতে শৌচালয় হওয়ার পরেই মাথা উঁচু করে স্কুলে যেতে শুরু করে সুষমা।
[ আইনি জটিলতায় দেড় বছর ধরে হাসপাতালেই বড় হচ্ছে ছয় শিশু]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.